শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি চাই

নতুনধারা
  ৩১ জুলাই ২০২০, ০০:০০

সারা বিশ্ব করোনা চিন্তায় উদ্বিগ্ন থাকলেও আমরা করোনার পাশাপাশি দুর্নীতি নামক বিষফোঁড়া নিয়েও উদ্বিগ্ন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি পৌঁছে গেছে। করোনা অনেকাংশে সেই দুর্নীতির কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরেছে মাত্র।

আমাদের স্বাস্থ্য খাত কতটা ভঙ্গুর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত, সেটা বিভিন্ন সময় চোখে পড়েছে। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করেছে। যন্ত্রপাতি কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিসহ আরও বিভিন্নভাবে দুর্নীতি হয়ে থাকে এখানে। সাম্প্রতিক সময়ের রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার সাহেদের কথাই ধরা যাক। তার হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালের পর আর নবায়ন হয়নি। এ ছাড়া, ভুয়া করোনা রিপোর্ট, বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা থাকলেও রোগীদের কাছ থেকে অধিক টাকা নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার মতো অপরাধও তিনি ও তার হাসপাতাল করেছে। ভুয়া করোনা রিপোর্ট শুধু যে রিজেন্ট হাসপাতাল করেছে, তা নয়। রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজির মতো আরও প্রতিষ্ঠান এগুলোর সঙ্গে জড়িত। একটা দেশের সংসদ সদস্য তার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে, জাতীয় সংসদে তার নিজ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে, সেখানে সেই সংসদ সদস্যদের মধ্যে একজন কুয়েতে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক হয়েছেন। যেটা মোটেই কাম্য নয়। এ রকম পাপুল একদিনে তৈরি হয়নি।

আমরা যদি আরেকটু পিছিয়ে যাই, তাহলে দেখব, করোনা সময় ত্রাণে দুর্নীতির অভিযোগ। লকডাউনের ফলে অসহায় মানুষগুলো কিছু খেতে না পেয়ে যখন বাধ্য হয়ে ত্রাণ নিতে আসল, তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সুযোগ বুঝে কোপ মেরেছে। নিজেদের প্রচারের জন্য ত্রাণ দেওয়ার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন জনপ্রতিনিধিরা। এতে অনেক মধ্যবিত্ত ত্রাণ নিতে সাহস করে সামনে আসেনি। আবার, যারা এসেছে, তাদের অনেককে ত্রাণ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত ছিল। পরবর্তীতে ওপর মহলের হস্তক্ষেপে অনেককে আইনের আওতায় আনা হয়।

এ রকম সাহেদ, সাবরিনা-আরিফ কিংবা জনপ্রতিনিধিরা যারা সামান্য চালের লোভ সামলাতে পারে না, তারা এক দিনে তৈরি হয়নি। এই দুর্নীতির হিসাব করতে চাইলে জল গড়িয়ে বহুদূর যাবে। আরও পেছনে তাকালে পাপিয়াকে দেখতে পাব নিজেদের স্মৃতিপটে। মাদক, অবৈধ অস্ত্র, দেহব্যবসা এবং প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় পাপিয়া চৌধুরী। এ রকম আরও ভুঁড়ি ভুঁড়ি উদাহরণ দেওয়া যাবে চাইলে, কিন্তু মূল হোতাকে ধরতে না পারলে কিছুই হবে না। এ রকম কিংবা এর চেয়ে বড় দুর্নীতির খবর সামনে আসলেও পেছনের গল্প সে রকমভাবে সামনে আসেনি। বিন্দু বিন্দু জল পেয়েই সাগর, মহাসাগরের সৃষ্টি। কেউ শূন্য থেকেই এত বড় জায়গায় যেতে পারে না। আজকের পত্রিকায় আসা এক-একটা অপরাধী অতীতে ছোট ছোট অপরাধ করতে গিয়ে ছাড় পেয়ে পেয়ে আজ এতদূর এসে পড়েছে। চিকিৎসা যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম, সেখানে বাংলাদেশের চিকিৎসা খাত দুর্নীতির কালো ধোঁয়ায় নিমজ্জিত। শুধু স্বাস্থ্য খাতেই দুর্নীতি এ রকম নয়। প্রায় প্রতিটি খাতে কমবেশি দুর্নীতি আছে। দুর্নীতির এই গাছকে বড় হতে দেওয়া যাবে না। গজিয়ে ওঠার আগেই বিনাশ করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগুতে পারবে না। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেওয়া হোক 'জিরো টলারেন্স' নীতি।

ইকবাল হাসান

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107552 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1