বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

সংবিধানের সৌন্দযর্ রক্ষায় এর পূণর্ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন

সাব্বির রহমান কাউসার শিক্ষাথীর্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশের সংবিধান মূলত দুই খানা আশ্চযর্ শোনালেও সত্য দুই খানা সংবিধানই কাযর্কর আছে বতর্মানে। একটি হলো স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র। ২৬ মাচর্, ১৯৭১ থেকে বতর্মান সংবিধান কাযর্কর হওয়ার পূবর্ পযর্ন্ত স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের দ্বারাই দেশ চলেছে। দ্বিতীয়টি হলো বতর্মান সংবিধান। এই বতর্মান সংবিধানের আছে বিশেষ কিছু সৌন্দযর্, যা পৃথিবীর কোনো সংবিধানেই নেই।

মূলত আমাদের সংবিধানের মূলভিত্তি হচ্ছে ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ইরষষ ড়ভ জরমযঃং যেটা প্রথম প্রণয়ন করা হয়েছিল ইংল্যান্ডে। এই বিল থেকে পৃথিবীর অনেক দেশই তাদের সংবিধানের মূল ধারণা নিয়েছে। আমাদের সংবিধান যখন আসে তখন ভারত, পাকিস্তান দুই দেশেরই সংবিধান তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে আমাদের সংবিধানের ধারণা নেওয়া হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের সংবিধান থেকে। আয়ারল্যান্ড থেকে নেয়া হলেও আমাদের সংবিধানের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সংবিধানেরই মিল রয়েছে। কারণ সবগুলোর আদি সংস্করণ হচ্ছে ইরষষ ড়ভ জরমযঃং। এ কারণে অনেকেই ধরে নেয় আমাদের সংবিধান ভারতের নকল। কিন্তু আদতে তা নয়। আমাদের সংবিধানে এমন কিছু বিষয় আছে যা ভারত তো দূরে থাক তা পৃথিবীর কোনো সংবিধানেই নেই। সংবিধান শুরু হয় প্রস্তাবনা দিয়ে। আমাদের প্রস্তাবনা পড়লে দেখা যাবে এখানে বলা আছে, এই সংবিধান আমরাই আমাদেরকে দিয়েছি। অন্য কেউ এটা আমাদের দেয়নি।

প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ আছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পকের্। আরও বলা আছে রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটা শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এখানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে হয়নি কারণ এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করতে হবে। এখানে মূলত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা পাওয়া যায়। যেটা ইংল্যান্ড, কানাডা, সুইডেনসহ অনেক দেশ আগেই গ্রহণ করেছে।

আরও বলা আছে, এই সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই, যা পৃথিবীর কোনো সংবিধানে উল্লেখ নেই। এ ছাড়াও বলা আছে, এটা হচ্ছে ঊসনড়ফরসবহঃ ড়ভ ঃযব রিষষ ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব অথার্ৎ, এই সংবিধান আমাদের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। যেটা আমাদের সংবিধানের আরেকটি বিশেষ দিক। এ প্রসঙ্গে জাস্টিস মুস্তাফা কামাল বলেছেন, পৃথিবীর খুব কম সংবিধানেই এরকম একটি প্রস্তাবনা আছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ভাগে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ কিছু অধিকারের কথা বলা হয়েছে যেগুলো রাষ্ট্র আমাদের দিতে বাধ্য। তবে এর একটা খুব মজার বিষয় হলো রাষ্ট্র এসব অধিকার দিতে অপারগ হলে বা কোনো কারণে না দিলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। কারণ এসব অধিকার দেওয়ার মতো অথর্ রাষ্ট্রের নেই। কারণ এই অধিকারগুলো ব্যয়বহুল। দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে অন্য কোনো দেশই এ অধিকারগুলো দেয় না। তবে রাষ্ট্র আইন বানানোর ক্ষেত্রে এগুলো মাথায় রেখে আইন তৈরি করবে। তৃতীয় ভাগে আমাদের মৌলিক অধিকার। চলাচলের অধিকার, সভা সমাবেশ করার অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, চাকরিতে নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার এসব আছে এই ভাগে। এই ভাগের সঙ্গে কোনো আইন সাংঘষির্ক হলে সেই আইনটা অসাংবিধানিক এবং বাতিল ঘোষিত হবে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র যদি দ্বিতীয় ভাগের কোনো অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কোনো আইন করে এই তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকার ভঙ্গ করে, তবে তা বাতিল হবে না।

