শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা

মৃতু্যপুরী নিউইয়র্কে বাড়ছে কান্না

রোগীর চাপে বেসামাল হাসপাতালগুলো, ভেঙে পড়ছে স্বাস্থ্যসেবা দেশটিতে মৃতু্য ৭ হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত পৌনে ৩ লাখ
যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৭
অদৃশ্য শত্রম্ন কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর এ লড়াই করতে গিয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে তাদের মধ্যে অনেকে প্রাণও দিয়েছেন। সেজন্যই জোরালো দাবি উঠছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) ব্যবস্থা করার জন্য। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ক্যালিফ শহরে পিপিই'র দাবিতে বিক্ষোভরত কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী -এপি/আউটলুক ইনডিয়া

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের তান্ডব শুরু হওয়ার পর প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃতু্য দেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য। শুক্রবার উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বের এ দুটি অঙ্গরাজ্যে ছয় শতাধিক মানুষ করোনাভাইরাসে প্রাণ হারিয়েছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি করোনায় মৃতু্যপুরীতে পরিণত হওয়া নিউইয়র্কে। শহরটিতে অবিরাম মৃতু্যর মিছিলে বাড়ছে কান্না। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটারের' তথ্যানুযায়ী, সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা সাত হাজার পেরিয়ে গেছে। আক্রান্ত পৌঁছেছে পৌনে তিন লাখে। সংবাদসূত্র :বিবিসি, সিএনএন জরিপ সংস্থাটির মতে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টাতেই যুক্তরাষ্ট্রে এক হাজার ১৬১ জনের মৃতু্য হয়েছে; আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩২ হাজার ১৩৩ জন। বিপুল পরিমাণ আক্রান্তের চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগীর চাপে নিউইয়র্ক সিটি ও নিউ অরলিয়ন্সের মতো বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা সংবলিত শহরগুলোর স্বাস্থ্য কাঠামোও ভেঙে পড়তে বসেছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, শহরগুলোর মেয়র ও চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সামনের কাতারে থাকা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সুরক্ষা উপকরণের জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরেই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন; গুরুতর অসুস্থদের জন্য ভেন্টিলেটরের ঘাটতির কথাও বারবার বলছেন তারা। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে থাকা এসব উপকরণের মজুত প্রায় শেষ হয়ে আসায় অঙ্গরাজ্যগুলো এখন বিভিন্ন উৎস থেকে চড়া দামে এগুলো কিনতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট মৃতু্যর এক-চতুর্থাংশই নিউইয়র্ক শহরের। শহরটির মেয়র বিল ডি বস্নাসিয়ো বলেন, করোনার ছোবলের সবচেয়ে ভয়াবহ দিনগুলো এখনো সামনে বলে আশঙ্কা তার। সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'সময়ের সঙ্গে দৌড়াতে হচ্ছে আমাদের।' পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতেও ফের অনুরোধ করেছেন তিনি। বস্নাসিয়ো বলেন, 'আমরা এমন এক শত্রম্নর সঙ্গে লড়ছি, যে হাজারো মার্কিনিকে মেরে ফেলছে, যাদের মারা যাওয়ার দরকার ছিল না।' নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বলেও মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব নাগরিকই এখন 'ঘরবন্দি' নির্দেশনার আওতায়; প্রয়োজনীয় কেনাকাটা এবং চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করা ছাড়া আর কোনো অজুহাতেই ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই তাদের। তবে ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরা লাগবে কিনা, তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের বারবার অবস্থান বদলও তাদের বিপাকে ফেলেছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেছেন, 'স্বাস্থ্য বিভাগ নাগরিকদের কাপড়ের মাস্ক পরার পরামর্শ দিলেও এটি পুরোপুরিই ঐচ্ছিক। কেউ চাইলে পরতে পারে, নাও পারে। আমি না পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' দেশটির অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে মৃতু্য ও আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়লেও করোনাভাইরাস নিউইয়র্কজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উত্তর-পূর্ব এ রাজ্যটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে শয্যার (বেড) অভাবে তারা গুরুতর সব রোগীকেও চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, এ রকমটা আগে কখনোই দেখিনি আমি। উন্নত বিশ্বে এমনটা হয় শুনিওনি। অন্যদিকে, শুক্রবার লুইজিয়ানায় মৃতের সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার পর গভর্নর জন বেল অ্যাডওয়ার্ড বাসিন্দাদের ঘরবন্দি থাকার নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এ অঙ্গরাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যাও ১০ হাজার পেরিয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণের বিস্তার রোধে মৃতপ্রায় রোগীদের কাছে স্বজনদের যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেককেই মৃতু্যর আগের কষ্টকর কয়েক ঘণ্টা একাকী কাটাতে হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাওয়া নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোর বাইরে টাঙানো হয়েছে তাঁবু। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গেস্নাবাল হেলথ ইন ইমার্জেন্সি মেডিসিনের পরিচালক ড. ক্রেইগ স্পেনসার এক টুইটে বলেন, 'সেসব তাঁবুতে আমি নিদারুণ কষ্ট, একাকিত্ব আর মৃতু্য দেখেছি। মানুষ একাকী অবস্থায় মারা যাচ্ছে।' নিউ জার্সির গভর্নর ফিল মারফি করোনাভাইরাসজনিত জরুরি অবস্থা যতদিন থাকবে, ততদিন সব পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরুর পর প্রথম কোনো অঙ্গরাজ্য এমন পদক্ষেপ নিল। উত্তর-পূর্বের এ রাজ্যটিও করোনাভাইরাসের আঘাতে বিপর্যস্ত। শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে ২৯ হাজার ৮৯৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যাও ৬০০ পেরিয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে