শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন

জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত প্রমাণ করে চলেছেন, তিনি কেবল তার দলের জন্যই নয়, তিনি তার দেশের জন্যও এক অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু যেমন আওয়ামী লীগের মধ্যদিয়ে দেশবাসীকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন; সাড়ে সাত কোটি মানুষকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছিলেন, তার রক্ত ও রাজনীতির সুযোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি ষোল কোটি মানুষকে নিয়ে সবসময় ভাবছেন। ভয়াল করোনা সংক্রমণের এই বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কালেও তিনি ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে রাত-দিন দেশবাসীর ভালোমন্দের খোঁজখবর রাখছেন। বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীনতা। শেখ হাসিনা দিচ্ছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। এই জায়গায় পিতা-পুত্রীর অবস্থান পরস্পরের পরিপূরক। আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন যে প্রাচ্যের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে তার পেছনে কাজ করছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং তা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশবাসীর তৎপরতা। এই তৎপরতার সাফল্য অনিবার্য।
ড. রাশিদ আসকারী
  ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

ভেনি, ভিডি, ভিসি (াবহর, ারফর, ারপর) একটি ল্যাটিন শব্দবন্ধ যার অর্থও পধসব; ও ংধ;ি ও পড়হয়ঁবৎবফ. বঙ্গার্থ : আসলাম, দেখলাম, জয় করলাম। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার পন্টাসের দ্বিতীয় ফার্নাসেসের বিরুদ্ধে জেলার যুদ্ধে সহজ জয় লাভের পর খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭ অব্দে রোমান সিনেটকে লেখা এক পত্রে শব্দগুলো ব্যবহার করেন। সিজার পরাক্রমশালী দ্বিগ্বীজয়ী নৃপতি ছিলেন। সহজেই পররাষ্ট্র জয় করে পরমানন্দ লাভ করছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র জয় করার প্রয়োজনীয়তা এবং তার আনন্দ উপভোগের অভিজ্ঞতা তার তেমনটি হয়তো ছিল না, থাকলে- 'ভেনি'-এর স্থলে রিভেনিও (জবাবহরড়) অথাৎ ল্যাটিন ভাষায় 'ফিরে আসলাম' শব্দটি স্থান পেত।

'ফিরে আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন' কথাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে যার ওপর সর্বাধিক প্রযোজ্য, তার নাম শেখ হাসিনা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঔরসজাত সন্তান হয়েও তাকে দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে যেতে হয়েছিল ভিনদেশে। চেনা পৃথিবী হঠাৎ করে অচেনা হয়ে উঠেছিল তার কাছে। চিরচেনা মানুষগুলো কেমন জানি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল নিরাপদ দূরুত্বে, হয়তোবা বিপদের গন্ধ আঁচ করে। সেই চরম প্রতিকূল অবস্থা থেকে দেশ ও মাতৃকাকে পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন প্রায় অর্ধযুগ পরে ১৯৮১ সালের ১৭ মের এক চরম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, বিরামহীন বর্ষণ আর মুহুর্মুহু বজ্রপাত শেখ হাসিনাকে যেন বোঝাতে চেয়েছিল পঁচাত্তর-পরবর্তী বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশের অমানিশার কথা। সেই দিন সেই দুর্গতিনাশিনীর সাড়ম্বর আবির্ভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির বন্ধ বাতায়ন যেন খুলে যায়। গদিনশিন জেনারেল অবশ্য তার আগমন বন্ধ করার নানান ফন্দি-ফিকির করেছিলেন। কিন্তু দেশ এবং জনগণের প্রবল আকর্ষণের কাছে আর সবকিছু যেন গৌণ হয়ে দাঁড়ায়।

শেখ হাসিনা ফিরে আসলেন। স্বচক্ষে দেখলেন পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর সম্পূর্ণ পালটে যাওয়া এক অদ্ভুত বাংলাদেশ। যেখানে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। দেশ-বিদেশে উচ্চপদে আসীন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ফরমান জারি করে খোদ জাতির পিতার খুনের বিচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের শ্রাদ্ধ করে একেবারে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেওয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শত শত সেনা কর্মকর্তাকে নির্বিচারে হত্যা করে এক প্রতিক্রিয়াশীল তাঁবেদার সামরিক বুহ্য গড়ে তোলা হয়েছে। আর রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে সেনা ছাউনিতে বসে নতুন দল গড়ে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির জন্ম দেওয়া হয়েছে। সুবিধাবাদী আমলা, বিভ্রান্ত রাজনীতিবিদ এবং ভ্রষ্ট সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক চেতনাবিরোধী যে রাজনীতির খেলায় মেতেছিলেন তৎকালীন সামরিক শাসকেরা- শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না হলে হয়তো তত দিনে পাকিস্তানের এক ক্লোন করা হতো মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে। তাই শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সাহসী স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে একজন ব্যক্তির দেশে ফিরে আসার মতো মামুলি ঘটনা হিসেবে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। এটি যেন বাংলাদেশের ঘরে ফেরা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ম্যাসাকারে বস্তুত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশকেই হত্যা করা হয়েছিল।

\হসেদিন নিহত বাংলাদেশের একাংশ দৈবক্রমে বেঁচে ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও রাজনীতির উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনার মাঝে। সেই নির্বাসিত বাংলাদেশই যেন ফিরে আসে স্বদেশে শেখ হাসিনার সঙ্গে। শেখ হাসিনার দেখা শেষ হয় না। নব্বুয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পরও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি কীভাবে কৌশলে মসনদে বসে থাকে- প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী শক্তির কাঁধে চড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অজুহাতে, তা দেখেও নিরুৎসাহিত হননি হাসিনা। অবশেষে অনেক পরে, অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে একসময় শেখ হাসিনার হাত ধরেই নতুন বিজয় আসে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের। দীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, একাত্তরের গণমানুষের রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রীর আসন অলংকৃত করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ফিরে আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। কিন্তু সেই জয় সিজারের জেলার যুদ্ধে জয়ের মতো অত সহজ ছিল না। দেশের ভেতর-বাইরের, দলের ভেতর-বাইরের অসংখ্য সংকট মোকাবিলা করে তিনি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ক্রমাগত অনন্য উচ্চতায়। হেনরি কিসিঞ্জারের কথিত 'তলাবিহীন ঝুড়ি' এখন স্যাটেলাইটযুগের মানচিত্রে জায়গা করে নেওয়া এক গর্বিত দেশ। বিশ্বব্যাংকের অসহযোগিতাকে অগ্রাহ্য করে নিজ সামর্থ্যে পদ্মা সেতুর মতো একটি স্টেট অব দ্য আর্ট স্থাপত্য গড়ে তোলার যোগ্যতাসম্পন্ন এক স্বাবলম্বী জাতি। আর এসবের পেছনে ছায়া হয়ে মিশে আছে একজনের অনিশেষ দায়বোধ এবং অপরিসীম দক্ষতা। দুর্মর দেশপ্রেম এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং শেখ হাসিনা। জরিপকারীরা ভুল বলেনি 'শেখ হাসিনা তার দলের চাইতেও অধিক জনপ্রিয়। অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত, সুবিধেভোগী ভন্ড কপট নেতাকর্মীদের কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলকে নিয়েও অনেক সময় সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে অনিশ্চয়তায় ভোগেন এই দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু কাউকে কখোনো জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর ক্ষণিকের তরেও আস্থা হারাতে দেখিনা। দিনের চব্বিশ ঘণ্টার সিংহভাগ সময় যার কাটে দেশের ভাবনায় ও কাজে- তার ওপর আস্থা হারানো কঠিন।

এদিকে ১৯৮১ সালের মে মাসে দিলিস্ন থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকায় অবতরণ করেন শেখ হাসিনা। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তার জন্য আয়োজিত মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সমাবেশে যোগদান করেন। বিশাল জনসমাবেশে আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, 'আমি বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকতে এসেছি। আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেতা হতে আসেনি। আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে, যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করে।' বিশাল জনসমুদ্রে পিনপতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সেই প্রথম জিয়াশাসিত বাংলাদেশে 'জয় বাংলা' স্স্নেস্নাগান ধ্বনিত হয়। ৩০ মিনিটের ভাষণে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুসহ চার জাতীয় নেতার হত্যাকান্ডের বিচার করার প্রতিজ্ঞা করেন। ভারী বর্ষণ, বজ্রপাত অগ্রাহ্য করে অসংখ্য জনতার সঙ্গে তিনি পিতৃগৃহ ধানমন্ডি ৩২-এ যান। সেখানে তখনো বঙ্গবন্ধুর রক্তের দাগ লেগে ছিল। কিন্তু আদিষ্ট নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে নিজ গৃহের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা বাইরে বসে প্রিয়জনদের আত্মার শান্তি কামনা করতেও দেয়নি।

সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শেখ হাসিনার পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। ক্ষমতায় এসে তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। কালো আইন বাতিল করেছেন। জঙ্গি দমনে অভূতপূর্ব সাফল্য এনেছেন। আর রাত-দিন কাজ করে চলেছেন দেশের উন্নয়নের মুকুটে নতুন নতুন পালক যুক্ত করতে।

'তলাবিহীন ঝুড়ি'র অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন আর শুধু বাংলাদেশেরই নয়, পুরো প্রাচ্যের বিস্ময় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি আমরা নিজেরা দিইনি। খোদ মার্কিন বহুজাতিক ব্যাংকিং ফার্ম গোল্ডম্যান ম্যাচ যারা বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য আর্থিক সেবা নিয়ে কাজ করছে, তারাই বাংলাদেশের সমকালীন অর্থনীতিকে একেবারে 'প্রাচ্যের আলোচিত' বলে দাবি করেছেন (ঞযব গরৎধপষব ড়ভ ঊধংঃ)। তাদের এই দাবি নিছক ছেলেমানুষি নয়। ক্ষুধা-দারিদ্র্য-মঙ্গাপীড়িত বাংলাদেশ আজ এক উদীয়মান অপ্রতিরোধ্য ব্যাঘ্র। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, শেয়ারবাজার ধস, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কোনো কিছুই বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি।

সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাধা অতিক্রম করে আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। বেড়ে চলেছে জিডিপি, গ্রোথ, মাথাপিছু আয়, ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় সবকিছুই। অর্থনীতির সব সূচকই এখন ঊর্ধ্বগামী। আর এই অগ্রগামিতার উত্তাপ যে কেবল সূচক চিত্রেই সীমাবদ্ধ থাকছে তাও নয়। একেবারে দৃশ্যমানভাবে তার অস্তিত্ব বিকশিত হচ্ছে। আর প্রতিকূলতা পেরিয়ে যাওয়া এই অগ্রযাত্রাকেই হয়তো মূল্যায়নকারীরা অলৌকিক বিস্ময়কর বলতে চাচ্ছেন। সত্যিই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। সারাদেশ ঘুরে কোথাও এখন আর তেমনভাবে সেই জীর্ণশীর্ণ কুঁড়েঘর, ক্ষুধাতুর অস্থিচর্মসার মানুষ, বুড়ো হালের বলদ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়তো সাময়িকভাবে নিম্নবর্গীয় জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। কিন্তু তা সামলিয়ে উঠতেও খুব বেশি সময় লাগে না। যে জনজীবনের সঙ্গে একদা দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা, মন্বন্তর শব্দগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল সেই জনজীবন এখন অনেক বেশি সুখকর, স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ। তাই বলে এখনো পুরোপুরি দাবি করার সময় আসেনি যে আমরা শতভাগ সুরক্ষিত। শতভাগ নিরাপদ। তবে আমরা এতটুকু দাবি করতেই পারি যে, প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় এবং আমাদের সমান্তরালে অবস্থিত বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমরা অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থান অর্জন করেছি।

