বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম বর্ণবাদ

জর্জ ফ্লয়েডকে যেভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পুলিশ, তার বিরুদ্ধে সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব শ্রেণির মানুষ ফুঁসে উঠেছে। বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে আমেরিকা। তবে যারা বেরিয়েছে ঘর থেকে, সবাই প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে বের হয়নি। কেউ কেউ বেরিয়েছে ভায়োলেন্স করতে, কেউ কেউ বেরিয়েছে দোকানপাট লুট করতে। যে কোনো আন্দোলনেই এমন কিছু অসৎ লোক থাকেই, যারা মিছিলে যায় না, যারা মূলত দোকানপাট লুট করতে যায়।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ১১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণের পর নিজ দেশে এবং দেশের বাইরে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে নানা রকম ইসু্য সৃষ্টি করে চলেছেন। এই সৃষ্ট ইসু্যসমূহ তাকে আগামী দিনে দেশের নির্বাচন বা তার নিজের প্রার্থিতার ক্ষেত্রে কতটা এগুতে সাহায্য করবে- তা বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে। সুবিধা হয় তার পক্ষে আসবে, না হয় তার প্রতিপক্ষের অনুকূলে চলে যাবে। আজকের জগতে এ রকম চাল চেলে অনেকেই কিন্তু তার প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করে থাকেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি এ জাতীয় কোনো মানসিক তাগিদ বা বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে বিশিষ্টজনের কাতারে আসতে চান? তবে বিশিষ্টজনের বিবেচনায় ট্রাম্পের পক্ষ থেকে নেওয়া এ যাবতকালে সবকটি সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যর্থতা যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই মিনিয়াপোলিসে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের 'হত্যাকান্ড' সারাদেশে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে আবারও উসকে দিয়েছে। নিউইয়র্ক, শিকাগো ও ওয়াশিংটন ডিসির মতো বড় বড় শহরে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎকে একটা প্রশ্নের মাঝে ফেলে দিয়েছে। এই আন্দোলন ইতিমধ্যে ইউরোপের অনেক দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং সমর্থন পেয়েছে। শুধু একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে এ ধরনের একটি আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে- যা সারা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে গেছে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। প্রথমত, চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেভাবে শ্বেতাঙ্গ প্রভাবকে প্রভাবিত করেছেন, তাতে করে একদিকে কৃষ্ণাঙ্গরা, অন্যদিকে এশীয় ও হিসপানিক বংশোদ্ভূতরা এক ধরনের আতঙ্কে ভুগছেন। তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তাদের যে অধিকার দিয়েছে, ট্রাম্প সে অধিকারের ওপর আঘাত হেনেছেন। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও বিস্ফোরণের মূল কেন্দ্র হচ্ছে ট্রাম্পের এহেন অনুদার ও কট্টরপন্থি নীতি।

বর্ণবাদ যুক্তরাষ্ট্রের একটা পুরনো ব্যাধি। জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকান্ড এর সর্বশেষ উদাহরণ। টিভির বদৌলতে সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের উপর হাঁটু চেপে ধরে একজন শ্বেতাঙ্গ অফিসার কীভাবে শ্বাসরোধ করে 'খুন' করেন ফ্লয়েডকে। ফ্লয়েডের মৃতু্যকে কেন্দ্র করে দ্রম্নত আগুনের ফুলকির মতো ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। শুধু কৃষ্ণাঙ্গরাই যে আজ ইষধপশ খরাবং গধঃঃবৎ-এর ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে তেমনটি নয়, বরং শ্বেতাঙ্গরাও এই বিক্ষোভে শরিক হয়েছে। পরিস্থিতি এমন চরমে উঠেছিল যে, একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের নিরাপদ আশ্রয়ে তাকে অবস্থান নিতে হয়। বর্ণবাদ আজ যেখানে সভ্য সমাজে ধিকৃত ও ইতিহাসের দাসপ্রথার কলঙ্ক হিসেবে বিবেচিত তখন ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক এই অসভ্য আচরণ করে চলেছে। এর বিপরীতে কার্ফু ভেদ করে সিয়াটল থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, করোনা মহামারিতে এখনো পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃতু্য ঘটেছে আমেরিকায়। অথচ সবচেয়ে বেশি সামরিক বাজেটের এই দেশে করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ পেন্টাগনের এক ঘণ্টার বরাদ্দের চেয়েও কম। এই চিত্রই আজ প্রমাণ করে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকাতেও দরিদ্র মানুষ কতটা অসহায়। পুঁজিবাদ যত শক্তিশালী হয়, মুনাফা যত তীব্র হয় সাধারণ মানুষের ওপর এর শোষণ তত বেশি হয়, মনুষ্যত্ব-মানবিকতা তত ধ্বংসের মুখে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গরা বরাবরই উপেক্ষিত। তাদের চাকরির বাজার সীমাবদ্ধ। বেকারত্বের হার তাদের মাঝে বেশি। কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মাঝে আয়ের ক্ষেত্রে বড় রকমের বৈষম্য আছে। সমাজের শীর্ষ পদগুলো শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্যই অলিখিতভাবে নির্ধারিত। কৃষ্ণাঙ্গদের সেখানে কোনো প্রবেশাধিকার নেই। এতে করে কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। এই ক্ষোভটি বারবার এ ধরনের আন্দোলনের জন্ম দেয়। যদিও এটা ঠিক, ৩০ কোটির অধিক জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর আধিক্য বেশি, শতকরা ৭২.৪১ ভাগ, আর কৃষ্ণাঙ্গ মাত্র ১২.৬১ ভাগ। তুলনামূলক বিচারে কৃষ্ণাঙ্গদের 'চাকরির নিরাপত্তা' কম। কৃষ্ণাঙ্গ অসন্তোষ উসকে যাওয়ার পেছনে 'ট্রাম্পের অনেক বক্তব্যও দায়ী। আন্দোলনকারীদের তিনি হুমকি দেন। তিনি এই আন্দোলনকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেখানে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকান্ডে তার সহানুভূতি দেখানোর কথা, সেখানে তিনি তাদের সন্ত্রাসী, এমনকি সেনাবাহিনী নামিয়ে আন্দোলন দমন করার কথাও বলেছেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প প্রশাসনের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েনও আন্দোলনকারীদের 'বহিরাগত জঙ্গি' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য মূল ঘটনাকে আড়াল করার শামিল। এই আন্দোলন ইউরোপসহ অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ট্রাম্পের বর্ণবাদী নীতির ব্যাপারে বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সমর্থন নেই। ট্রাম্প জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন হোয়াইট হাউসে। কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল তাতে অংশ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতিবাচক কথা-বার্তা ও আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে উসকে দিয়েছে। নানারকম আপত্তিজনক ভাষায় তিনি আন্দোলনকারীদের হুমকি দিতে থাকেন। তিনি একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও হিংস্র কুকুর ব্যবহারের হুমকি দিলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ট্রাম্পকে বলেন, আপনি যদি দায়িত্বশীলভাবে কথা বলতে না পারেন তাহলে দয়া করে চুপ থাকেন। কারণ এ আন্দোলন শক্তি দিয়ে থামানো যাবে না। এ আন্দোলন থামাতে হবে হৃদয় দিয়ে। বাস্তবে প্রায় ৪০০ বছর ধরে আমেরিকায় কালো মানুষদের প্রতি চলে আসছে এমন বর্ণবৈষম্য আর নিপীড়নের ঘটনা। ভোটাধিকার, যানবাহনে বসা, জমাজমি ক্রয়েও ছিল চরম বৈষম্য যা অব্যাহত ও দৃশ্যমান ছিল ৬০ এর দশক পর্যন্ত। আমেরিকার সংবিধানের বর্ণিত নাগরিক অধিকারসমূহ সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু আমেরিকা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হলেও নিজের দেশে কালোদের ব্যাপারে ততটা আগ্রহী ছিল না। ভিন্নরূপে হলেও বর্ণবাদ সেখানে ছিল। আমেরিকায় প্রায় ৩০% লোক কৃষাঙ্গ। এর আগেও বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়েছেন অনেকে। আমেরিকার অবিসংবাদিত কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট তার সেই বিখ্যাত 'ও যধাব ধ ফৎবধস' বক্তৃতায় এক বৈষম্যহীন আমেরিকার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। সেই স্বপ্ন কি এবার পূরণ হবে না কি আমেরিকাকে আরো অত্যাচার সহ্য করতে হবে। সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আগামী দিনে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এ হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী দিন আমেরিকা কতটা সফল হবে তা বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে।

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের পর বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এই প্রতিবাদের মহাস্রোতে ঢুকে পড়েছে কিছু লুটেরাও। যারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এখন খুবই সংকটাপন্ন। ইতোমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত চারজন পুলিশের বিরুদ্ধেই চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের পুলিশবাহিনী মাটিতে হাঁটু গেড়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও বিক্ষোভ থামছে না। এর মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক চারজন প্রেসিডেন্ট-জিমি কর্টার, জর্জ বুশ, বিল ক্লিন্টন ও বারাক ওবামা জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। বারাক ওবামা দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জিমি কার্টার ক্ষমতা, সুবিধাজনক অবস্থা আর নৈতিক সচেতনতা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিল ক্লিনটন বলেছেন, জর্জ ফ্লয়েডের মতো মৃতু্য কারও কাম্য নয়। সত্যি কথা হলো, সাদা চামড়ার হলে এমন মৃতু্যর সম্ভাবনা কম। জর্জ ডবিস্নউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ ফ্লয়েডকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। তারা আমেরিকায় পুলিশের দমনপীড়নের ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আমেরিকার অনেক শ্বেতাঙ্গসহ বিশিষ্টজনরাও শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভের পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ইউরোপের চেয়েও খারাপ। জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর প্রতিবাদে বিক্ষোভ এখনো চলছে। বিক্ষোভ চলাকালীন বড় বড় শহরে রাতারাতি কারফিউ আরোপ করতে হয়েছে। কোথাও বা কারফিউ আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও অশান্তি শেষ করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুলিশ হেফাজতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মৃতু্যর ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান নাগরিক অশান্তি রোধে সেনা পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। একবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার মতো জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিল্পকলায় সভ্য দেশে এহেন বর্ণবাদের ঘটনা করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে আমাদের হতবাক করে তুলেছে। এই বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশি ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে। আর বিক্ষোভ প্রশমনের জন্য জনগণকে ন্যায্য বিচার পাওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে।

