শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধুলায় উবে গেছে মঙ্গলের পানি!

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
মঙ্গল গ্রহে ভয়ঙ্কর সেই ধূলিঝড় -নাসা

ভয়ঙ্কর ঝড় উঠেছিল পৃথিবীর প্রতিবেশী লাল গ্রহ মঙ্গলে। ধুলার উদ্দাম ঝড়। সেই তুলকালাম ঝড়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল 'লাল গ্রহ'। উথালপাথাল করে দেওয়া ধুলার ঝড় গোটা মঙ্গল গ্রহটাকেই ঢেকে ফেলেছিল। 'প্রাণ' কেড়ে নিয়েছিল নাসার পাঠানো রোভার 'অপরচুনিটি'র। সবকটি যন্ত্রকে বিগড়ে দিয়ে চিরদিনের মতোই 'অপরচুনিটি'কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল গত বছর। বিজ্ঞানীদের ধারণা, কয়েকশ কোটি বছর আগে ধুলার এমন ভয়ঙ্কর ঝড়ের জন্যই লাল গ্রহের সবটুককু পানি উবে গিয়েছিল মহাকাশে।

গত এক দশক বা তারও কিছু বেশি সময়ে ধুলার এতটা উদ্দাম ঝড়ে আর তোলপাড় হয়নি লাল গ্রহ। এমন ভয়ঙ্কর ধুলার ঝড় মঙ্গলে হয়েছিল ১১ বছর আগে, ২০০৭ সালে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই কথা জানিয়েছে।

তবে কেন এক দশকে একবার করে এই ভয়ঙ্কর ধুলার ঝড় ওঠে লাল গ্রহে, তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনো ধোঁয়াশায়। কারণ ভয়ঙ্কর ধুলার ঝড়ের হদিস মঙ্গলে বিশেষ মেলেনি বলে তাদের নিয়ে তেমনভাবে গবেষণার সুযোগই পাননি বিজ্ঞানীরা।

সেই সময় মঙ্গলের পিঠ থেকে উঠে আসা ধুলা তৈরি করেছিল ঘন জমাট বাঁধা বিশাল বিশাল মেঘ। মেঘগুলো মঙ্গলের পিঠের ধুলা নিয়ে উঠে গিয়েছিল, এমনকি ৮০ কিলোমিটারেরও বেশি। অত্যন্ত উঁচু স্তম্ভের মতো। মেঘগুলোর মধ্যে ছিল প্রচুর জলীয় বাস্পের কণা। মেঘগুলো যত ওপরে উঠেছে, সূর্যের আলো আর মহাজাগতিক রশ্মিসহ নানা ধরনের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মেঘের ভেতরে থাকা জলীয় বাষ্পের কণাগুলোকে তত বেশি করে ভেঙে দিয়েছে। উবে গেছে পানির বিন্দুগুলো।

নাসার গবেষকদের দাবি, কয়েকশ কোটি বছর আগে হয়তো এভাবেই মঙ্গলের বুক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল তার পানির ভান্ডার। মঙ্গলে ধুলার ঝড় হয় নিয়মিতই। তবে অত বড় ধরনের ধুলার ঝড় হয় কালেভদ্রে। এক দশক বা তার কিছু বেশি সময়ে বড়জোর একবার। সেই ভয়ঙ্কর ঝড়টাই হয়েছিল গত বছর। ওই সময় নাসার বেশ কয়েকটি মহাকাশযান ছিল মঙ্গলের আশপাশে। তারা সেই ঝড়ের ছবি পাঠিয়েছিল। সেগুলোর ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়েছে হালের দুটি গবেষণাপত্র।

গবেষণা জানিয়েছে, সেই ঘন জমাট বাঁধা ধুলার মেঘের উঁচু উঁচু স্তম্ভগুলো তৈরি হয়েছিল মঙ্গলের পিঠের সেই জায়গায়, যেখানে খুব ধুলা উড়ছে। আমাদের রোড আইল্যান্ড যতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, লাল গ্রহের পিঠে সেইটুকু জায়গা থেকেই উঠে আসা ধুলায় তৈরি হয়েছিল মেঘের সেই উঁচু উঁচু স্তম্ভগুলো। গত বছর গোটা মঙ্গল জুড়ে যখন চলছিল ভয়ঙ্কর ধুলার ঝড়, তখন সেই মেঘের স্তম্ভগুলোর লাল গ্রহের পিঠ থেকে উঠে গিয়েছিল কম করে ৫০ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা রয়েছে যতটা জায়গা জুড়ে, সেই সময় মঙ্গলের ধুলার মেঘগুলোও ছিল ঠিক ততটা জায়গায়। পরে যখন সেই ধুলার মেঘের স্তম্ভগুলো ভাঙতে শুরু করে, তখন তা মঙ্গলের পিঠ থেকে কিছুটা ওপরে (৩৫ মাইল বা ৫৬ কিলোমিটার) ধুলার একটা পুরু স্তর তৈরি করেছিল।

গোটা যুক্তরাষ্ট্র যতটা জায়গা জুড়ে- মঙ্গলের ওপর ধুলার পুরু স্তর ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই ততটা এলাকা জুড়েই।

মূল গবেষক ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস হিভেন্স বলেন, 'মঙ্গলে প্রতি বছরই ধুলার মেঘের স্তম্ভ তৈরি হয়। লাল গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে তা তৈরি হয়। কিন্তু এক থেকে দেড় দিনের মধ্যেই সেই স্তম্ভগুলো ভেঙে পড়ে। কিন্তু গত বছর ঘটেছিল অভূতপূর্ব ঘটনা। ধুলার মেঘের স্তম্ভগুলো কিছুতেই ভাঙতে চাইছিল না। উঁচু উঁচু স্তম্ভগুলো টিকে ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন সপ্তাহ। আর সেগুলো শুধুই কোনো একটি এলাকায় নয়, গোটা মঙ্গল গ্রহটাকেই ঢেকে দিয়েছিল।'

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন ভয়ঙ্কর ধুলার ঝড়ের জন্যই কয়েকশ কোটি বছর আগে মঙ্গলের পানির ভান্ডার উবে গিয়েছিল মহাকাশে।

সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, ডেইলি মেইল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<77914 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1