শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট পাস

যথাযথ বাস্তবায়নই কাম্য
নতুনধারা
  ৩০ জুন ২০১৮, ০০:০০

জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অথর্বছরের জন্য বাজেট পাস হয়েছে। ৭ জুন ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে অথর্ বিল ২০১৮ সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন অথর্মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। কোন পণ্য ও সেবায় কী হারে শুল্ক, কর, ভ্যাট ইত্যাদি আরোপিত হবে, তা উল্লেখ করে সংসদ সদস্যদের কাছে সেটি পেশ করা হয়েছিল। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এসবের ভিত্তিতে বিলে কিছু সংশোধনী আনা হলে বুধবার সদস্যরা সংশোধিত বিল কণ্ঠভোটে পাস করেন। আর বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অথর্বছরের নতুন এই বাজেট পাস করা হয়।

আগামী অথর্বছরের এই বাজেটের কিছু দিক উল্লেখ করা যায়, ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পেয়েছে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ। দেশি মোবাইল ফোন সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য দেশে উৎপাদন পযাের্য় ৫ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঠেঁাটে ও ত্বকে ব্যবহাযর্ পেট্রোলিয়াম জেলির সম্পূরক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া এনাজির্ বাল্বের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন উৎসাহিত করতে দেশি উৎপাদকদের ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় উৎপাদন পযাের্য় ৭ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হয়েছে বেশ কিছু পণ্যে। ড্রাই মিক্সড ইনগ্রেডিয়েন্টের শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ব্যাটারিশিল্পের কঁাচামাল প্রাকৃতিক বেরিয়াম সালফেটের শুল্ক ১০ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। হেপাটাইটিস-সি রোগের ওষুধের কঁাচামালের আমদানি শুল্ক শূন্য করা হয়েছে। মোবাইল সিম কাডর্ ও স্মাটর্ কাডের্র কঁাচামাল পিভিসি শিটের আমদানি শুল্ক ১৫ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ওষুধের মোড়ক তৈরিতে ব্যবহাযর্ পিভিসি ফিল্ম ও নাইলন ফিল্মের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। টেলিভিশনের এলসিডি ও এলইডি প্যানেল তৈরিতে ব্যবহাযর্ ওপেন সেল আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ডিজিটাল কাডের্র মডিউলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশে নামানো হয়েছে। ডাবল কেবিন পিকআপের রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। গুঁড়া দুধ আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে আবারও ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তজাির্তক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বন্দরসেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরা হয়েছে। সিগারেটের দাম এবং জদার্ ও গুলের ট্যারিফ কিছু কিছু বাড়ানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে তামাকজাত পণ্যের বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অথর্মন্ত্রী।

সাবির্কভাবে বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা এবং ভ্যাটের স্তর কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো হয়েছে মূলত বিনিয়োগ ও কমর্সংস্থানের ক্ষেত্রে বহুমুখী পদক্ষেপের ওপর জোর দেয়ার কারণে, এমনটি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে বাজেট প্রস্তাবের সময় নতুন করারোপের বিষয় তেমন ছিল না। সংশোধিত অথর্ বিলে অনেক ক্ষেত্রেই শুল্ক কমানো হয়; কিছু পণ্যে বাড়ানোও হয়। শুল্ক কমানো-বাড়ানোর উদ্দেশ্য দেশে উৎপাদিত বা সংযোজিত পণ্যের প্রসার ঘটানো। সাধারণের সামথের্্যর বিষয়েও খেয়াল রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে মানুষকেই উন্নয়নের সবাের্গ্র রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকা যৌক্তিক। কমর্সংস্থান বাড়াতে আথির্ক অন্তভুির্ক্তমূলক কমর্কাÐ বেগবান করতে হবে। বাজেটটি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় সে ব্যাপারে বিশেষ যতœবান হওয়া সমীচীন।

সবোর্পরি বলতে চাই, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইন্টারনেটের ভ্যাট কমানো হয়েছে, এতে ইন্টারনেটের ব্যবহার আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে। তবে এ ক্ষেত্রে সেবা পযাের্য় গ্রাহক হয়রানি রোধে বিশেষ তদারকি থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে বছর শেষে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অথর্ছাড়ের বিষয়টি সামনে আসে। কয়েক বছর ধরেই এমনটি চলে আসলেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। তড়িঘড়ি কাজ সমাপ্ত করতে গিয়ে কাজের মান যে নিম্নমুখী হয়, তা বলাই বাহুল্য। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিতে হবে। সাবির্কভাবে পাসকৃত বাজেট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী এবং করদাতাদের অনুক‚লে থাকবে; বাজেট বাস্তবায়নকালে সংশ্লিষ্টরা এটি নিশ্চিত করবেÑ এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে