বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার

সৌদিকে টপকে যাচ্ছে ইরান

নতুনধারা
  ২৫ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবকে হারিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের কৌশলগত লড়াইয়ে জিততে যাচ্ছে বলে লন্ডনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। 'ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ'র (আইআইএসএস) এ গবেষণায় বলা হয়েছে, রিয়াদের শতকোটি ডলার বিনিয়োগের পাল্টায় এর ভগ্নাংশ পরিমাণ খরচ করেও তেহরান এখন সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সৌদি আরব দশকের পর দশক ধরে শত শত কোটি ডলারের পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র কিনেছে, যার বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য থেকে গেছে। অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত ইরান প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রে পিছিয়ে থেকেও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়ে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছেছে।

'মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের নেটওয়ার্কের প্রভাব' শীর্ষক ২১৭ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে ইসলামী বিপস্নবের পর ১৯৭৯ সালে দেশটির নেতা আয়াতুলস্নাহ রুহুলস্নাহ খোমেনির দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই তারা তাদের প্রভাব সীমানার বাইরেও বিস্তৃত করার কাজ শুরু করে। এ কাজে তারা প্রথম যুক্ত করে লেবাননের হিজবুলস্নাহকে। সাদ্দাম হোসাইনকে উৎখাতের পর শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকে তারা গড়ে তোলে আধাসামরিক 'পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট' (পিএমইউ)।

সিরিয়া যুদ্ধে বাশারের পাশে দাঁড়িয়ে তেহরান তাদের প্রভাব ইসরাইলের সীমানায় নিয়ে যায়, ইয়েমেনের যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হস্তক্ষেপ করলে ইরান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় হুতিদের দিকে।

আইআইএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যকে নিজের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে। পুরোনো ঘরানার শক্তিশালী বাহিনীগুলোকে প্রতিহত এবং তৃতীয় পক্ষের শক্তিগুলোকে ব্যবহার করে তারা এটা অর্জন করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের এই পাল্টে যাওয়া চিত্রের মূল অনুঘটক বলা হচ্ছে ইরানের বিপস্নবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) বৈদেশিক বিভাগ 'কুদস ফোর্স'কে, যারা পুরো অঞ্চলে তেহরানের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর। এই কুদস ফোর্স ও তাদের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সুলাইমানির সরাসরি যোগাযোগ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনির সঙ্গে।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী সাদ্দামকে উৎখাত করার পর থেকে ইরাক ও অন্যান্য অঞ্চলে; বিশেষ করে শিয়া অধু্যষিত অঞ্চলগুলোতে কুদস ফোর্স পেখম মেলতে শুরু করে। সাদ্দামকে বলা হতো, মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রাচীর। ওই প্রাচীর সরে যাওয়ার পর কুদস ফোর্স তড়িৎগতিতে শক্তিবৃদ্ধির কাজ শুরু করে; বিভিন্ন গোষ্ঠীর মেলবন্ধনে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজে সচেষ্ট হয়। কেবল তাই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচলিত ঘরানার সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় তারা ড্রোন ও সাইবার হামলার মতো অপ্রচলিত কিন্তু শত্রম্নকে ব্যতিব্যস্ত রাখার কার্যকর পথে হাঁটা শুরু করে।

কুদস ফোর্সের এসব কাজের আনুষ্ঠানিক 'স্বীকৃতি মেলে' চলতি বছরের এপ্রিলে। এ বছরই যুক্তরাষ্ট্র আইআরজিসিকে 'বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের' তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর অন্তর্ভুক্তির ঘটনা এটাই প্রথম। ওয়াশিংটনের ওই ঘোষণার পাল্টায় তেহরানও পরে উপসাগরের মার্কিন বাহিনীকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' ঘোষণা করে।

আইআইএসএস বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ধারাবাহিক প্রভাববৃদ্ধির সবচেয়ে বড় উদাহরণ লেবাননে হিজবুলস্নাহর প্রাধান্য। ইরান সমর্থিত এ গোষ্ঠীটির সশস্ত্র অংশের পাশাপাশি রাজনৈতিক অংশও বেশ তৎপর। লেবাননের ক্ষমতা কাঠামোতেও তাদের প্রভাব অপরিসীম।

সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস এবং বাশারবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও হিজবুলস্নাহর যোদ্ধারা ইরান ও রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে। হাসান নাসরালস্নাহর এই বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের 'জুনিয়র পার্টনার' হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে বলেও ধারণা পশ্চিমা বিশ্লেষকদের।

'আরব বসন্তের' সময় ইরান তার প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব এবং এর মিত্র বাহরাইন ও কুয়েতে শিয়া বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে সুন্নি শাসকগোষ্ঠীকে তটস্থ রাখতেও ভূমিকা রাখে। তেহরানের মদদে সৃষ্ট এসব রাজনৈতিক অস্থিরতাকে রিয়াদ দমন করতে পারলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা তাদের তেল শিল্পক্ষেত্রের দিকে ধেয়ে আসা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আইআইএসএস বলছে, গত ৪০ বছর ধরে ইরান খুব সতর্কতার সঙ্গে তার মিত্রদের বেছে নিয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়েছে, দিয়েছে কৌশলগত নানা সুবিধা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মেয়াদেও তারা ধারাবাহিকভাবেই এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে তৎপর। সংবাদসূত্র : বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76944 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1