বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শোষিত মানুষের সংগ্রামের পথিকৃৎ কমরেড মণি সিংহ

গোলাম রাব্বী খান
  ২৮ জুলাই ২০২০, ০০:০০

'যা বিদ্যমান তাকে ধ্রম্নব ধরে নিয়ে বাস্তবতার অজুহাত দিয়ে, চলতি অবস্থার কাছে, চলতি হাওয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করা চলবে না। যা বিদ্যমান তাকে উন্নত করা, তাকে বদলানোর চেষ্টা করে যেতে হবে। সেই সংগ্রামই নিরানন্দ, পাষাণসম বন্দিজীবনকে অর্থপূর্ণ ও আনন্দময় করে তুলবে।'

কমরেড মণি সিংহ ১৯৭৭ সালে এই কথাগুলো বলেছিলেন, তখন তিনি জেলে রাজবন্দি। বয়স ৭৬ বছর। ওই বয়সের মণি সিংহকে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল জিয়া ভয় পেতেন, তাই 'বড়ভাই' মণি সিংহকে কারাগারে আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু সেখানেও বড়ভাই তার কর্মযজ্ঞ চালিয়েছেন।

'বই পড়, পাঠচক্র চালাও, আলোচনা সভা করো। উন্নত পরিবেশের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দরবার করো। রেশন কেন খারাপ এলো? পত্রিকা আসতে বিলম্ব হয় কেন? ডাক্তার রাউন্ডে থাকে না কেন? বন্দির জীবন তাতে কি? সেখানেও আরও ভালো থাকার জন্য সংগ্রাম করো।' এই ছিল সবার বড়ভাই। কমরেড মণি সিংহ ছিলেন এই উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা। উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন যাদের হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

১৯০১ সালের ২৮ জুলাই আজকের এই দিনে পূর্বধলার জমিদারের সন্তান কালীকুমার সিংহ ও সুসং রাজবংশের কন্যা শ্রীমতি সরলা দেবীর কোল আলোকিত করে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে জন্ম নেন মণি সিংহ। জন্মের তিন বছরের মধ্যে মণি সিংহের পিতার মৃতু্য হলে কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। তারপর সেখান থেকে নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুরের মাতুল রাজ্যে। মায়ের জমিদারের অংশের মাসোয়ারায় সংসারে অর্থনৈতিক সংকট কাটে এবং তখন স্থায়ীভাবে সুসং দুর্গাপুরে বসবাস শুরু করেন মণি সিংহ। প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি সেখানেই। কিন্তু সেখানে শিক্ষার প্রসার তেমন ছিল না। তাই তাকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি যোগ দেন সশস্ত্র ব্রিটিশ বিদ্রোহী গ্রম্নপ 'অনুশীলন'-এ। অনুশীলনের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে তিনি নিজ এলাকায় লড়াকু হাজংদের সংগঠিত করার জন্য সুসং থেকে ১০ ক্রোশ দূরে গ্রাম কালিকাবাড়ীতে স্থাপন করেন বিদ্যালয়। সমাজের উঁচু-নিচু, জাত-পাতের ব্যবধান হটাতে শিক্ষাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন। কুসংস্কারের সঙ্গে লড়তে থাকায় সেই গ্রামে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

সেই সময়ে বিশ্বের ইতিহাস ঘুরে যায় ১৯১৭ সালে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপস্নব সংগঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে। স্বপ্ন সত্যি হওয়ার প্রেরণার জোয়ার তৈরি হয় বিশ্বজুড়ে। সেই জোয়ার এই উপমাহদেশেও লাগে। অনুশীলন দলের অন্যতম শীর্ষনেতা সুরেশ চন্দ্র দের চিঠি নিয়ে কালিকাবাড়ী গ্রামে যান রুশ বিপস্নবী গোপেন চক্রবর্তী। তার সঙ্গে আলোচনায় মণি সিংহ পরিচিত হন মার্কসবাদের সঙ্গে। শুরু হয় চর্চা। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে উজ্জবিত হয়ে মণি সিংহ শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে কাজ করার জন্য ছুটে যান কলকাতায়। সেখানে তখন উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রাণপুরুষ কমরেড মোজাফফরসহ অনেক বিপস্নবীর পদচারণা। তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে মণি সিংহের। ১৯২১ সালে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। আত্মগোপন অবস্থায় দীক্ষা নেন সাম্যবাদী আদর্শের। ১৯২৫ সালে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূচনাপর্বেই যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে।

