শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আক্রান্ত ছাড়াল দুই লাখ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই ভাঙছে রেকর্ড

বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ, মৃতের সংখ্যাও ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই মহামারিতে ইতালির পথে যুক্তরাষ্ট্র :মাইক পেন্স দেড় মাসের শিশুর মৃতু্য
যাযাদি ডেস্ক
  ০৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৩ এপ্রিল ২০২০, ১১:১৬
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রবল প্রতাপে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মানুষ। লকডাউনের কবলে পড়া এই মানুষের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা মেটাতে দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারি উদ্যোগে দুয়ারে দুয়ারে প্রতিমুহূর্তে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। করোনার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও এমনভাবে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন এক কর্মী। ছবিটি বুধবার তোলা -সিনহুয়া অনলাইন

বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যাও পার করেছে পাঁচ হাজারের কোঠা। বুধবার একদিনেই দেশটিতে রেকর্ড ৯০০ জনের বেশি লোকের মৃতু্য হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার' জানিয়েছে। এর আগে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৬৯ জনের মৃতু্য হয় গত ২৭ মার্চ ইতালিতে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। মৃতের সংখ্যাও ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি এদিকে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের মজুদে থাকা সুরক্ষা সরঞ্জাম ও চিকিৎসা উপকরণও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আশ্বস্ত করে বলেছে, তারা পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে এবং এজন্য আরও এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে। জরিপ সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে কেবল বুধবারই ২৫ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নিউইয়র্কের অবস্থাই সবচেয়ে ভয়াবহ; শহরটিতে একদিনেই গড়ে এক হাজার তিনশ'র বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোর বাইরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাকবোঝাই অসংখ্য মৃতদেহ দেখা গেছে। নিউ অরলিয়ন্স ও ডেট্রয়টেও আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও মিসিসিপিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে দেশটির ৭৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীই এখন লকডাউন বা ঘরবন্দি দশায় আছেন। সংক্রমণ কমিয়ে আনতে নেওয়া নানা পদক্ষেপের পরও যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯-এ দুই লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ মারা পড়তে পারে বলে দেশটির কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবিস্নউএইচও) প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস কয়েকদিনের মধ্যে বিশ্বব্যাপী আরও ১০ লাখ লোক আক্রান্ত হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া পরিস্থিতির দ্রম্নত পরিবর্তন হওয়ায় সংস্থাটি মাস্ক পরার বিষয়ে তাদের আগের নির্দেশনা পরিবর্তন করার বিষয়ে আলোচনা করবে। এর আগে তারা পরামর্শ দিয়েছিল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি, আক্রান্তকে সেবাদানকারী ব্যক্তি বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ছাড়া কারও মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। তবে এখন সবাইকেই মাস্ক পরতে পরামর্শ দেওয়ার কথা চিন্তা করছে তারা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। অধিকাংশ দেশেই মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে চলাফেরার ওপর বিভিন্ন মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো দেশে আরোপ করা হয়েছে সম্পূর্ণ লকডাউন, কোথাও কোথাও আংশিকভাবে চলছে মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম। করোনা মহামারিতে ইতালির পথে যুক্তরাষ্ট্র : মাইক পেন্স এদিকে, করোনাভাইরাসের মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্র ইতালির পথেই হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বুধবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস করোনা মহামারির এক মডেল উন্মোচন করে। ওই মডেলে বলা হয়েছে, কঠোর এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃতু্য হতে পারে। ওই মডেলের দিকে ইঙ্গিত করে মাইক পেন্স বলেন, 'এই মডেলের সঙ্গে কেবল ইতালির তুলনাই চলে।' এই মহামারিতে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইতালি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃতু্যও হয়েছে সেখানে। মহামারি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। একই পরিণতি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা। মহামারি শুরুর প্রথমদিকে মার্কিন সরকার ধীরগতিতে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে দেশটিতে জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। তবে মাইক পেন্স বলেন, 'দেখুন, বাস্তবতা হলো চীন যদি আরও এগিয়ে আসত, তবে আমরাও আরও ভালো কিছু করতে পারতাম।' যুক্তরাষ্ট্রে দেড় মাসের শিশুর মৃতু্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবার দেড় মাসের এক শিশু মারা গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, করোনায় এটি সবচেয়ে কম বয়সী শিশুর মৃতু্যর ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ওই শিশুর মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করা হয়। কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নেড লেমন্ট এক টুইট বার্তায় বলেন, অচেতন অবস্থায় গত সপ্তাহে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। এটা হৃদয়বিদারক। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়েস রাজ্যেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৯ মাসের এক শিশু মারা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে