চট্টগ্রাম মহানগরীর দশ ওয়ার্ড ও জেলার ১১টি উপজেলাকে রেড জোন ঘোষণা করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে লকডাউন চলছে। এ অবস্থায় আমরা মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্তের কাতারে নেমে গেছি। ঘরে খাবার নেই, চক্ষুলজ্জায় হাতও পাততে পারছি না। অন্যদিকে ভাড়া পরিশোধের জন্য বাড়ির মালিকের চাপ, জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদের। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের অনেকে বেতন পাচ্ছেন না। সঞ্চিত অর্থ শেষ, আছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়। সরকারের কোনো প্রণোদনার মধ্যেও নেই মদ্যবিত্তরা। ফলে চলমান করোনা মহামারিতে মহাসংকটে পড়েছেন বাংলাদেশে 'গৃহবন্দি' অনেক মধ্যবিত্ত।
'মধ্যবিত্ত' নামে একটি শব্দ আছে। না ওপরে। আবার নিচেও না। মাঝামাঝি এদের অবস্থান। এজন্য নামটি 'মধ্যবিত্ত'। বাংলাদেশে মধ্যবিত্তরা ভয়াবহ সংকটে আছেন। মধ্যবিত্তের কিছু সঞ্চয় থাকে। এর আগের লকডাউনে সেই সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া শেষ। আর সঞ্চয় নেই। কি হবে আমাদের। বিপুলসংখ্যক মধ্যবিত্ত এই পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছেন। করোনার এই দুঃসময়ে সুখী থাকার অভিনয় করাটা অনেক দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্তের জন্য। আমাদের 'নীরবে ভিজে যায় চোখের পাতা। কষ্টের আঘাতে বেড়ে যায় বুকের ব্যথা, জানি না এভাবে কাটাতে হবে কত দিন?
করোনাকালের এই দুঃসময়ে চরম দুর্দিনে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবার। সীমিত আয়ে যাদের জীবনযাপন করতে হয়। ছোট চাকরি, ছোট ব্যবসা। কিন্তু স্বপ্ন অনেক বড়। ছোট বাসায় থাকে অনেকে। মাস শেষে বাড়িভাড়া, বাজার খরচ, সন্তানদের স্কুলের বেতন, আনুষঙ্গিক আরও অনেক খাতে খরচ করতে হয়। কোনো কারণে পাঁচ-সাত দিন আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হলেই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে নেমে আসে অশান্তি। সেখানে অনির্দিষ্টকাল ধরে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের আয়-রোজগার বন্ধ।
\হসরকারি চাকরিজীবী মধ্যবিত্তরা হয়তো একটু নিরাপদ আছে। কিন্তু তারা তো সংখ্যায় কম। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার পড়েছে অথই সাগরে। একে তো করোনার ভয়, উপরন্তু আর্থিক অনিশ্চয়তা। আয়-রোজগার বন্ধ। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে অস্থির করে তুলেছে।
করোনার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নআয়ের লোকজনদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা রয়েছে, দেওয়া হয়েছে বরাদ্দও। দেশের এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছেন সমাজের অনেক বিত্তবানরাও। নিম্নআয়ের লোকজন ভয়-সংকোচ দূরে ঠেলে সাহায্যের ব্যাগটা হাত বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
কিন্তু নীরবে না খেয়েও মুখে হাসি নিয়ে দিব্যি দিন কাটিয়ে যাচ্ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আবেগে কিংবা আকার ইঙ্গিতে সেই কষ্টের কথা পোস্ট করলেও সহযোগিতা নেওয়ার বেলায় বিপরীত। বিবেক তাদের মোটেও সায় দেয় না। গরিবরা পাচ্ছে ভাতা, বড়লোকদের একবছর লকডাউনে কোনো সমস্যা হবে না, দেয়ালে পিঠটা মধ্যবিত্তদের ঠেকেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা আছেন তাদের প্রতি মাসে গড়ে একটা খরচ হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে করোনা মহামারি চলছে তাতে সবাই সুস্থ থাকার তাগিদে সব কিছুই লকডাউন ও রেড জোনের আওতায় রয়েছে। কিন্তু খরচ চলমান। এই অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবার যাতে দু মুঠো খেয়ে বাঁচতে পারে সরকার যথেষ্ট প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উপায়ে যে উপহার সামগ্রী মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চলমান তাতে ২০-৫০ হাজার টাকা জোগান দেওয়া কোনো কারণে সম্ভব নয়। যেহেতু ঘরভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, দোকান ভাড়া ইত্যাদি চলমান রয়েছে। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন, মহামারি যতদিন চলবে ততদিন সমপরিমাণ আর্থিক ঋণ (স্বল্প সুদে দীর্ঘ কিস্তিতে) দেওয়া হয়, তাতে আমাদের অনেক উপকার হবে বলে আমি মনে করি। আমরা সেই ঋণ আস্তে আস্তে পরিশোধ করতে থাকব। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য যে উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় তা যেন নিম্নবিত্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, তাতে তাদের আর কয়টা দিন ভালো কাটতে পারবে। মধ্যবিত্ত পরিবার চায় নিম্নবিত্ত অভূক্ত না থাকুক। উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক ওই ঋণপ্রদানের সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটি সদস্য চির কৃতজ্ঞ থাকব।
মিন্টু দে : কলাম লেখক