শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অযোধ্যা বিতর্ক :এরপর কি তালিকায় কাশী-মথুরা?

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
বিশ্বনাথ মন্দিরের পাশেই জ্ঞানবাপী মসজিদ

'বাবরি তো ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা-কাশী বাকি হ্যায়।' নব্বইয়ের দশকে ভারতের করসেবকদের এই হুঙ্কার ছিল এমনই। তারপর কেটে গেছে আড়াই দশকের বেশি সময়। যথারীতি 'করেঙ্গে-মরেঙ্গে' গর্জনের পর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিল হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের 'অতি আগ্রাসী' গোষ্ঠী। ধর্মীয় উন্মাদনার আগুন ধিকিধিকি জ্বললেও, তা লেলিহান শিখায় পরিণত হয়নি। কিন্তু শনিবার বাবরি মসজিদ মামলার রায় বের হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ফের বাড়ছে উত্তেজনা। এবার প্রশ্নের মুখে ভারতের অন্য বিখ্যাত মসজিদগুলোর ভবিষ্যৎও।

গত মাসে 'অল ইন্ডিয়া আখড়া পরিষদ' সাফ জানিয়েছে, রাম মন্দিরের নির্মাণ শেষ হলে মথুরা ও কাশীর মন্দিরগুলোকে 'মুক্ত' করা হবে। সংগঠনটির সভাপতি মহন্তনরেন্দ্র গিরির কথায়, 'অযোধ্যার মতো কাশী ও মথুরাতেও হিন্দুদের পবিত্র মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানো হয়। হারানো সেই জায়গা ফিরে পেতে হবে। রাম জন্মভূমির মতোই এই দুই জায়গাও হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আমরা এর দখল নেবই।' উলেস্নখ্য, মধ্যস্থতা চলাকালীন অযোধ্যার বদলে কাশী ও মথুরা থেকে হিন্দুদের দাবি তুলে নেওয়ার কথা বলেছিল ভারতের 'সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড'।

উত্তরপ্রদেশের কাশী বা বারানসির বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দিরের পাশেই রয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ। ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, একাধিকবার বিদেশি হানাদারদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দিরটি। ১৬৬৯ সালে মূল মন্দিরটি দখল করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেন মুঘল বাদশাহ আওরঙ্গজেব। এখনো মসজিদের দেয়ালে হিন্দু দেবদেবীর ছবি দেখা যায়। অষ্টাদশ শতকে হিন্দুদের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে মসজিদের কাছেই বর্তমান বিশ্বনাথ মন্দিরটি তৈরি করেন মারাঠা রাজ্য মালওয়ার রানি অহল্যাবাই হোলকর।

২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশী বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। প্রায় ৬০০ কোটি রুপির ওই প্রকল্পে বিশ্বনাথ মন্দির থেকে গঙ্গার ঘাট পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। ফলে জ্ঞানবাপী মসজিদের আশপাশের বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) সাইদ ইয়াসিন এক সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলন, চারপাশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় জমায়েতের আশঙ্কা বেড়েছে। বাবরি মসজিদ ধংসের আগেও এভাবেই বিতর্কিত কাঠামোটির চারপাশ খালি করা হয়েছিল।

উত্তরপ্রদেশের মথুরা- 'আধ্যাত্মিক' শহরটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির। হিন্দুদের বিশ্বাস, ওই জায়গাটি শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান। সেই মন্দির চত্বরেই রয়েছে শাহি ঈদগাহ মসজিদ। ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, প্রাচীন কেশবনাথ মন্দির ভেঙেই মসজিদটি তৈরি করেন আওরঙ্গজেব। ১৯৩৫ সালে ওই মন্দির চত্বরের মালিকানা মথুরার রাজার হাতে সঁপে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। পর্যায়ক্রমে সেই স্বত্ব বর্তায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘনিষ্ঠ 'শ্রী কৃষ্ণভূমি ট্রাস্ট'র হাতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় সংঘাত। অবশেষে ১৯৬৮ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে জমির মালিকানা হিন্দুদের হাতে থাকলেও মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকার পায় মুসলমান পক্ষ।

সব মিলিয়ে মথুরা ও কাশী নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর আস্ফালন বরাবরই রয়েছে। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্মাদনার আগুন কিছুটা ছাইচাপা পড়েছিল। তবে অযোধ্যা মামলায় শীর্ষ আদালতের রায় দান সেই আগুন উসকে দেবে কি-না, তা সময়ই বলবে। সংবাদসূত্র : সংবাদ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74988 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1