মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

নতুনধারা
  ৩০ মে ২০২০, ০০:০০

বিভিন্ন সময়েই মানব পাচার সংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এছাড়া অবৈধভাবে বিদেশ গমনসহ নানা কারণে নৃশংস ঘটনাও উঠে এসেছে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে। সম্প্রতি জানা গেল, লিবিয়ায় ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি। অন্য চারজন আফ্রিকান অভিবাসী। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, লিবিয়ার মানব পাচারকারী এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা ওই ৩০ অভিবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। ওই পাচারকারী আগেই মারা গেছেন। আর সেই মৃতু্যর দায় এই অভিবাসীদের ওপর চাপিয়েছে তার স্বজনরা। তার প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, এমন নৃশংস ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ড স্বাভাবিকভাবেই স্তম্ভিত করে দেয়। এখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যত দ্রম্নত সম্ভব এর পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যদিও লিবিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মিজদা শহরের নিরাপত্তা বিভাগকে দোষীদের গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এই গণহত্যার পেছনে উদ্দেশ্য যা-ই থাক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অনুমতি কারোরই নেই এমন বিষয়ও খবরে উঠে এসেছে। এছাড়া এমনটিও জানা গেছে, বাংলাদেশিসহ ওই অভিবাসীদের মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রেখেছিল একটি মানব পাচারকারী চক্র। একপর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন অভিবাসীরা। এতে এক পাচারকারী মারা যান। এর প্রতিশোধ নিতেই তার পরিবারের লোকজন এ হত্যাকান্ড ঘটায়। আমরা বলতে চাই, এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, গাদ্দাফি পরবর্তী গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত লিবিয়ার অর্থনীতি তেলনির্ভর। কাজের সন্ধানে এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ থেকেই তরুণরা অবৈধ পথে দেশটিতে পাড়ি জমায়। একপর্যায়ে তাদের বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপের কোনো দেশে যাওয়া। এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার পুরো রুটে মানব পাচারকারী বিশাল চক্র সক্রিয় রয়েছে বলেও জানা যায়। আমরা মনে করি এই বিষয়গুলোকে আমলে নিতে হবে এবং এ ধরনের নৃশংস ও মর্মান্তিক ঘটনা রোধে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে বলা দরকার, ২৬ জন বাংলাদেশি হত্যাকান্ডের শিকার হলো- এই বিষয়টি বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনসংখ্যাবহুল আমাদের এই দেশের বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে। যাদের নিরাপত্তার বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া অনেকেই অবৈধভাবে বিদেশ গমন করতে গিয়ে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এমন বিষয়ও আলোচিত যে, মানব পাচারকারী চক্রের প্রলোভনে অনেকে অবৈধভাবে বিদেশগমন করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে আসে। অনেকে ফিরেও আসে না। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিকভাবে এর ভয়াবহতা বিবেচনায় নিতে হবে। একই সঙ্গে মানব পাচাকারীর প্রলোভনে দেশের কেউ যেন না পড়ে, অবৈধ পথে গমন থেকে বিরত থাকে এসব বিষয়কে সামনে রেখে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার, লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করার চেষ্টা করে আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এদের মধ্যে বহু বাংলাদেশিও রয়েছে। আর মানব পাচারকারীদের মাধ্যমেই তারা ভূমধ্যসাগরের ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দেয়। আর এ ক্ষেত্রে এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বহু বাংলাদেশির সলিল সমাধিও হয়েছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে যেন বৈধ পথে জনসম্পদ রপ্তানি করা হয় সেই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে প্রবাসে যারা কাজ করছে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিতে হবে। এছাড়া মানব পাচারকারীরা যেন দেশের মানুষকে তাদের প্রলোভনের শিকার বানিয়ে সর্বস্বান্ত করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি- এই বিষয়টি আমলে নেওয়াসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100597 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1