শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চালকরা এখনো বেপরোয়া

সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামান
নতুনধারা
  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের পর আইন সংস্কারসহ সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া সত্তে¡ও কিছুতেই থামছে না সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যু। এখনো বেপরোয়াগতিতে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন চালকরা। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত ও গত রোববার দেশের ছয় জেলায় সড়কে প্রাণহানি ঘটেছে ১৮ জনের। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৯০ জন। রাজধানীর মিরপুর বেড়িবঁাধে জব্দ করা বাস থানায় আনার সময় ওই বাসের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ কমর্কতার্। সবচেয়ে বড় দুঘর্টনাটি ঘটেছে রংপুরে। সেখানে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘষের্ শিশু, নারীসহ সাতজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩০ জন। এর আগে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পযর্ন্ত কয়েকটি জেলায় সড়ক দুঘর্টনায় ঝরে গেছে ১০ প্রাণ। যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে আগস্ট মাসে ঈদুল আজহার আগে-পরে ১৩ দিনে সড়ক দুঘর্টনায় নিহত হয়েছেন ২৫৯ জন। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। সড়ক দুঘর্টনার এই চিত্র নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। দুঘর্টনার সাবির্ক চিত্র যে উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই নিদের্শ করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তথ্য অনুযায়ী, রোববার দুপুরে রংপুরের সিও বাজার এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘষের্ সাতজন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়। প্রত্যক্ষদশীর্র সূত্রে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পঞ্চগড়গামী বিআরটিসি বাসের সঙ্গে দিনাজপুর থেকে রংপুর আসা একটি গেটলক বাসের সংঘষের্ এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রীতের মতে, বিআরটিসি বাসের চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই দুঘর্টনা ঘটে। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট লেভেলক্রসিংয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসকে ট্রেন ধাক্কা দিলে দুজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। লেভেলক্রসিংয়ের গেটম্যান এ সময় ঘুমিয়ে ছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বগুড়ার শেরপুরে পৃথক দুটি সড়ক দুঘর্টনায় তিনজন নিহত হয়েছে। আর রাজধানীর মতিঝিলে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে দুই মোটরসাইকেলের আরোহী, বিমানবন্দর এলাকায় সড়ক দুঘর্টনায় এক ব্যক্তি এবং মিরপুরে পুলিশ কমর্কতার্ নিহত হন। এ ছাড়া রোববার সকালে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অটো বাইকের ধাক্কায় এক ব্যক্তি, চট্টগ্রামের সীতাকুÐে ট্রাকচাপায় এক নারী এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় বাসচাপায় এক নারী নিহত হন। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে চালকের বেপরোয়া মনোবৃত্তির পাশাপাশি মানুষের অসচেতনতার বিষয়টিও উঠে এসেছে।

আমরা মনে করি, সড়ক দুঘর্টনা রোধে চালকের বেপরোয়া ও যানবাহন চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মনোবৃত্তির অবসান ঘটাতে হবে। পাশাপাশি চালককে হতে হবে প্রশিক্ষিত। ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন দুঘর্টনার অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত। এগুলো যাতে সড়কে চলাচল করতে না পারে সে ব্যাপারে নিতে হবে কঠোর উদ্যোগ। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কাযর্ক্রম চালাতে হবে। যত্রতত্র রাস্তা পারাপার না হয়ে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের জন্য সাধারণকে সচেতন করতে হবে। আইন অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথা সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। দেশের সড়ক-মহাসড়কে যে হারে মৃত্যুর মিছিল দীঘাির্য়ত হচ্ছে, তা কারো কাম্য হতে পারে না।

জানা গেছে, বতর্মান সরকার নতুন নতুন সড়ক অবকাঠামো নিমার্ণসহ সড়ক-মহাসড়কের প্রভ‚ত উন্নয়ন সাধন করেছে। সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা-২০৪১ সামনে রেখে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো ‘উন্নয়ন মহাসড়কে’ উঠেছে বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন ২০৩০ অনুযায়ী দেশে সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতেও সরকারের প্রতিশ্রæতি আছে। অথচ, প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে তরতাজা প্রাণ। আমরা বলতে চাই, সড়কে মৃত্যুর মিছিলই যদি থামানো না যায়, তাহলে সরকারের ‘সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন’ সাফল্য জনগণের কোনো কাজেই আসতে পারে না। এর জন্য সবাের্গ্র প্রয়োজন সড়কে প্রাণহানি রোধে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেয়া।

সবোর্পরি বলতে চাই, সড়ক দুঘর্টনা নিয়ে এ যাবত কম কথা বলা হয়নি, লেখালেখিও কম হয়নি। বাস্তবতা হলো, সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ থাকা সত্তে¡ও দুঘর্টনা কেন রোধ করা যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে দুঘর্টনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তা রোধ করা জরুরি। সংশ্লিষ্টরা এমন পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক যাতে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, দেশবাসীর প্রত্যাশা এমনটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<10466 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1