শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
কেউ নিহত হয়নি, আহত তিন

বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে ফের রকেট হামলা

হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ, তবে তেহরানকে ফের হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ফের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে : মাহদি
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাঝে কিছুদিন শান্ত ছিল পরিবেশ। কিন্তু রোববার আবারও রকেট হামলা হলো ইরাকের রাজধানী বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস লক্ষ্য করে। তবে হামলার ঘটনায় কারও মৃতু্য হয়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ওই দূতাবাস লক্ষ্য করে হামলা হলেও এবারই প্রথম সরাসরি দূতাবাস ভবন আক্রান্ত হলো। সাম্প্রতিক সময়ে ইরাকে দূতাবাস এবং ইরাকের সামরিক ঘাঁটিগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যেখানে মার্কিন বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এদিকে, হামলার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদি। বলেছেন, এ ধরনের ধারাবাহিক হামলার ফলে ইরাক আবারও যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, ডয়চে ভেলে, রয়টার্স, সিএনএন

ইরাকি প্রশাসন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিন জোনে পর পর পাঁচটি রকেট হামলা হয়। কিন্তু তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিন ব্যক্তির সামান্য আহত হওয়ার কথা একই সঙ্গে জানানো হয়। তবে ইরাকি প্রশাসন তাদের বিবৃতিতে মার্কিন দূতাবাসের কথা উলেস্নখ করেনি। পরে মার্কিন প্রশাসন জানায়, হামলা হয়েছিল তাদের দূতাবাস লক্ষ্য করেই। কিন্তু তাতে দূতাবাসের কোনো ক্ষতি হয়নি। মার্কিন পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রনীতির প্রধান মাইকেল ম্যাককল বিবৃতি দিয়ে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র পুরো বিষয়টির ওপর নজর রাখছে।'

মাইকেল জানিয়েছেন, ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সেনা, কূটনীতিক এবং সাধারণ মানুষের সুরক্ষা বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। ইরাকে তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তার জন্য প্রশাসন সব রকম ব্যবস্থা করছে। ইরাক সরকারেরও বিষয়টির দিকে নজর রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোববার মার্কিন দূতাবাস লক্ষ্য করে পাঁচটি 'কাতিউশা' রকেট ছোড়া হয়েছিল। এসব রকেটের মধ্যে অন্তত একটি মার্কিন দূতাবাসে আঘাত হেনেছে, এতে তিন জন আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ। মার্কিন প্রশাসন ঘটনার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী না করলেও, পরোক্ষে তেহরানকে ফের হুঁশিয়ার করেছে। বলা হয়েছে, ইরান সমর্থিত বেশ কিছু গোষ্ঠী বাগদাদে লাগাতার মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এর প্রতু্যত্তর দেবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, 'কূটনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে ইরাকি কর্তৃপক্ষের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, আমরা তাদের তা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।'

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদিও রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, 'ইরাকের প্রশাসন এই ঘটনার তদন্ত করবে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে ফের যাতে এমন হামলার ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখবে ইরাকি প্রশাসন।'

এদিকে, মাহদি বিবৃতি দিলেও ইরাকে মার্কিন সেনার উপস্থিতি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, বিদেশি সেনার উপস্থিতির ফলে ইরাকের সার্বভৌমত্ব নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে দেশ থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সরিয়ে নিতে হবে। কয়েক সপ্তাহ আগে ইরাকের পার্লামেন্টও একটি প্রস্তাব পাস করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, দেশ থেকে সব বিদেশি সেনাকে সরিয়ে দিতে হবে। জার্মানিসহ বহু দেশ তারপরেই ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। প্রাথমিক ভাবে সেনা সরানোর কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু পরে তারা ফের এক বিবৃতিকে জানায়, ইরাক থেকে সেনা সরানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তারপরেই বাগদাদের অদূরে মার্কিন সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছিল ইরান প্রভাবিত একটি গোষ্ঠী। তারও আগে ইরান সরাসরি হামলা চালিয়েছিল মার্কিন সেনাঘাঁটিতে। ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করলেও ইরান জানিয়েছিল, রকেট হামলায় অন্তত ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।

কিছু দিন আগে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসেও হামলা চালিয়েছিল ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী। ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি দূতাবাসের সামনে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার উত্তরে যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল ইরানের প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনির পর সবচেয়ে শক্তিধর নেতা ছিলেন জেনারেল সোলাইমানি। তার মৃতু্যতে ইরানে শোকের ছায়া নেমে আসে। জেনারেল সোলেইমানির মৃতু্যকে কেন্দ্র করে গত ৮ জানুয়ারি ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। তারপরেই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে দুই দেশই পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করে। কিন্তু রোববারের ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলো। যুক্তরাষ্ট্র যদি এর জবাব দেয়, তাহলে ফের আগুন ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86254 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1