শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ফিরছে রাজাপাকসের পরিবার!

নতুনধারা
  ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর দু'দিন বাকি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ১৭ নভেম্বর থেকে তৃতীয়বারের মতো রাজাপাকসে পরিবারের শাসন শুরু হবে কিনা তা নির্ধারিত হবে। ১৬ নভেম্বরের নির্বাচনে মুখোমুখি হচ্ছেন প্রভাবশালী সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে ও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)'র উপনেতা সাজিথ প্রেমাদাসা।

স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে সাজিথের অবস্থা ভালো। কারণ দেশটির সংখ্যালঘুরা বরাবরাই ইউএনপির সমর্থক। তামিল, মুসলমান ও খ্রিস্টানরা মিলে জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু 'ইস্টার সানডে' হামলার পর এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ইউএনপি এতদিন যে ভোটব্যাংক উপভোগ করে আসছিল, তাতে ফাটল ধরেছে। পশ্চিমাপন্থী খ্রিস্টানরা এখন পশ্চিমাপন্থী ইউএনপির চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। তারা গোতাবায়াকে সমর্থন দিতে পারে, যিনি প্রচারণা শুরুই করেছেন ক্যাথলিক ও খ্রিস্টানদের দুর্দশা মোচনের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে। এরা জনসংখ্যার আট শতাংশ। গোতাবায়া নিরাপত্তার প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছেন, যা ইউএনপি দিতে পারেনি।

কিন্তু রাজাপাকসে পরিবারের শাসন ফিরে আসা নিয়েও অনেকের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। কারণ গোতাবায়া জয়ী হলে তার ভাই, ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত মাহিন্দা রাজাপাকসে হবেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের আরেক ভাই চমল রাজাপাকসে হবেন স্পিকার। অন্যদিকে, পর্দার আড়াল থেকে রাজাপাকসে রেজিমকে সামাল দেয়া বাসিল রাজাপাকসেও একই ধরনের কোনো দায়িত্বে যে থাকবেন এটা পরিষ্কার। এছাড়া, মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নমল রাজাপাকসে অপেক্ষায় রয়েছেন উত্তরাধিকার লাভের। গত বছর ভারত সফরকালে মাহিন্দা রাজাপাকসে তাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে উলেস্নখ করেছেন।

নিশ্চিত নয়, এমন কিছু প্রতিবেদনে দেখা যায়, শ্রীলংকার কিছু মুসলমান গোতাবায়ার পেছনে সমবেত হচ্ছেন। এ অবস্থায় গোতাবায়া জয়ী হলে মুসলমানরাও আর ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না। গোতাবায়া জয়ী হলে তার পক্ষে সংখ্যাগুরু সিংহলিদের সমর্থন হবে একচেটিয়া। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, তখন রাজাপাকসে পরিবারের শাসন এতটাই প্রবল হবে, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে এই আশঙ্কা প্রবল।

সিংহলি খ্রিস্টান শিক্ষাবিদ এস জয়াতিলেকে বলেন, অনেকের জন্যই এটা একটি ডিলেমা বা উভয় সংকট। তার মতে, 'একদিকে, পাঁচ বছর আগে অনেক আশা নিয়ে তামিল ও মুসলমান; যারা ইউএনপি সরকারকে ভোট দিয়েছিল, তারা এবার একই দলকে ভোট দেবে কিনা তা নিয়ে দোটানায় আছে। সাজিথ জনগণের প্রত্যাশা মতো পরিবর্তন আনতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও তারা সন্দিহান। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সরকারি বিনিয়োগ ও চাকরি সৃষ্টি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে, ২১ এপ্রিলের পর সন্ত্রাসের নতুন যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা আমার মতো লোকের পরিবারকে গোতাবায়ার সমর্থক করে তুলেছে।'

আবার এমনও জানা গেছে, সাধারণত গোতাবায়ার সমর্থক শহুরে সিংহলি সম্প্রদায়ের শিক্ষিত ও উদারমনষ্ক অনেকে দ্বিতীয়বারের মতো চিন্তা করছে। রাজাপাকসে পরিবারের প্রতিষ্ঠিত দল শ্রীলংকা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) যদি দেশের একচেটিয়া শাসন লাভ করে, তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেই আতঙ্কে রয়েছে তারা।

জীবনের বেশিরভাগ সময় পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে ক্যাব ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ষাটোর্ধ ফাজিল মোহাম্মদ বলেন, 'আমরা ঐতিহ্যগতভাবে এসএলএফপির সমর্থক।' তিনি সেই সব মুসলমানের একজন, যারা ধীরে ধীরে গোতাবায়া শিবিরের দিকে সরে যাচ্ছেন। ফাজিল বলেন, 'আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন বন্দরনায়েক বংশের অনুগত। এই পরিবারের শেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। ২০০৫ সালে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে ভোট দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু মুসলমানবিরোধী দাঙ্গার কারণে ২০১৫ সালে আমরা তাকে পরিত্যাগ করি। আমরা ইউএনপি প্রার্থী মাইথ্রিপালা সিরিসেনাকে ভোট দেই। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কোনো উন্নতি হয়নি। আমরাও আগের জায়গায় ফিরে গেছি।' তার মতে, গোতাবায়ার পেছনে কিছু মুসলমানের সমবেত হওয়ার কারণ ভয়। ইউএনপিকে ভোট দিলে আরও মুসলমানবিরোধী দাঙ্গার আশঙ্কা করছেন তারা। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75293 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1