শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ সাংবাদিক থেকে সফল রাজনীতিক বরিস

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ছোটবেলায় পুরো পৃথিবীর রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন বরিস জনসন। তবে পুরো পৃথিবীর না হলেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে (প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) ফিরে এসেছেন তিনি। থেরেসা মে'কে সরিয়ে তিনি যখন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন সমালোচকরা উপহাস করেছিলেন, দলের মাত্র গুটিকয়েক সদস্য তাকে এই দায়িত্বের জন্য নির্বাচিত করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে দেখা গেল বিতর্কিত, ব্যতিক্রমী ও একগুঁয়ে এই মানুষটাকে দেশটির সাধারণ ভোটাররাও সমর্থন দিয়েছে।

বিভক্ত মতামত এবং মনোযোগ আকৃষ্টকারী বিতর্কের মধ্য দিয়ে নিজের পেশা জীবন গড়েছেন বরিস- প্রথমে একজন সাংবাদিক হিসেবে, পরে রাজনীতিবিদ। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ায় তার অনেক সমালোচক মনে করেছিলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার মতো যথেষ্ট দক্ষতা তার নেই। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন তিনি।

তুরস্কের পূর্বপুরুষ এবং ব্রাসেলসের জীবন : বরিস জনসন নিজেকে ইউরোপের একজন সমালোচক হিসেবে বর্ণনা করেন 'ইউরোস্কেপটিক' বলে। তুরস্কের একজন সাংবাদিকের প্রপৌত্র বরিসের জন্ম নিউইয়র্কে। পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের আগে কূটনীতিক পিতা এবং শিল্পী মায়ের সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ব্রাসেলসে বসবাস করেন। অভিজাত বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয় তাকে, যেখানে তার অদ্ভুত স্বভাব বা ভিন্নকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, যেজন্য তিনি বিশেষ পরিচিত।

পরবর্তী সময়ে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ক্লাসিক' নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং অক্সফোর্ড ইউনিয়ন ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় থেকেই বিতর্ক তৈরির প্রতি জনসনের আগ্রহের ব্যাপারটি পরিষ্কার হতে শুরু করে। 'টাইমস' পত্রিকা থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়, কারণ তিনি একটি উদ্ধৃতি নিজে থেকে বানিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপর তিনি রক্ষণশীল ঘরানার পত্রিকা 'ডেইলি টেলিগ্রাফ'র ব্রাসেলস সংবাদদাতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। 'তার সাংবাদিকতায় তথ্যউপাত্তের সঙ্গে ইউরোপের বুনো কল্পিত সমালোচনাও দক্ষতার সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হতো'। সেসব লেখার ভেতরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি তার ক্ষুব্ধতার ব্যাপারটি নিহিত ছিল, যা তার পরবর্তী জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে তখন অনেক সহকর্মী তরুণ ওই প্রতিবেদকের আচরণকে 'বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অসততা' বলে বিবেচনা করতেন।

জ্বালাময়ী কলাম লেখক : যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে বরিস টেলিগ্রাফ পত্রিকায় কলাম লিখতে শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে ডানপন্থি পত্রিকা স্পেক্টেটরের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বরিসের লেখায় বিশেষ কিছু পাঠককে আহত করার প্রবণতা দেখা যায়, তবে তিনি স্পেক্টেটরের প্রচার সংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হন।

বিবিসির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'হ্যাভ আই গট নিউজ ফর ইউ?' অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে নিয়মিত উপস্থিত হওয়ার পর থেকে তার মিডিয়া প্রোফাইলও বড় হতে থাকে। তার জীবনীকার সোনিয়া পার্নেলসহ অনেক ভাষ্যকারের মতে, শব্দের ব্যবহার এবং মতামতের কারণে তিনি সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হলেও একই সঙ্গে সেসব তাকে রাজনৈতিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বেও পরিণত করেছে, যা রাজনীতিতে তার আত্মপ্রকাশের মঞ্চ তৈরি করেছিল।

কেবল বরিস : ২০০১ সালে বরিস জনসন অক্সফোর্ডের নিকটবর্তী রক্ষণশীল সমর্থক জেলা হিনলি-অন-টেমস থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে লন্ডনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়া তাকে বিশ্ববাসীর কাছেও পরিচিত করে তোলে। ২০১২ সালের অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় যখন বিশ্ববাসীর নজর এই শহরের দিকে, তখন বরিস অনেকটা ওই আসরের দূতের মতো হয়ে ওঠেন।

তার বিখ্যাত পরিবহণ কর্মসূচিগুলোর একটি হলো ২০১০ সালের জুলাই মাসে চালু করা তথাকথিত 'বরিস বাইক' সাইকেল কর্মসূচি। এটা হচ্ছে একজন রাজনীতিবিদ এবং খ্যাতিমান ব্যক্তি হিসেবে তার মিশ্র অবস্থানের একটি প্রমাণ যে, তিনি সবসময়ই শুধু 'বরিস' হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ব্রেক্সিট চ্যাম্পিয়ন : ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে একটি আসনে জিতে পার্লামেন্টে আবার ফিরে আসেন বরিস জনসন। ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের আগেভাগে ওই ব্যাপারে তার অবস্থান খুব বেশি পরিষ্কার ছিল না। তিনি একটি নিবন্ধে যুক্তি তুলে ধরেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া উচিত এবং আরেকটি খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন যেখানে বলা হয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের ইউনিয়নে থাকা উচিত।

তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে অবস্থান নেন এবং তার অর্থ হলো দলের তৎকালীন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া। নির্বাচনে ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে ভোট পড়ে এবং ক্যামেরন পদত্যাগ করেন, তখন কনজারভেটিভ দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার একটা চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

কিন্তু থেরেসা মে বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হন-ভোটাভুটির আগেই অন্য সব প্রার্থীকে সরে যেতে হয়। কিন্তু ব্রেক্সিট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বরিসের ভূমিকার স্বীকৃতি দিতে তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি থেরেসার মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসেন এই দাবি করে যে, ব্রাসেলসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময় তার (থেরেসা মে) আরও কঠোর ভূমিকায় থাকা উচিত। দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর এবং প্রধানমন্ত্রী বরিস কখনোই চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাকে নাকচ করেননি। সংবাদসূত্র: বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79797 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1