মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্লেষণ

পায়ের তলার মাটি সরছে বিজেপির

কপালে ভাঁজ মোদি-শাহের
যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
বিজেপির সেদিন এদিন

ভারতের মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের মহা-নাটকে যে পরিণতি ঘটেছে, তাতে বিজেপি শিবির ভালোভাবেই ধাক্কা খেয়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রাতারাতি 'চাণক্য' হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াও। 'এলেন, দেখলেন জয় করলেন', গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থেকে সাত নম্বর লোক কল্যাণ মার্গের বাসিন্দা হয়ে ওঠা নরেন্দ্র মোদির যাত্রাকে অনেকেই এভাবে বর্ণনা করেছেন।

বিশেষ করে সব হিসাব পাল্টে দিয়ে এ বছর বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি এবং তার 'প্রধান সেনাপতি' অমিত শাহের রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দু'বার ভাবছিলেন অনেকেই।

কিন্তু একদিকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মোদি-শাহ জুটি যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন, ঠিক সেই সময় বিধানসভার নিরিখে গত দুই বছরে ক্রমশ পায়ের তলার জমি হারাতে শুরু করেছে বিজেপি। যাতে নতুন সংযোজন মহারাষ্ট্র। সেখানে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমে মাত্র ৮০ ঘণ্টায় রণেভঙ্গ দিতে হয়েছে তাদের। আর তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যাগারিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়ে বিজেপি। সেই সময় এককভাবে বা শরিক দলের সঙ্গে মিলে পাঞ্জাব, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, গোয়া এবং অরুণাচল প্রদেশ, এই সাতটি রাজ্য তাদের দখলে ছিল।

'মোদি ঝড়ে' ভর করে তার পরের বছর আরও ছয়টি রাজ্য গেরুয়া শিবিরের দখলে চলে যায়। ২০১৬ সালে তাদের দখলে থাকা মোট রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫। ২০১৭ সালে আরও চারটি রাজ্য যোগ হয় তাতে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ২১টি রাজ্যের দখল চলে যায় গেরুয়া শিবিরে। সেই সময় শুধু তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক, মিজোরাম, পাঞ্জাব, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং তেলাঙ্গানা তাদের হাতে ছিল না।

কিন্তু এরপরই একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হতে শুরু করে বিজেপির। ২০১৮ সালে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়; হিন্দি বলয়ের এই প্রধান তিন রাজ্যই হাতছাড়া হয় তাদের। এরপর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে অন্ধ্রপ্রদেশও বেরিয়ে যায় হাত থেকে। তার মধ্যে নভেম্বরে মিজোরামে জোট সরকার গড়তে সফল হলেও, গত বছরের ডিসেম্বরে কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতির পিডিপির সঙ্গে বিজেপির জোট সরকার ভেঙে গেলে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় সেখানে। তার জেরে উপত্যকাও হাতছাড়া হয় গেরুয়া শিবিরের।

চলতি বছরের গোড়ায় কর্ণাটকে এইচডি কুমারস্বামীর জনতা দল সেকু্যলার এবং কংগ্রেসের জোট সরকার ভেঙে বিএস ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বে সেখানে সরকার গঠন করে বিজেপি। এর পরই গত মঙ্গলবার সংঘের আঁতুরঘর মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হয় তাদের। শনিবার রাতারাতি রাষ্ট্রপতি শাসন উঠে যাওয়ার পরেই সেখানে সরকার গঠন করে বিজেপি। এনসিপির অজিত পাওয়ারকে ভাগিয়ে এনে দ্বিতীয়বারের জন্য দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসায় তারা। কিন্তু মঙ্গলবার অজিত পাওয়ার পদত্যাগ করার পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পদত্যাগ করেন ফড়নবিশ নিজেও।

মহারাষ্ট্র হাতছাড়া হওয়ার পর এই মুহূর্তে বিজেপির দখলে থাকা মোট রাজ্যের সংখ্যা ১৭টিতে এসে ঠেকেছে। তবে এর মধ্যে বড় রাজ্য বলতে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক এবং উত্তরাখন্ডই রয়েছে। আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে মোদি-অমিত শাহের। একই সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি সভাপতির সদ্য গড়ে ওঠা 'চাণক্য' ইমেজও। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ট্রল ও মিম চালাচালি। জার্সি বদলের রাজনীতিতে অমিত শাহ যে এখন ব্যাকফুটে, তা বেশ স্পষ্ট।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদি স্স্নোগান তুলতেন, 'কংগ্রেস-মুক্ত ভারত'। কিন্তু এখন যেভাবে একের পর এক রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছে, তাতে কংগ্রেস পাল্টা বলছে, ভারত তো 'বিজেপি-মুক্ত' হওয়ার দিকে এগোচ্ছে! পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশটির ৭১ শতাংশ জনসংখ্যার ওপরে বিজেপির 'নিয়ন্ত্রণ' ছিল। এখন তা ৪০ শতাংশের নিচে। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77756 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1