শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সিএনএনের প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্রকে একঘরে করে ফেলছেন ট্রাম্প?

ইইউয়ের বৈঠকে সাড়া না দেওয়া, ডবিস্নউএইচওর তহবিল বাতিল, করোনাকালে যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাবের বিরোধিতা করা ও মহামারির সব দায় চীনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশটিকে কার্যত একঘরে করে ফেলছেন
যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ মে ২০২০, ০০:০০
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকটে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রে তার অতীত ভূমিকা থেকে সরে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈঠকে সাড়া না দেওয়া, ডবিস্নউএইচও'র তহবিল বাতিল, করোনাকালে যুদ্ধবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রস্তাবের বিরোধিতা করা ও মহামারির সব দায় চীনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটিকে কার্যত একঘরে করে ফেলছেন। সাবেক বিশ্বনেতারা সতর্ক করেছেন, চীনকে শাস্তি দিতে গিয়ে প্রাণঘাতী মহামারির রাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে মিত্রদের থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ঝুঁকিতে ফেলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

করোনাভাইরাস থেকে জীবন রক্ষাকারী টিকা আবিষ্কারের প্রক্রিয়া সমন্বয় করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত মাসে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক আহ্বান করে। তবে ওই বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের ডবিস্নউএইচও'র তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে হতভম্ব হয়ে পড়েন বিশ্বের স্বাস্থ্য খাতের নেতারা। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলার কাজে গতি আনতে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ৮ মে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা এক প্রস্তাব আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ওপর ক্ষোভ থেকে এর আগেও জি-৭ ও জি-২০ গ্রম্নপের একই ধরনের উদ্যোগ আটকে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্রিফিংগুলোকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা থেকে শুরু করে ইউরোপ পর্যন্ত দেখা হয়েছে অবিশ্বাস আর বিনোদন হিসেবে। বলা হচ্ছে, এতে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুণ্ন হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, জি-৭ এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে অন্তত ৫০টি ফোন কলে ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তহবিল বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমন্বিতভাবে তহবিল বরাদ্দ না হলে সামগ্রিক অগ্রগতি ধীর হয়ে পড়তে পারে।

বিশ্বজুড়ে যখন ৪২ লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তখন অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা দেখার আশা করেছিলেন। অতীতে ইবোলাভাইরাস সংক্রমণের সময় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কিংবা এইচআইভি/এইডস ভাইরাসের মহামারির সময়ে জর্জ ডবিস্নউ বুশের ভূমিকার কথা মনে করে এই আশা করছিলেন তারা। এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, 'তারা যুক্তরাষ্ট্রের আরও নিবিড় অংশগ্রহণ চাইছিলেন।' তিনি বলেন, 'আমরা জানি উন্নয়নশীল দেশসহ অনেক দেশের সঙ্গেই তারা (যুক্তরাষ্ট্র) ভালো কাজ করছে, দ্বিপাক্ষিকভাবে।' তিনি আরও বলেন, 'অনেক দেশই মনে করে এইটা ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় আর যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই এসব সংকটে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে।'

সমালোচকেরা বলে থাকেন, করোনাভাইরাস নিয়ে ট্রাম্পের ভূমিকা কেবল মহামারি মোকাবিলাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি বরং এতে অনিশ্চয়তা বেড়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমেছে আর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের সংশয় গভীর হয়েছে যে এগুলো আর ভালোভাবে কাজ করবে না।

ব্রিটিশ থিংকট্যাংক চাটহাম হাউজের গেস্নাবাল হেলথ প্রোগ্রামের পরিচালক রবার্ট ইয়েটস বলেন, 'দুনিয়া বৈশ্বিক নেতৃত্বের সন্ধান করছে। এটা বিশ্বজুড়ে চলা এক সমস্যা। আক্ষরিকভাবে দুনিয়ার সবার ওপরই এর প্রভাব পড়েছে। এই সময়ই আপনি আশা করবেন যে সুপারপাওয়ারের নেতারা সাহায্যের জন্য খুবই গঠনমূলক ও কাঠামোগত পদক্ষেপ নেবে।

তিনি বলেন, 'কেউ কেউ হয়তো আশা করবে বৈশ্বিক উদ্যোগ সমন্বয়ে নেতৃত্বের ভূমিকা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এবার সেসব সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল।' তিনি বলেন, মহামারির মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্প ডবিস্নউএইচও'র তহবিল বরাদ্দ বন্ধ করে দিলে বিশ্বের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। ইয়েটস বলেন, 'এটা সমন্বয়ের অভাবের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি, অনেকটা ধ্বংসযজ্ঞের মতো।'

ট্রাম্পের অভিযোগ, ডবিস্নউএইচও চীনের পক্ষে কাজ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, ডবিস্নউএইচও নিয়ে প্রেসিডেন্টের উদ্বেগ রয়েছে। তিনি বারবারই জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বের স্বাস্থ্য ও মানবিক খাতে এখনও একক বৃহত্তম দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ওই কর্মকর্তার দাবি, এই মহামারি মোকাবিলায় এখনও বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগগুলো এই মুহূর্তে কাজে আসছে না বলে মনে করেন অলাভজনক সংস্থা ওয়ান ক্যাম্পেইন'র সিইও এবং প্রেসিডেন্ট গেইল স্মিথ। তিনি বলেন, 'আমরা কোনও ধরনের সম্মেলন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক বা রাষ্ট্রপ্রধানদের কোনও বৈঠক দেখতে পাইনি যে কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করা হবে। এই যেমন বিশ্বজুড়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য কী করা যেতে পারে তা নিয়ে কোনও বৈশ্বিক আলোচনা দেখিনি।' সংবাদসূত্র : সিএনএন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99423 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1