শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস গবেষণা

বয়স্ক-অসুস্থরাই বেশি ঝুঁকিতে

৯ বছর পর্যন্ত বয়সিদের মধ্যে মৃতের ঘটনা নেই এবার প্রাণ হারালেন উহানের হাসপাতাল পরিচালকও চীনে কমছে নতুন সংক্রমণ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
উহানের উচ্যাং হাসপাতালের পরিচালক ডা. লিউ ঝিমিং

প্রাণঘাতী কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে ৭০ হাজারের বেশি আক্রান্তের তথ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে চীন। সোমবার দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিসিডিসি) গবেষকরা এটি প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ এবং অন্যান্য রোগে ভোগা ব্যক্তিদের মৃতু্য ঝুঁকিই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া গবেষণায় বলা হয়েছে, ভাইরাসটির উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরা। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিনহুয়া

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও)। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস।

ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নিয়ে প্রকাশিত প্রথম বিস্তারিত গবেষণায় দেখা গেছে, সামগ্রিকভাবে এতে মৃতু্যর হার দুই দশমিক তিন শতাংশ। আর ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশে এই হার দুই দশমিক ৯ শতাংশ। সোমবার চীনের 'জার্নাল অব এপিডেমিয়োলোজি'তে প্রকাশিত হয় সিসিডিসির নতুন গবেষণার ফল। এতে গত ১১ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ৭২ হাজার ৩১৪ আক্রান্ত, সন্দেহভাজন ও লক্ষণযুক্ত মানুষের তথ্য স্থান পায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ সংক্রমণের ঘটনাই খুবই সামান্য এবং মারাত্মক আক্রান্ত ১৩ দশমিক আট শতাংশ এবং মাত্র চার দশমিক সাত শতাংশের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া মৃতের হার সবচেয়ে বেশি ৮০ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সিদের। এই বয়সিদের মৃতের হার ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৯ বছর পর্যন্ত বয়সিদের মধ্যে মৃতের ঘটনা নেই। আর ৩৯ বছর পর্যন্ত বয়সিদের মধ্যে মৃতের হার মাত্র দশমিক দুই শতাংশ। এরপরের বয়সিদের মধ্যে এই হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ৪০-এর কোঠায় বয়সিদের মৃতের হার দশমিক চার শতাংশ, ৫০-এর কোঠায় বয়সিদের এক দশমিক তিন শতাংশ, ৬০-এর কোঠায় বয়সিদের তিন দশমিক ছয় শতাংশ এবং ৭০-এর কোঠায় বয়সিদের মৃতের হার ৮ শতাংশ। চীনের গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর অসুখে ভোগা ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন। এরপরর ঝুঁকিতে রয়েছেন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও হাইপারটেনশনে ভোগা মানুষ।

চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৮৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সোমবার নতুন করে মারা যাওয়া ৯৮ জনের মধ্যে অন্তত ৯৩ জন হুবেই প্রদেশের। এছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭২ হাজার ৪৩৬ জনে।

চীনে কমছে নতুন সংক্রমণ

এদিকে, চীনের মূল ভূখন্ডে করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা মঙ্গলবার দুই হাজারের নিচে নেমে এসেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রাদুর্ভাব সীমিত হয়ে গেছে; তা বলার সময় এখনো আসেনি। হুবেই প্রদেশে ভ্রমণ ও চলাফেরার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ভূমিকা রাখলেও চীনের অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যকে এ জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।

চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন আক্রান্তের সংখ্যা স্থিতিশীল হওয়ায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপ কার্যকর হচ্ছে। তবে এখনো ভাইরাসটি দ্রম্নত ছড়াচ্ছে এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে বলে মনে করেন লন্ডনের 'স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন'র অধ্যাপক জিমি হোয়াইটওয়ার্থ। ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথের এই অধ্যাপক বলেন, 'চীনে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হুবেই প্রদেশের প্রাদুর্ভাব চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছে বলে আশা করতে পারি, কিন্তু সেটা সঠিক কিনা তা বিবেচনা করার সময় এখনো আসেনি'। তিনি বলেন, 'এই সময়ে অন্য দেশের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগগুলোর সতর্ক থেকে নতুন আক্রান্ত চিহ্নিত করা এবং তাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।'

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবিস্নউএইচও) মহাসচিব টেড্রোস গেব্রেইসুস বলেন, চীনা পরিসংখ্যানে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, 'এই প্রবণতা সতর্কতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করতে হবে। নতুন জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হলে এই প্রবণতায় পরিবর্তন আসতে পারে।'

এবার প্রাণ হারালেন উহানের

হাসপাতাল পরিচালক

ভয়াবহ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটছিল উহানের উচ্যাং হাসপাতালের পরিচালক লিউ ঝিমিংয়েরও। এ লড়াইয়ে নেতৃত্বে থেকে সবাইকে প্রেরণা যোগাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রাণঘাতী ভাইরাস একসময় জেঁকে বসে তার শরীরেও। অনেক রোগী তার হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলেও পারলেন না তিনি। হেরে গেলেন, করোনা কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণও।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন জানিয়েছে, উহানের উচ্যাং হাসপাতালের পরিচালক লিউ ঝিমিং মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের কোনো হাসপাতালের প্রধান হিসেবে প্রথম প্রাণ গেল লিউয়ের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89163 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1