বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বিশেষ প্রতিবেদন

আফগান যুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন আফগান যুদ্ধে 'অগ্রগতি' সম্পর্কে বছরের পর বছর ধরে নিজ দেশের জনগণকে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসেছে। জনগণকে প্রকাশ্যেই পেন্টাগন আশ্বস্ত করেছে যে, যুদ্ধে তারা বেশ ভালো করছে। অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। অন্তত ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে তেমনটাই উঠে এসেছে। 'ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট'র আওতায় তিন বছর গোপন থাকার পর এক মার্কিন জেলা বিচারকের নির্দেশে পেন্টাগান নথিগুলো ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে হস্তান্তর করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট গত বৃহস্পতিবার যে নথি প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা অকপটতায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই বিশ্বাসে যে, তাদের বক্তব্য সারা জীবনের জন্যই গোপন থাকবে। সাক্ষাৎকার দেওয়া বেশির ভাগ সদস্যদের পরিচিতি পেন্টাগন প্রকাশ করতে এখনো অস্বীকৃতি জানিয়ে এলেও এক সাক্ষাৎকার দানকারী ব্যক্তি ডগলাস লুট, যিনি আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকারী তিন তারকার জেনারেল। তিনি স্বীকার করেছেন, তারা আফগানিস্তান সম্পর্কে মৌলিক উপলব্ধি থেকেও বঞ্চিত। তিনি বলেন, 'আমরা জানি না আফগানিস্তানে কী করছি, যার ব্যাপারে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।'

সাক্ষাৎকার দানকারী আরেক ব্যক্তি কর্নেল বব ক্রলি বলেন, 'সম্ভব সর্বোত্তম চিত্র উপস্থাপন করার জন্য প্রতিটি তথ্য বদলানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জরিপগুলো ছিল পুরো অবিশ্বস্ত, তবে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, আমরা ঠিক কাজই করছি, আমরা টিকে থাকার চেষ্টাই করে গেছি।'

এসব সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ফেডারেল সংস্থার প্রধান জন সোপকো ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে স্বীকার করেছেন, মার্কিন জনগণকে সব সময় মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারগুলো ছিল 'এসআইজিআর' নামে পরিচিত সংস্থা 'অফিস অব দ্য স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকন্সক্ট্রাকশন'র মূল কাজের উপজাত। এই সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালে যুদ্ধ এলাকায় অপচয় ও প্রতারণা সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য।

আর এখানেই আছে আসল কথা। এক ট্রিলিয়ন ডলারের যুদ্ধটি তৈরি করা হয়েছিল উদ্দেশ্যমূলক, পরিকল্পিত ও জেনেবুঝে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। ঠিক যেমনটা ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। আফগানিস্তানে দুই হাজার ৩০০ মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার লোক আহত হয়েছে, মানসিক, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। লাখ লাখ আফগান নিহত হয়েছে, পঙ্গু, আটক, নির্যাতিত হয়েছে। পুরো দেশটি ধ্বংস করা হয়েছে।

এসব করা হয়েছে কেন? একেবারে অকারণে! মার্কিন সেনা অকারণে নিহত হয়েছে। অথচ এমনটি যে হবে, তা 'দ্য ফিউচার অব ফ্রিডম ফাউন্ডেশন' আফগানিস্তানে হামলার আগেই বলে দিয়েছিল।

বেশির ভাগ মার্কিন সেনা সত্যটা জানে, ঠিক যেমন বেশির ভাগ মার্কিনি তা জানে। 'পিউ রিসার্চ সেন্টার'র মতে, ১৮ বছর আগে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এবং ১৬ বছর আগে ইরাকে মার্কিন অভিযান শুরুর পর থেকে সামরিক বাহিনীর যুদ্ধফেরতদের বেশির ভাগই বলেছে যে, এগুলো লড়াই করার মতো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ নয়। এক জরিপে এসব অনুভূতির সঙ্গে লোকজনকে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

এই যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিন জনগণের কাছে মিথ্যা বক্তব্য দেয়ার জন্য পেন্টাগনের কোনো কর্মকর্তাকে কি কারাগারে যেতে হবে? না। বরং আফগানিস্তানকে স্বর্গে পরিণত করার জন্য পেন্টাগন কেবল দেশটিকে সহিংসতার নরকে পরিণত, কর্মকর্তাদের দুর্নীতিপরায়ণ, আফিম উৎপাদন বাড়াতে সফল হয়েছে।

দেশটি দখলের পর মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের আদর্শের সরকারকে ক্ষমতায় বসায়। এই সরকার কঠিন কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের হাতে সর্বময় ক্ষমতা, নাগরিক স্বাধীনতা নেই বিন্দুমাত্র, আইনের বালাই নেই, নৃশংসতা ও অস্বাভাবিক শাস্তির কোনো প্রতিকারও নেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি থ্যাঙ্কসগিভিংয়ে সেনাদের সঙ্গে দেখা করতে গভীর রাতে দেশটিতে গোপনে প্রবেশ করেন এবং দ্রম্নত ওয়াশিংটনে ফিরে যান; মাত্র তিন ঘণ্টা অবস্থান করে। খুবই দিক কথা হলো, তিনি সঙ্গে করে সেনাদের নিয়ে যাননি। বরং তাদেরকে রেখে এসেছেন অকারণে অব্যাহতভাবে হত্যা করতে ও মৃতু্যবরণ করতে। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, তিনি তাদেরকে রেখে এসেছেন পেন্টাগনের সহিংসতার নরকের 'স্বর্গ' টিকিয়ে রাখতে, দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা অব্যাহত, মিথ্যা জারি রাখতে। সংবাদসূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79803 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1