ভারতের মতো আর্থিক ক্ষমতাধর দেশে এখনো যেখানে ষাট লাখের বেশি নরনারী খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়, ডুয়ার্সের চা বাগানে এখনো যেখানে কথিত ডাইনি পুড়িয়ে মারা হয়, তখন বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করছে। উন্নয়নের আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে যে বাংলাদেশ-ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে সে সাক্ষ্য স্বয়ং ভারতীয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনই দিচ্ছেন। আর পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনার তো প্রশ্নই ওঠে না। খোদ উপসনালয়ে যেখানে অনিরাপদ, সেখানে উন্নয়নের প্রশ্ন কতটুকুই বা প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আরেকটি প্রমাণ দিক হলো এই উন্নয়ন কোনো আকস্মিক উন্নয়ন নয়। মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার আকাশে হঠাৎ আলোর ঝলকানি নয়, কিংবা পান্ডুর বিবর্ণ দেহে ক্ষণিকের ঔজ্জ্বল্য নয়। এই উন্নয়ন সুপরিকল্পিত, ধারাবাহিক এবং টেকসই। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসের (গউএ) সিঁড়ি বেয়ে আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলসের (ঝউএ) দিকে। রূপকল্প ২০২১-এর যে অভীষ্ট, একুশ শতকের তৃতীয় দশকের শুরুতেই মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়াথ তা সম্ভবত আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করতে সক্ষম হবো। তার সুলক্ষণগুলো ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে গ্রোথ রেট ৭-এর উপরে ধরে রেখেছে। আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি ২৫০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে এই অগ্রযাত্রা ২০২১-এ গিয়ে ৩২২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। অসংখ্য বিনিয়োগ সুবিধা সৃষ্টি হবে। বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যআয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদন মতেই বাংলাদেশে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে, জন্মহার কমেছে, যা নির্ভরতা হার কমাতে এবং মাথাপিছু আয় বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারনির্ভর অর্থনীতি আজ সাধারণ বিচারে বিশ্বের ৪৪তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্যের (চঁৎপযধংরহম চড়বিৎ চধৎরঃু) বিচারে বিশ্বের ৩২তম অর্থনীতি। পরবর্তী এ দেশে (ঘবীঃ ১১) উদীয়মান বাজার অর্থনীতির তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (ওগঋ) হিসেব মতে বাংলাদেশ তার ৭.১% প্রবৃদ্ধিসহ বিশ্বের দ্বিতীয় দ্রম্নততম বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এ দেশের অর্থ খাত এখন উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থ খাত। আইএমএফের তথ্য মতেই বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় প্রায় ২০০০ ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশ বর্তমানে কমনওয়েলথ, উ-৮ অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন, সার্ক, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সুযোগ্য সদস্য হিসেবে উন্নয়নের সোপান বেয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করতে গিয়ে পরিদর্শন বইয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এবং এর পেছনে বঙ্গবন্ধু রক্ত ও রাজনীতির সুযোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশের এই অসামান্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন দৈবযোগে সংঘটিত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে এদেশের মানুষের স্বপ্নসাধ, অসংখ্যের শ্রম-ঘাম, আর একটি সুদক্ষ সরকারের নেতৃত্ব, বিশেষ করে সেই সরকার প্রধানের দৃঢ়তা, আন্তরিকতা, স্বাপ্নিকতা এবং দেশপ্রেম। সত্যিই আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের উপাখ্যানে জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানের জুড়ি মেলা ভার। শেখ হাসিনা আজ কেবল বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেলই নন, তিনি আজ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন-রাজনীতির রোল মডেল। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক।

শেখ হাসিনা তার অনুপম ব্যক্তিত্ব, গতিশীল চৌকস নেতৃত্ব, কর্মদক্ষতা, মেধা ও ব্যক্তিগত ক্যারিশমা দিয়ে নিজ দলে নিজেকে বিকল্পহীন হিসেবে এবং দেশে ও দেশের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। দীর্ঘবছর ধরে নিজের দলকে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে এসে আবারও তিনি নবমবারের মতো নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত কাউন্সিলে একদিকে যেমন তার দলের নেতাকর্মীরা তাকে আমৃতু্য পার্টিপ্রধান হিসেবে কাজ করে যাওয়ার ম্যান্ডেট দিয়েছে, তেমনি বহির্দেশীয় অতিথিরাও তার আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কথা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন।

জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত প্রমাণ করে চলেছেন, তিনি কেবল তার দলের জন্যই নয়, তিনি তার দেশের জন্যও এক অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু যেমন আওয়ামী লীগের মধ্যদিয়ে দেশবাসীকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার দিকে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন; সাড়ে সাত কোটি মানুষকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছিলেন, তার রক্ত ও রাজনীতির সুযোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি ষোল কোটি মানুষকে নিয়ে সবসময় ভাবছেন। ভয়াল করোনা- সংক্রমণের এই বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কালেও তিনি ভার্চুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমে রাত-দিন দেশবাসীর ভালোমন্দের খোঁজখবর রাখছেন। বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীনতা। শেখ হাসিনা দিচ্ছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। এই জায়গায় পিতা-পুত্রীর অবস্থান পরস্পরের পরিপূরক। আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন যে প্রাচ্যের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে তার পেছনে কাজ করছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এবং তা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশবাসীর- তৎপরতা। এই তৎপরতার সাফল্য অনিবার্য।

জননেত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তার প্রতি দেশবাসীর শুভেচ্ছার ফল্গুধারা প্রবাহিত হচ্ছে। এই নশ্বর জগৎ ও জীবনের কাছে তার হয়তো চাওয়ার কিংবা পাওয়ার আর তেমন কিছু নেই। এক নৃশংসতম ঐতিহাসিক বর্বরতায় যিনি জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোকে হারিয়েছেন, তার আর কিইবা প্রত্যাশা থাকতে পারে? তবে এদেশবাসীর এখনো অনেক কিছু পাবার আছে এই মহীয়সী নারীর কাছে।

ড. রাশিদ আসকারী: বাংলা-ইংরেজি লেখক, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ৎধংযরফধংশধৎর৬৫@ুধযড়ড়.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100594 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1