১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্যসেনের অস্ত্রগার লুট, বিপস্নবীদের আরও উজ্জবিত করে তোলে আর ব্রিটিশ সরকার নামে বিপস্নবীদের দমাতে। সেই সময়েই মণি সিংহ কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৫ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি চলে আসেন আবার সুসং দুর্গাপুরে। সেখানে তাকে নজরবন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু পাটের ন্যায্যমূল্যর দাবিতে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় তার আবার দেড় বছরের জেল হয়। ১৯৩৭ সালে তিনি মুক্তি পান। সেই সময় তাকে জানানো হয়, তিনি এখন পার্টির সদস্য। জমিদার পরিবারে জন্ম নিলেও মণি সিংহ তার জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য, ভোগ-বিলাস, নিরাপত্তার মতো স্বস্তিময় জীবনযাপনের সব সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে বেছে নেন কঠিন সংগ্রামের জীবন। নিজেই তার শ্রেণিচু্যত হন। বিদ্রোহ করেন নিজ জমিদার পরিবারের শোষণের বিরুদ্ধে। প্রকৃত শিক্ষাকে প্রয়োগ করেন নিজের ওপর। এই কাজটি আমরা কজন পারি? কৃষকদের ও সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করেন শোষণের বিরুদ্ধে, গড়ে তোলেন কৃষক আন্দোলন। অচিরেই মেহনতি মানুষের কাছে নয়নের মণি হয়ে ওঠেন মণি সিংহ।

টংক ও তেভাগা আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে ১৯৫০ সালে টংক আন্দোলনের তীব্রতায় তৎকালীন সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়ে টংকপ্রথা বিলুপ্ত করেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের তেভাগা আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তেভাগা ও টংক আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তিনি কৃষক ও মেহনতি তথা শোষিত মানুষের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। এই আন্দোলন শুধু সভা-সমাবেশে সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল রক্তক্ষয়ী লড়াইও। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আর শোষক জমিদারের সেনাদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে লড়াই করতে হয়েছে। শুধু টংক আন্দোলনেই ৬০ জন কৃষক ও মেহনতি মানুষ আত্মাহুতি দেন। তিনি শুধু কৃষিকাজ ও আন্দোলনের মধ্যে মানুষকে সংগঠিত করেননি, এই অঞ্চলের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কুটির শিল্প গড়ার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

মণি সিংহের ভাষায়, 'সবার উন্নত জীবন না হলে উন্নত সমাজ হয় না। আর দেশপ্রেমের অর্থ হলো সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা সবার অধিকারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা।' কিন্তু অধিকারপ্রাপ্তি সহজ বিষয় নয়। মানুষের অধিকার আদায় করার লড়াই করতে গিয়ে মণি সিংহকে বারবার জেলে যেতে হয়েছে, নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে। যেতে হয়েছে আত্মগোপনে।

১৯৪৪ সালে সারা বাংলার কৃষাণ সভার প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কৃষাণ সভার ঐতিহাসিক সম্মেলনের প্রধান সংগঠক তিনি। ওই সময় নেত্রকোনার যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে তেমন কিছু ছিল না, লক্ষাধিক মানুষের এই সম্মেলন খুবই সফলভাবে শেষ হয়। এই দুরূহ কাজ করতে কী পরিমাণ কর্মপ্রয়াস দরকার, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল থাকায় তখন নগদ টাকার লেনদেনে সংকট তৈরি হয়। ওই সময় মণি সিংহ স্বাক্ষরিত টোকেনই বিকল্প মুদ্রায় পরিণত হয়। মানুষ তাকে তাদের নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করত, তাই নির্দ্বিধায় সেই টোকেনকে লেনদেনে ব্যবহার করত। এ যেন রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটি রাষ্ট্র। কমরেড মণি সিংহের প্রতি মানুষের অকল্পনীয় বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।

উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর পূর্ণ গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য সংগ্রামে যারা লিপ্ত হয়েছিলেন, মণি সিংহ তাদের একজন। এ জন্য তার ওপরও নেমে আসে পাকিস্তান জান্তার দমন-নিপীড়ন। সেই আমলে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর কমরেড মণি সিংহকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। হুলিয়া মাথায় নিয়ে মণি সিংহ '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, '৬১-র শিক্ষক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এই আত্মগোপনে থাকাবস্থায় 'কমরেড আজাদ' ছদ্মনাম ধারণ করেন। আইয়ুব সরকার তো তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সেই সময়ে ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আত্মগোপনে থেকে তিনি পার্টি পুনর্গঠনে জন্য কাজ করেন। ১৯৬৭ সালে আবার গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৬৯ সালের গণঅভু্যত্থানের পর মুক্তি পান। কিন্তু সেই বছরেই ইয়াহিয়ার শাসন জারি হলে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজশাহীর ছাত্র জনতা কারাগার ভেঙে প্রিয় মণিদাকে মুক্ত করে। তখন তিনি অন্য সহকর্মীদের নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যান এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৬১ সালে নভেম্বরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, কমরেড মণি সিংহ, কমরেড খোকা রায়, ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সংবাদ সম্পাদক জহুর হোসেন চৌধুরী মিলিত হন ঢাকার মগবাজারের একটি বাসায়। আলোচনা করেন দেশে চলমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে। নানা আলোচনা চলতে থাকে, চলতে থাকে একাধিক সময় একাধিক গোপন বৈঠক। এরপর ঐকমত্যে পৌঁছান বাংলার মহানায়করা। শুরু হয় পাকিস্তানবিরোধী তীব্র রক্তঝরা আন্দোলন-সংগ্রাম। সেই সভাগুলোকে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে উলেস্নখ করেন সমাজবোদ্ধারা।