এই বিশেষ ফিচারটি পৃথিবীর কোনো সংবিধানে নেই। যা শুধু বাংলাদেশ সংবিধানেই আছে। এ ছাড়াও পরবতীের্ত অন্যান্য অনুচ্ছেদে আইনসভা, বিচার বিভাগ, নিবার্হী বিভাগ, রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোটর্সহ বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে, যা অন্যন্য সংবিধানের সঙ্গে মিল আছে। আবার কিছু কিছু ভিন্নতাও আছে।

আমাদের এই সংবিধান কোনো ংশরষষভঁষষ ফৎধভঃংসধহ দ্বারা রচনা করা হয়নি। তারপরেও এত সুন্দর সুন্দর কিছু ফিচার যোগ করা হয়েছে, যা পৃথিবীর অন্য সংবিধানে পাওয়া দুষ্কর।

এসব গেল সংবিধানের সৌন্দযর্। এখন যদি অসৌন্দযর্ খুঁজি তবে একটা বৃহৎ অসৌন্দযর্ পাব সেটা হচ্ছে এটার পূণর্ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এখনও আমাদের দেশে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের নামে টচার্র করা হয় যা সংবিধান পরিপন্থী। স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকার পরেও নিবার্হী বিভাগ অনেক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কাজ করছে। মৌলিক অধিকারের জন্য এখনও লড়াই করে মানুষ। এ ছাড়াও বলা যায়, আমেরিকার সংবিধান মাত্র ২৬ বার সংশোধন হয়েছে তাদের জন্মের পর। আর আমরা স্বাধীনতার এই কয়েক বছরে ১৬ বার সংশোধন করে ফেলেছি। তার মানে কি সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো সঠিক ও সুন্দর ছিল না? ছিল। কিন্তু যখনই বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের সুবিধার জন্য সংবিধানকে কাটা-ছেঁড়া করেছে।

এ ছাড়াও অষ্টম সংশোধনীর পূবের্ ছিল ঝঃধঃব ষধহমঁধমব ংযধষষ নব ইবহমধষর. অষ্টম সংশোধনীর পরে করা হয় ইধহমষধ কিন্তু দুভার্গ্যজনকভাবে সংবিধানে এক জায়গায় করেছে ইধহমষধ আরেক জায়গায় রয়ে গেছে ইবহমধষর.

সমঅধিকারের প্রশ্নে বলা আছে, নারীরা পুরুষের সমান অধিকার পাবে। এখানে হওয়া উচিত ছিল নারী-পুরুষ সমান অধিকার পাবে। এখন নারীর যদি পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয় তবে নারীকে পুরুষের মুখাপেক্ষী করা হয়। বারবার সংবিধান সংশোধন না করে এসব দিকগুলোতে অনেক আগে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এসব ছোট ছোট কিছু অসৌন্দযর্ আছে তবে সেটা সংবিধানের দোষ নয়। দোষটা আমাদের। আমরা প্রচুর তকর্ করি সংবিধান নিয়ে কিন্তু পযার্প্ত পড়াশোনা ছাড়াই। তাই সংবিধান সম্পকের্ প্রচুর গবেষণা প্রয়োজন।

এ ছাড়াও স্পষ্ট সব আইন থাকার পরেও বারবার সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে। এতবার সংবিধান সংশোধন করা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। দেশ সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য সংশোধন নয় চাই এর পূণর্ বাস্তবায়ন। কারণ সংশোধনের নামে কাটাছেঁড়া যদি চলতে থাকে, তাহলে বিধান আর থাকবে না। হয়ে যাবে সং!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<11880 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1