শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

করোনায় সংকট বাড়ছে গ্রামেও

নতুনধারা
  ১০ জুলাই ২০২০, ০০:০০

সারা বিশ্বই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি। বলার অপেক্ষা রাখে না, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিও টালমাটাল হয়ে পড়েছে। দেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা। নগরজীবন যেমন বিপর্যস্ত হচ্ছে করোনার থাবায়, তেমনিভাবে সংকট বাড়ছে গ্রামেও। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে জানা গেল, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় আয় কম ও কাজ হারিয়ে রাজধানীর অসংখ্য নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন। কেউ সপরিবারে আবার কেউ স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়ে শুধু নিজে রয়ে গেছেন ঢাকায়।

সঙ্গত কারণেই আমরা বলতে চাই, এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ জনপদে কর্মসংস্থান হারিয়ে ঘরেফেরা মানুষের সংখ্যা যখন দিন দিন বেড়েই চলছে- তখন বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। জানা যাচ্ছে, জীবিকার কোনো উৎস না থাকায় গ্রাম ছেড়ে একদিন রাজধানীতে আসা মানুষের চাপ গ্রামগুলো কতটুকু নিতে পারবে তা কেউই ভাবেনি এবং এর পাশাপাশি করোনা সংক্রামণও গ্রামগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবমিলিয়ে গ্রামে আয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকার সঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, শিক্ষাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণ নিয়ে সংকট শুধু বাড়ছেই। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করা।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে। কোনোটি এখনো বন্ধ, কোনোটি চালু হলেও হয়েছে অনেক ছোট পরিসরে। ফলে অনেক কর্মীকেই চাকরি হারাতে হয়েছে বা হচ্ছে। ছোটখাটো ব্যবসা করতেন এমন অনেকে গত তিন মাসের লোকসান সামলে উঠতে পারছেন না- যাদের বড় একটা অংশ শহর ছেড়ে যাচ্ছেন। ফলে সংকট যে ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন যে, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২ হাজার ৩৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে সম্প্রতি ব্র্যাক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যারা কাজ করেন, তাদের ৬২ ভাগই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। করোনার কারণে ১০টি জেলার মানুষের আয় কমে গেছে। এ ছাড়া ঢাকা জেলার মানুষের আয় কমেছে ৬০ ভাগ। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন জরিপে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন এমনটিও জানা গেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই সংকট নিরসনের উপায় খুঁজতে হবে।

বলা দরকার, এর আগে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল, করোনা মহামারির মুখে দেশে বেকার হয়ে পড়া নিম্ন-আয়ের অনেক মানুষকেই পথে পথে সাহায্য চাইতে বা ভিক্ষা করতেও দেখা গেছে। আর এখন স্থায়ীভাবে বিভিন্ন গ্রামে থাকা মানুষ বলছেন, গ্রামে এরই মধ্যে সংকট শুরু হয়ে গেছে। স্থায়ীভাবে অসংখ্য মানুষ গ্রামে আসায় নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আয়ের উৎস। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, গ্রামে ব্যয় কম হলেও একেবারে আয় ছাড়া চলা সম্ভব নয়। আমরা বলতে চাই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সচেতনতা এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। পাশাপাশি এর প্রভাব বিবেচনায় রেখে উদ্যোগী হতে হবে। যখন গ্রামেও ক্রমাগত সংকট বাড়ছে, মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরছে এবং আয়ের উৎস নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।

মনে রাখা দরকার, কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জনপদের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। এরপরই রয়েছে প্রবাসী আয়। যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় অর্ধেক মানুষ। কিন্তু করোনায় চরম বিপাকে পড়েছেন গ্রামাঞ্চলের কৃষক থেকে শুরু করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের চলমান প্রভাবে মানুষ গ্রামমুখী হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাড়ছে সংকট। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের জরিপ বলছে, করোনার কারণে দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। আবার চাকরি হারানো মানুষ গ্রামমুখী হচ্ছেন, ফলে গ্রামে কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105301 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1