শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়ার ধারাবাহিক দরপতনে নজরদারি জরুরি

এতে শুধু যে চামড়া নষ্ট হলো তাই নয়, সে চামড়া পচে গন্ধ বের হয়ে আশপাশের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া চাহিদার জায়গায় চাহিদা রয়েই গেল মাঝখানে চামড়াগুলো যেখানে সম্পদ হতে পারত তা না হয়ে জীবাণুর ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এমনিতেই দখল দূষণের কারণে শহরাঞ্চল অনেকটাই কৃত্রিম ভাগাড়। তার ওপর এমন পরিস্থিতিতে তা আরও এক ডিগ্রি বেড়ে গেল আরকি। কাজেই এখানে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ ব্যবস্থায় এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের এমন পরিণতি হতে থাকলে প্রকারান্তরে দেশেরই ক্ষতি- যা মেনে নেওয়া যায় না। একেতো করোনাকালে এমনিতেই দেশবাসী নাকাল, সেখানে চামড়া খাতকে এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ড. মো. হুমায়ুন কবীর
  ০৮ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

সারা বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রাণীর চামড়া পাওয়া যায় এক কোরবানির ঈদ মৌসুমেই তার চেয়ে অনেক বেশি চামড়া পাওয়া যায়। বাংলাদেশে চামড়া একটি অন্যতম রপ্তানিপণ্য হিসেবে বিশ্বে অনেক খ্যাতি রয়েছে। যেমনটি এক সময় ছিল নীল, তারপর পাট, এখন চা, তৈরি পোশাক ইত্যাদি। কিন্তু চামড়া শুধু রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিদেশেই নয় বরং এখন আমাদের দেশেই অনেক শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে দেশেও চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে এখানেই নানা চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। বাংলাদেশে কাঁচা চামড়াকে পাকা করার জন্য আগে পুরাতন ঢাকায় হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে প্রক্রিয়াকরণ করা হতো। কিন্তু এখন এ শিল্পের দেশ-বিদেশে সম্ভাবনা থাকার কথা চিন্তা করে এবং পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার অদূরে সাভারে স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ট্যানারি স্থাপন করার জন্য সরকারিভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।

ভাবতে অনেক কষ্ট হয়, সেই চামড়ার এখন কোনো মূল্যই নেই। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব। আমরা দেখেছি প্রাকৃতিক নীলের বদলে অনেক কৃত্রিম রঙ সৃষ্টি হওয়ায় নীলের কদর কমে গেছে। অনেক সহজলভ্য ও সস্তা কৃত্রিম তন্তু সৃষ্টি হওয়ায় পাটের কদরও বিশ্ববাজারে কমে গেছে। এগুলো না হয় তর্ক ও যুক্তির খাতিরে হলেও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যেখানে বিশ্ব বাজারে চামড়া এবং চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী সেখানে কাঁচা-পাকা চামড়ার এখন ধারাবাহিক দরপতন কোনো অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। আমরা আমাদের নিজের দেশের অভিজ্ঞতা দিয়েই একটু উদাহরণ দিলে তা পরিষ্কার হওয়া যাবে।

\হপিওর চামড়ায় তৈরি যে কোনো এক জোড়া জুতার দাম কত, একটি পিওর চামড়ার তৈরি ব্যাগের দাম কত, একটি পিওর চামড়ার বেল্টের দাম কত- এগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু চামড়া বিক্রি করতে গেলে এর কোনো মূল্যই থাকবে না তা নিশ্চয়ই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। তাহলে এ শিল্পটিতে এমন একটি অশনিসংকেত কীভাবে সৃষ্টি হলো তা নিশ্চয়ই ভেবে দেখা দরকার। আর শুধু ভাবলেই চলবে না। এখানে সরকারের কিছু করণীয় থাকলে অবশ্যই শক্ত হাতেই করতে হবে। আমরা বলতে চাই না যে এখানে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করছে, তবে যদি এমনভাবেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চলতে থাকে সেখানে অবশ্যই কঠোর হস্তে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

কারণ এমনিতে অন্য যে কোনো পণ্যের মূল্যের সঙ্গে সরাসরি গরিবের হক জড়িত থাকে না। কিন্তু কোরবানির চামড়ার মূল্যের সঙ্গে গরিবের অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি সরাসরি জড়িত থাকায় সেটাতে গরিবের হকও সরাসরি জড়িত। কারণ কোরবানির চামড়ার মূল্যের পুরোটাই গরিব মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে ইসলাম ধর্মীয় বিধান মতে। কাজেই এ চামড়ার মূল্যের সঙ্গে বেশ কয়েটি বিষয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। প্রথমত, একটি রপ্তানিপণ্যের মূল্যহানি, দ্বিতীয়ত, গরিবের হকপ্রাপ্তিতে ঘাটতি, তৃতীয়ত, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী তথা মধ্যস্বত্বভোগীদের আর্থিক ক্ষতি, সর্বোপরি পরিবেশ বিনষ্ট হওয়া ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

\হবিগত দুই/তিন বছর যাবত চামড়ার বাজারমূল্যের যে অবস্থা যাচ্ছে- তা সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবারই দেখা যায়, ঈদের আগে গরু/মহিষ, খাসি/ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। কিন্তু কোনোবারই ট্যানারি মালিকরা সে নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করে না। তারা নানা টালবাহান করে, যার ফলে খুচরা ও পাইকারি চামড়ার কারবারিরা হয় নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করে যায়, নয়তো বা সেই চামড়া রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। এতে ফিবছরই সেসব প্রান্তিক পর্যায়ের চামড়ার ব্যবসায়ী ফড়িয়ারা লোকসান গোনে ঘরে ফিরে। এবারের (২০২০) কোরবানির ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যথারীতি কোরবানির চামড়া কিনে যখন মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা ট্যানারি মালিকদের কাছে নিয়ে যায় তখন তারা তা গ্রহণ করেনি। ফলে তারা সেসব চামড়া রাস্তায় ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এতে শুধু যে চামড়া নষ্ট হলো তাই নয়, সে চামড়া পচে গন্ধ বের হয়ে আশপাশের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আর তাছাড়া চাহিদার জায়গায় চাহিদা রয়েই গেল মাঝখানে চামড়াগুলো যেখানে সম্পদ হতে পারতো তা না হয়ে জীবাণুর ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এমনিতেই দখল দূষণের কারণে শহরাঞ্চল অনেকটাই কৃত্রিম ভাগাড়। তার ওপর এমন পরিস্থিতিতে তা আরো এক ডিগ্রি বেড়ে গেল আরকি। কাজেই এখানে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ ব্যবস্থায় এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের এমন পরিণতি হতে থাকলে প্রকারান্তরে দেশেরই ক্ষতি- যা মেনে নেওয়া যায় না। একেতো করোনাকালে এমনিতেই দেশবাসী নাকাল, সেখানে চামড়া খাতকে এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ড. মো. হুমায়ুন কবীর : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108009 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1