মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার ঘটা করে সামরিক অভিযানে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস প্রধান নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির মৃতু্যর খবর দিয়েছেন। কিন্তু দলনেতার মৃতু্যর পর এখন আইএসের ভবিষ্যৎ কী?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'চাথাম হাউস'র মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক লীনা খাতিব বলেন, 'বাগদাদির মৃতু্যতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইএসের অস্তিত্ব ধ্বংস বা সম্পূর্ণ পতন নিশ্চিত হবে না। বরং কাছাকাছি সময়ে সিরিয়ার স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে আইএসের এখনকার ভবিষ্যৎ, তাতে দলটির নেতা থাকুক আর না থাকুক।'
আইএসের জন্য বাগদাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা ছিলেন, বিশেষ করে দলটি যখন একটি তথাকথিত রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছিল। যেহেতু খলিফা ছাড়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা যায় না, সে কারণে আইএস বাগদাদিকে জনসম্মুখে একজন শক্তিমান নেতা হিসেবে হাজির করেছিল।
সিরিয়া এবং ইরাকে আইএসের পতনের পরেও এই গ্রম্নপের সমর্থকদের বিশ্বাস ছিল, একদিন বাগদাদি আবার খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। সাংবাদিক এবং দাতা সংস্থার কর্মী, যারা সিরিয়ার ভেতরে 'আল-হোল ক্যাম্পে' আইএস যোদ্ধাদের স্ত্রী ও বিধবাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে তারা জানিয়েছেন, বাগদাদির যে কোনো বক্তৃতা তার সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করত।
আইএসের মূল কর্মকান্ড সিরিয়ায় উত্তর-পূর্বে দেইর আজ-জৌর এলাকায়, বিশেষ করে বসাইরার দক্ষিণে দিবানের দিকে। এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করে সিরীয় ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)। কিন্তু এলাকাটি কুর্দি অধু্যষিত হওয়ায় সেখানে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই সংকটে রয়েছে এসডিএফ।
সেখানকার বাসিন্দাদের বড় অংশটি বিভিন্ন আরব গোত্রের, যারা কেবল এসডিএফকেই নয়, বরং ওই এলাকায় সক্রিয় সিরীয় সামরিক বাহিনী এবং ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীকেও প্রত্যাখ্যান করে আসছে। সিরিয়ার সরকার এবং ইরানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এই গোত্রগুলো বিক্ষোভ করেছে।
উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযানের আগে, দেইর আজ-জৌরে সেখানকার আরব গোত্রসমূহ এবং এসডিএফের মধ্যে নিয়মিত বিবাদ সংঘর্ষ হতো। পরে সেখানে আইএসের তৎপরতা ক্রমে বাড়ে। কয়েক মাস আগে এসডিএফের এক চেকপয়েন্ট থেকে একজন আরব পথচারীকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপরের দুই সপ্তাহে সেখানে 'স্স্নিপার সেলের' হামলার সংখ্যা বেড়ে যায়।
তুরস্ক অভিযান চালানোর পর, ওই এলাকায় এসডিএফ যেহেতু সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়, তাদের অনুপস্থিতির এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে আইএস। সেখানে নিজেদের কর্মকান্ড বাড়িয়ে দেয় তারা, যদিও নতুন করে ভূমি দখলের চেষ্টা এবার তারা করেনি। এ সময় দলটি আইইডিএসের ব্যবহার করে, যা থেকে বোঝা যায়, তাদের সামরিক সক্ষমতা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে।
একই সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন জানায়, দেইর আজ-জৌরে আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক জোট সেখানকার তেলক্ষেত্রগুলো রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটাও আইএসের কলেবর না বাড়াতে পারার আরেকটি বড় কারণ।
এখন যা করতে পারে দলটি
এখন বাগদাদির মৃতু্যকে কাজে লাগিয়ে আইএস তার সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনার প্রতিশোধের বার্তা দেবে। কিন্তু শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দলটির যোদ্ধারা যুদ্ধ করে যাবে, এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর তাদের মধ্যে নাও দেখা যেতে পারে।
মৃতু্যর আগে সিরিয়ায় দলটির নেতা আবু আয়মান আল-ইরাকি মাত্র ছয়জন যোদ্ধাকে নিয়ে এসডিএফের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু মাঝপথে সব যোদ্ধা তাকে রেখে পালিয়ে যায়। আইএসের স্বর্ণযুগে এমন পরিস্থিতির কথা কেউ কল্পনাও করতে পারত না।
নতুন নেতা আসবে আইএসে?
আইএস হয়তো শিগগিরই বাগদাদির একজন উত্তরসূরি এবং একজন শীর্ষ নেতা চূড়ান্ত করবে। তবে দলটির কার্যক্রমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের পরিস্থিতি কেমন থাকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, বাগদাদি ইদলিবে আছেন, সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি সেখানে আইএসকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। এদিকে, ইদলিবের জিহাদি দল হুরাস আল-দ্বীন আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্যের কারণে হায়াত তাহ্রির আল-শাম নামে আরেকটি ইসলামি দল থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই দলটি কিংবা আইএস কেউই সেখানে ততটা জনপ্রিয় না হওয়ায় এই প্রদেশে আইএস তাদের ঘাঁটি গড়ে তুলবে এমন সম্ভাবনা কম।
এ ছাড়া উত্তর-পূর্বে সিরিয়ার সেনাবাহিনী নিজেদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে, যদিও তাদের ক্ষমতা খুবই সীমিত। তাদের সেনা সংখ্যা আর সামরিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি যেমন আছে, তেমনি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ছোট কয়েকটি দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে তারা। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