কমরেড মণি সিংহ ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং পার্টির কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। মুক্তিযুদ্ধের সময় কমরেড মণি সিংহের বয়স ৭০ বছর। এই বয়সেও দীর্ঘ ৯ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন মুক্তিযুদ্ধের গতিধারা সঠিক পথে প্রবাহিত করতে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন ও স্বীকৃতি প্রাপ্তিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের সমর্থন আদায়ে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। দেশের অভ্যন্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্র্টি-ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলাবাহিনী গঠনে তিনি অনবদ্য ভূমিকা রাখেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে দোলার কাজে বিপুল উৎসাহে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। মণি সিংহ রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে যেমন জীবন্ত কিংবদন্তি ছিলেন, তেমনি তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন নিজ দায়িত্ব। সহধর্মিণী কমরেড অনিমা সিংহ ছিলেন তার আরেক প্রাণশক্তি। তিনিও মার্কসবাদের দীক্ষায় দীক্ষিত ছিলেন। বলা যায়, কমরেড মণি সিংহ ও কমরেড অনিমা সিংহের বোঝাপড়া ছিল অনুকরণীয়। মানুষের প্রতি ছিল কমরেড মণি সিংহের প্রবাদতুল্য ভালোবাসা। তিনি কখনো সহকর্মীদের বাদ দিয়ে খাবার গ্রহণ করতেন না। পিতা-মাতা উভয়ই বড় জমিদার হলেও এবং দেশের অন্যতম শীর্ষনেতা হওয়া সত্ত্বেও তার কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল না। তিনি খুব সময়নিষ্ঠ ছিলেন। যথাসময়ে পৌঁছানো বা কাজ করা ছিল তার স্বভাবসুলভ অভ্যাস। এটি অনুকরণীয়, তাই এখনো কমিউনিস্ট পার্টিতে 'কমরেড মণি সিংহ টাইম' নামে একটি শব্দ প্রচলিত আছে। অর্থাৎ ঠিক যথাসময়।

১৯৩৭ সালে কমরেড মণি সিংহ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান। ১৯৫১ সালে পার্টির দ্বিতীয় সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে তৃতীয় সম্মেলনে তিনি আবারও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে পার্টির চতুর্থ সম্মেলন যেটি পার্টির প্রথম কংেগ্রেস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন, সেই সময় তিনি জেলে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসেও তিনি পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। শুরু হয় সামরিক জান্তাদের কু্য পাল্টা কু্য। জেনালের জিয়া তার ক্ষমতাকে নিরাপদ করতে ১৯৭৭ সালেই কমরেড মণি সিংহকে কারাগারে অন্ত্যরীণ করেন। ১৯৮০ সালে তৃতীয় কংগ্রেসে তিনি আবার সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রবাদতুল্য নেতা কমরেড মণি সিংহ ৮৪ বছর বয়স পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে পার্টির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে ২৩ ফেব্রম্নয়ারি তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে হাজংদের বেটা, উপমহাদেশের লালঝান্ডার অন্যতম স্থাপক, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রিয় নেতা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ, মুক্তিযুদ্ধের সফল সংগঠক, আমাদের প্রিয় বড়ভাই কমরেড মণি সিংহ মহাপ্রয়াণ করেন।

জাতীয় জীবনে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য কমরেড মণি সিংহ ২০০৪ সালে 'স্বাধীনতা পদকে' ভূষিত হন।

মণি সিংহের স্মরণে প্রতি বছর তার মৃতু্যবার্ষিকীর সময় সুসং দুর্গাপুরে 'কমরেড মণি সিংহ মেলা' অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় তার প্রিয়ভূমিতে মানুষের মিলনমেলা বসে, যে মানুষের অধিকারের জন্য তিনি আমৃতু্য লড়াই করেছেন। সেজে ওঠে, লালে লাল হয়ে যায় মণি সিংহের পদচারণায় পুণ্যভূমি সুসং দুর্গাপুরের মাটি। বারতা দেয় মানুষের মুক্তির। এ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মানুষকে ভালোবাসলে মানুষও ভালোবাসা ফেরত দেয়, তার প্রমাণ এই মিলনমেলা। কথা বলা শিশু থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবণিতা সবাই এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন। আর স্মরণ করেন তাদের প্রিয় সন্তান কমরেড মণি সিংহকে।

তিনি বলতেন, 'শ্রমিক-কৃষক তথা মেহনতি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। আর অর্থনৈতিক মুক্তির একটিই পথ, সে পথ হলো সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।' তাই আজও কমরেড মণি সিংহ শোষিত মানুষের সংগ্রামের প্রেরণার উৎস।

গোলাম রাব্বী খান : সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা মহানগর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107275 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1