মাদক বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। মাদকাসক্তি একটি নীরব ঘাতক। এটি মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। এর করালগ্রাসে ধ্বংস হয় পরিবার, সমাজ ও দেশ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের সর্বত্র মাদকের আগ্রাসন এখন অভিশপ্তের ডালপালায় ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশের যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ মাদকের করালগ্রাসে নিমজ্জিত। দেখা যায়, যে সন্তান পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে পারত, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, মেধা ও মনন দিয়ে দেশের গর্বে পরিণত হতে পারত, সেই সন্তান আজ মাদকের স্পর্শে, মাদকের করালগ্রাসে কেবল ধ্বংসই হচ্ছে না, ধ্বংস করে দিচ্ছে একটি পরিবারের কাঙ্ক্ষিত সুখের স্বপ্ন। একটি সুখী পরিবারের সুখ-শান্তি এমনকি সুন্দর একটি স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করার ক্ষেত্রেও মাদকের অগ্রণী ভূমিকা বিশেষভাবে কার্যকর। আজ মাদকের এই নীল ছোবলে দংশিত দেশের তরুণ প্রজন্ম, যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ। মাদকদ্রব্য হলো একটি ভেষজদ্রব্য যা ব্যবহারে বা প্রয়োগে মানবদেহে মস্তিষ্কের সংবেদনশীলতা হ্রাস পায় এবং শরীরে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। মাদকদ্রব্যের বেদনানাশক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, আনন্দোচ্ছ্বাস, মেজাজ খিটখিটে, মানসিক আচ্ছন্নতা, শ্বাস-প্রশ্বাস অবনমন, রক্তচাপ হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও বমি, কোষ্টবদ্ধতা ইত্যাদি দেখা দেয়। মাদকদ্রব্যকে সহজভাবে বলা যায় যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ও যে দ্রব্য আসক্তি সৃষ্টি করে, তাই মাদকদ্রব্য। আর মাদকাসক্তি হলো মানুষের এমন একটি অবস্থা যা ব্যবহারে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর তা ব্যবহার করতে না পারলে নিজের মধ্যে অশান্তি কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তির আচরণ, অভ্যাস এবং চলনে দেখা যায়। হঠাৎ নতুন বন্ধুদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করা। বিভিন্ন অজুহতে ঘনঘন টাকা চাওয়া। আগের তুলনায় দেরিতে বাড়ি ফেরা। রাতে জেগে থাকা এবং দিনে ঘুমের প্রবণতা বৃদ্ধি করা। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর অস্বাভাবিক আচরণ করা। খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেওয়া এবং ওজন কমে যাওয়া। অতিরিক্ত মাত্রায় মিষ্টি খেতে কুরু করা এবং ঘন ঘন চা, সিগারেট পান করা। অযথা টয়লেটে দীর্ঘ সময় ব্যয় করা। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া। প্রচুর ঘুম হওয়া অস্থিরতা এবং অস্বস্তি বোধ করা। যৌন ক্রিয়ায় অনীহা এবং যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। মিথ্যে কথা বলার প্রবণতা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সবসময় মনোমালিন্য লেগে থাকা। অকারণে বিরক্ত বোধ করা। হঠাৎ মনমানসিকতা পরিবর্তন দেখা দেওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদের মধ্যেই মাদকদ্রব্য সেবনের প্রবণতা বেশি। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মাদক একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার মোক্ষম অস্ত্র। তাই মাদকাসক্তি প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য পরিবার, সমাজ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইমরান ইমন
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়