ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নারীদের 'স্থায়ী কমিশন' দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া সোমবারের এ রায়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে লিঙ্গবৈষম্য দূর হলো, এমনটি মনে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ
২০১০ সালে দেওয়া এক রায়ে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর তিন বিভাগেই নারীদের 'পারমানেন্ট কমিশন' দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দিলিস্ন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আপিলের শুনানিতে সরকার পক্ষ যুক্তি দেয়, সেনা সদস্যদের বড় একটি অংশ আসে গ্রাম থেকে, নারী কর্মকর্তাদের আদেশ মানার মতো মানসিকতা তাদের মধ্যে নেই। পাশাপাশি 'নারীদের শারীরিক গঠনগত' সীমাবদ্ধতার কারণে তারা যুদ্ধ করার উপযুক্ত নন; মাতৃত্ব, শিশুপালন ও যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রম্নর হাতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা এসব প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়।
রায় পড়ে শোনানোর সময় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি অজয় রাস্তোগির ডিভিশন বেঞ্চ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। সেনাবাহিনীতে নারীদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রগতিশীল পদক্ষেপ এবং এ নিয়ে কোনোরকম বৈষম্য চলবে না মন্তব্য করেন তারা। আদালত বলে, 'নারীরা পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি পুরনো ধারণাপ্রসূত ও লিঙ্গবৈষম্যমূলক।'
একমাত্র যুদ্ধ শাখা ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর সব স্তরে আগামী তিন মাসের মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে দেশটির সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নারীরা যেন পুরুষদের সমান সুযোগ-সুবিধা পান, তার দিকেও লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শর্ট সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) আওতায় যে সব নারী কর্মকর্তা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন, তাদেরও স্থায়ী কমিশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরের বাইরে অন্যান্য কোরে ১৯৯২ সাল থেকে নারীদের নিয়োগ শুরু হয়। এরপর ২৮ বছর পার হলেও 'লং সার্ভিস কমিশনড' কর্মকর্তা পদে ২০ বছর কাজ করার সুযোগ হয়নি নারীদের। পদোন্নতি, পেনশনের আশা না করে শুধু ১৪ বছর কাজ করার সুযোগ পাচ্ছিলেন তারা।
এ বিষয়টি নিয়েই দিলিস্ন হাইকোর্টে রিট করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তারা। আদালতের রায়ে সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ করার এবং নেতৃত্ব পদে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন বাহিনীটির ৫৭ জন নারী কর্মকর্তা। এই রায়কেই চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর থেকে সেই আবেদন বিচারাধীন ছিল। এতদিন 'শর্ট সার্ভিস কমিশন'র আওতায় নারীরা ভারতীয় সেনা পরিষেবা বিভাগ, অস্ত্র কারখানা, শিক্ষা ও বিচার বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল, গোয়েন্দা এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ১০ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন।