বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশের ভারসাম্য জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে

নতুনধারা
  ০৬ জুন ২০২০, ০০:০০

সারা বিশ্বই বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃতু্যর সংখ্যাও। আর কোভিড-১৯ এর তান্ডবে যখন সারা বিশ্বের মানুষ বিপর্যস্ত তখন প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, গত চার মাস ধরে পৃথিবীর মানুষ একপ্রকার ঘরবন্দি। জীবনযাপনের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত। কিন্তু প্রকৃতির ওপর চালানোর অবিচার কমে এসেছে, আর এজন্য প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ। ফিরেছে স্বমহিমায়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। এবারে করোনা মহামারির কারণে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২০-এর প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'জীববৈচিত্র্য'। আর জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির এ বছরের স্স্নোগান হচ্ছে 'ইটস টাইম ফোর নেচার অর্থাৎ সময় এখন প্রকৃতির। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের বসবাসকে অর্থবহ ও সুন্দর-স্বাভাবিক রাখতে জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জীববৈচিত্র্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে আমরা মানবজাতি বুঝে বা না বুঝে নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করছি এটা মনে রাখতে হবে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বিশ্বব্যাপী মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় সংকটের বিষয়কে সামনে রেখে এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পরিবেশ বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন আঙ্গিকে ভাবনার বিষয় হয়ে উঠবে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে।

মনে রাখা দরকার, প্রকৃতির প্রতি অবিচার করলে প্রকৃতি প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। কেননা জলবায়ু, পরিবেশ এবং মানুষ একে অন্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব কিছুই পায় পরিবেশ থেকে। অথচ আবার এই মানুষই প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে সব থেকে বেশি ক্ষতি করে পরিবেশের। আর এটা বলাই বাহুল্য, জলবায়ু থেকে শুরু করে নানাভাবে প্রকৃতির ওপর মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে অবিচার করছে, বনাঞ্চল উজাড় করে দিচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য থেকে শুরু করে নানান কারণে প্রকৃতির ক্ষতি করছে এমন আলোচনাও বারবার সামনে এসেছে। মনে রাখতে হবে, মানুষ যতই আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে, পরিবেশের উপরে ততই চাপ পড়ছে। ফলে বাড়ছে কল-কারখানার কালো বিষাক্ত ধোঁয়া এবং বর্জ্য। এছাড়া বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য, বাসস্থান এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে বনাঞ্চল, নদী-নালা, খাল-বিল। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব স্থানে বসবাস করা বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় বন্যপ্রাণী, যার প্রভাব এড়ানোর কোনো উপায় নেই।

আমরা উলেস্নখ করতে চাই, বর্তমানে করোনার আতঙ্কে মানুষ দিশাহারা। আর এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষার যে তাগিদ দুনিয়াব্যাপী আলোচিত হচ্ছিল, মানুষের অতিপ্রয়োজনীয়তা তাতে বাদ সাধছিল। আর করোনা মানুষের সেই অতিপ্রয়োজনীতা কমিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করছে। যেমন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঢাকার বাতাসে যেমন কমেছে সিসার বিষ, তেমনি শব্দের দূষণও কমেছে। ফলে আমরা মনে করি, করোনাকালের এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে হবে। বিশ্ব নেতৃত্ব তথা সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে, বনাঞ্চল ধ্বংস করে, জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। কেননা এটা করলে মানুষ তার নিজের বিপদ নিজেরাই বয়ে আনবে এমন বিষয়ও আলোচনায় আসছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জাতিসংঘ বলেছে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করায় আমাদের পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট হচ্ছে না, আমরা এর মাধ্যমে আমাদের জীবনকে ধ্বংস করছি। সঙ্গত কারণেই মানুষের বসবাসের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা যে কতটা জরুরি তা অনুধাবন করতে হবে। এমনকি কোভিড-১৯ সেই শিক্ষা দিচ্ছে এমনটি উলেস্নখ করে জাতিসংঘ বলছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করলে শুধু খাদ্যেরই জোগান পাব না বরং ওষুধসহ নির্মল পানি এবং বাতাস পাব। যা মানুষের সুস্থতার বড় অনুষঙ্গ হতে পারে। ফলে সামগ্রিক এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা তথা পরিবেশ সুন্দর রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখা অপরিহার্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101368 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1