শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

করোনার বিস্তার ও জনসাধারণ

নতুনধারা
  ৩১ মে ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস। চীনে সর্বপ্রথম ধরা পড়লেও বিশ্বের প্রায়ই দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, করোনাভাইরাস আসছে বা এসেই গেছে আমাদের শহরে, আমাদের গ্রামে। এভাবে প্রথমে দু-একজন করে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাই। যেমনটা রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু বিগত কয়েকদিনের মধ্যেই এই সংখ্যা দ্রম্নত বাড়তে থাকে। আর শুরুতেই উপসর্গ দেখে অনেক সময় বোঝা কঠিন যে এটি ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আত্মসচেতনতা খুবই জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলার জন্য বলা হয়। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হয়ে নাক-মুখের সাবধানতার জন্য সচেতন থাকতে হবে। রোগ বিস্তার যেন বন্ধ হয় তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে হবে, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ রয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতার ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা হয়। এর বাস্তবতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ অবস্থায় এই ভাইরাসের সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে 'সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮'-এর কঠোর প্রয়োগ জরুরি। মূলত যে কোনো সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে মানুষ যেন নিজে বাঁচার পাশাপাশি অন্যকে সংক্রমিত না করতে পারে সে লক্ষ্যে আইনটি করা হয়। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮-এর ১১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিধিনিষেধ ভঙ্গকারীদের এই আইনের অধীনেই বিচারের আওতায় আনা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উলেস্নখ করা হয়। জনস্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে ''সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮' প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই আইনে কারাদন্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তার কাছে গোপন করেন তাহলে ওই ব্যক্তির ওই কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। আবার যদি কোনো ব্যক্তি-মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন সে ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। আবার যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন সে ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদন্ড, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী, কোনো অস্থায়ী বাসস্থানের বা আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিংয়ের মালিক যদি জানতে পারেন যে তার ওই স্থানে থাকা কেউ এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তবে অবশ্যই সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসককে জানাতে হবে। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম মানতে হবে, অর্থাৎ তার অধীনে কোনো সংক্রামক রোগীর চিকিৎসা হলে, সিভিল সার্জনকে রোগী সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য দিতে হবে। এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৬৯, ২৭০ ও ২৭১ ধারায় সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে। এদিকে কয়েক দফা লকডাউন ঘোষণার পর জনজীবন সচল রাখতে বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। ফলে অনেক স্থানেই হাট-বাজার, ব্যবসা-কেন্দ্র, দোকান-পাট খোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সবখানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। খুলেছে শত শত পোশাক কারখানা, ফুটপাতে বেচাকেনা। ফলে সবখানে জনসমাগম বাড়ছে। শর্তসাপেক্ষে বাস্তবতার নিরিখে যদিও দোকান-পাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তবুও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। সড়কগুলোতে মানুষের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। এছাড়া রিকশা, ইজিবাইকসহ ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিধিগুলো ঠিকভাবে মেনে চলছে না। আইন অমান্য করে যাচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ। ভিড় লেগে আছে হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ প্রায় জায়গায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধার মুখেও নানা অজুহাতে মানুষ কখনো একলা, কখনো কয়েকজন একসঙ্গে বিনা প্রয়োজনে ঘুরতে বের হচ্ছেন। শুরু থেকেই এখানে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। আর এবার লকডাউন পুরোপুরিভাবে তুলে দেয়া হলো। এমন পরিস্থিতিতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

মো. সাইফুদ্দীন খালেদ

আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100704 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1