প্রশ্নফাঁসের ঘটনা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত একটি বিষয়। অথচ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু এবং মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বারবার মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে বিশেষায়িত একটি ছাপাখানা থেকে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার- সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চারজনকে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উলেস্নখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাপাখানায় মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়।
তথ্য মতে, সিআইডি জানায়, গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময়ে প্রশ্ন ফাঁসচক্রের মূল হোতা জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধারও করা হয়। আমরা বলতে চাই, এই ধরনের চক্রের তৎপরতা কতটা ভয়ঙ্কর তা আমলে নিতে হবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে অভিযান পরিচালনা ও যথাযথ পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে। সরকার শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করছে- আর এ ক্ষেত্রে যদি এই ধরনের কুচক্রীরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ করে তবে তাদের প্রতি কোনো প্রকার অনুকম্পা নয়, বরং আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এ ঘটনায় করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি, যার মধ্যে গ্রেপ্তার ছিল ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। গত ১৯ জুলাই পুলিশ এসএম সানোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানান তিনি। আমরা বলতে চাই, শিশুদের প্রশ্নপত্র পর্যন্ত ফাঁসের ঘটনাও ঘটেছে- ফলে সামগ্রিক অর্থে প্রশ্নফাঁসের ঘটনাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
এমন খবরও জানা যায়, আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করে আসছিল। মূলত জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ ছাড়া অধিদপ্তরের ক্ষমতাবান কর্তাদের মদদে প্রেস থেকে বহু বছর ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম- এমনটি খবরে উঠে এসেছে, আর তার খালাতো ভাই জসিমের কাজ ছিল সারা দেশে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়া। এজন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও ছিল তার।
আমরা বলতে চাই, এ ধরনের চক্রগুলোকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। আর তা দেশের সার্বিক সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্যও অপরিহার্য। কেননা এ ধরনের চক্রের কর্মকান্ড কতটা ভয়ানক তা সহজেই অনুমেয়। এর আগে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে, রীতিমতো সিন্ডিকেট গঠন করে দুষ্কৃতকারীরা একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে এই ধরনের চক্র আরও আছে কিনা তা যেমন খতিয়ে দেখতে হবে, একই সঙ্গে এমন ঘৃণ্য অপরাধ যেন কেউ সংঘটিত করতে না পারে সেই বিষয়কে সামনে রেখে সব ধরনের উদ্যোগ জারি থাকুক এমনটি কাম্য।