জর্জ ফ্লয়েডকে যেভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পুলিশ, তার বিরুদ্ধে সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব শ্রেণির মানুষ ফুঁসে উঠেছে। বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে আমেরিকা। তবে যারা বেরিয়েছে ঘর থেকে, সবাই প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে বের হয়নি। কেউ কেউ বেরিয়েছে ভায়োলেন্স করতে, কেউ কেউ বেরিয়েছে দোকানপাট লুট করতে। যে কোনো আন্দোলনেই এমন কিছু অসৎ লোক থাকেই, যারা মিছিলে যায় না, যারা মূলত দোকানপাট লুট করতে যায়।

এদিকে কিছু মিডিয়া শুধু ভাঙচুর, আর জ্বালানো পোড়ানোর কথাই বলছে, লুটের কথাই বলছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলগুলোর কথা বলছে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে শেষ অবধি অন্যায় বলে প্রমাণ করার জন্য ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাম, ডান, সাদা, কালো পরিচয় যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে নিরপেক্ষ থাকাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ। আমেরিকায় বর্ণবাদ আগের চেয়ে অনেক কম এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আগের চেয়ে অনেক বেশি। যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আসলে ইউরোপ আর আমেরিকার সমাজে বর্ণবাদ যেমন সাদারা এনেছে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আইন জারি করা, সমাজ থেকে একে দূর করার আন্দোলন সাদারাই করেছে। সংখ্যালঘুরা একা আন্দোলন করলে কোনো ফল পেত না। ভারতীয় উপমহাদেশে এরকম দৃশ্যই দেখতে চাই। হিন্দুর ওপর অত্যাচার হলে মুসলমান প্রতিবাদ করবে, মুসলমানের ওপর হলে হিন্দু করবে প্রতিবাদ। যে কোনো অন্যায়-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে মানবতা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। আর এই মানবতা-সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই পৃথিবীকে সুন্দর করবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কী করেন বা ভবিষ্যতে কী করবেন তা অনুমান করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সমালোচনার ঝড়ে তিনি বিচলিত নন। তিনি নিজে যেরকম মনে করে থাকেন সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন। আর কারোর মনে করায় ও তার কিছু যায় আসে না। এ যেন এক ব্যতিক্রমী ধারার মানুষ। কোনো ট্রেডিশনাল কৌশলগত দিক বা প্রতিষ্ঠিত ধারণা বা রীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় বোধ হয় তিনি বিশ্বাসী নন। এমনকি তার কোনো নিজস্ব মতাদর্শ থাকলেও প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন কি না সে রকম বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি একজন সুবিধাবাদী, স্বার্থপর ও অভিজাত শ্রেণিবাদী মানুষের প্রতিভূ হিসেবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং একদল অনুসারী ও ভক্ত তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছেন। নিজের ভালোটা বুঝেন শতকরা ১০০ ভাগ। নিজের ওজন ও দলভারী করানোর ক্ষেত্রে ভালোই চাল চেলে থাকেন। অনুমিত হচ্ছে কন্টাক্ট ব্রিজ স্টাইলের খেলায় যেমন ট্রাম মেরে প্রতিপক্ষের কুপোকাত করা বা ধরাশায়ী করে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে তিনি যথার্থই সিদ্ধহস্ত। তবে সাম্প্রতিক চীন-ভারত উত্তেজনার ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে সফল হওয়ার জন্য যে পক্ষের হস্তক্ষেপে সুবিধা আসবে সে রকমটাই তিনি করবেন। তবে ট্রাম্পের ট্রাম চালে চীনের কোনো সম্ভাব্য ক্ষতি বা ঝুঁকিকে চীন কোনোভাবে সামলে নেবে না সেটাও তিনি বুঝেন। এ ক্ষেত্রে তার মধ্যস্থতা কোনো গুরুত্ব পাবে না। আর এ ধরনের তৃতীয় পক্ষীয় কোনো মধ্যস্থতার খেলায় কোনো খেলোয়াড়ের ভূমিকায় তার আসবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে আমেরিকার মতো দেশে মধ্যযুগীয় স্টাইলে বর্ণবাদবিরোধী যে বিষোদ্গার হয়েছে তাতে ট্রাম্প কতটা ভালো বা মন্দ করছেন তা সময়ই বলে দেবে।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। কলামিস্ট ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105418 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1