বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় নিবার্চন নিয়ে কিছু কথা

বিশেষ করে নিবার্চনে অংশগ্রহণ ও বিজয়ী হয়ে যে দলসমূহের ক্ষমতাসীন হওয়া অসম্ভব, যারা শেখ হাসিনাকে তাদের এক নম্বর শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং বার বার তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং চালাচ্ছেন, তারা যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, কিছুই করবেন না, এরূপ চিন্তার অবকাশ নেই। একবার ভেবে দেখা যাক, নিবার্চন অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং অংশীদারিত্ব পূণর্ হলে, ফলাফল কী হতে পারে?
ডা. এসএ মালেক
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

জাতীয় সংসদ নিবার্চন ঘনিয়ে এসেছে। আগামী অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার কথা শোনা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কোনো নিবার্চনে অংশগ্রহণ করবে না। তারা দাবি করেছেন, সহায়ক সরকারের, যা মূলত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের বিকল্প। বতর্মান সাংবিধানিক ধারায় নিবার্চন অনুষ্ঠিত করতে হলে, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে তা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার সরকারই হবে অন্তবর্তীর্কালীন সরকার। সে সরকারে কারা থাকবেন, তা নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে শেখ হাসিনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কীভাবে তিনি কাদের নিয়ে অন্তবর্তীর্কালীন সরকার গঠন করবেন। তবে ওই সরকারকে সীমিত আকারে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নীতি-নিধার্রণের কোনো বিষয় নিয়ে সরকার পরিচালনা পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট করা হবে না। এমনকি প্রশাসনকেও নিবার্চন কমিশনের কতৃের্ত্ব কাজ করতে হবে।

সেনাবাহিনী নিবার্চনে দায়িত্বে¡ নিয়োজিত করা হবে কি-না, তাও নিধার্রণ করবে নিবার্চন কমিশন। অনেকের ধারণা, নিবার্চন যেভাবেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, এবার বিএনপি নিবার্চন থেকে দূরে সরে থাকবে না। অতীতে যে ভুল তারা করেছে এবং সে কারণে যে বিপযর্য় তাদের ওপর নেমে এসেছে, তার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না। অথার্ৎ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার বাহিরে রাখতে সক্ষম না হলেও, বিএনপিকে নিবার্চনে অংশগ্রহণ করতে হবে। অবশ্য এর বাহিরেও কিছু কথা রয়েছে। বিএনপি ও তার সহযোগী দল জামায়াত-শিবির চক্রের বা আন্তজাির্তক কোনো গোষ্ঠীর যদি এমন এজেন্ডা থেকে থাকে যে, হঠাৎ করে শেখ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে দিয়ে নিবার্চন অনুষ্ঠিত করতে হবে। তাহলে তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসবে না এবং নিবার্চনেও আসতে রাজি হবে না। অবশ্য দেশের মানুষ নিবার্চন চায়। অস্বাভাবিকভাবে ক্ষমতার পরিবতর্ন হোক, এটা কেউ চায় না। কিন্তু সব সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। যেখানে পর পর দুটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে যে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ঘটনা ঘটবে না, এরূপ দাবি করা বোধহয় সমুচিত নয়। বরং বাংলাদেশের ব্যাপারে যারা মোড়লিপনা করে থাকেন, তাদের স্বাথর্ সংশ্লিষ্টের কথা বিবেচনায় নিলে, এখানে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক হত্যাকাÐ সংগঠিত করে ক্ষমতার রদবদল সম্ভব করবার প্রক্রিয়ায় তো অনেকে হয়তো নিয়োজিত আছেন।

বিশেষ করে নিবার্চনে অংশগ্রহণ ও বিজয়ী হয়ে যে দলসমূহের ক্ষমতাসীন হওয়া অসম্ভব, যারা শেখ হাসিনাকে তাদের এক নম্বর শত্রæ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং বার বার তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং চালাচ্ছেন, তারা যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, কিছুই করবেন না, এরূপ চিন্তার অবকাশ নেই। একবার ভেবে দেখা যাক, নিবার্চন অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং অংশীদারিত্ব পূণর্ হলে, ফলাফল কী হতে পারে?

অনেকে বলে থাকেন, যারা ক্ষমতাসীন তাদের বিরুদ্ধে স্বভাবতই জনমত থাকে। কেননা, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে এমন কাজ করতে হয়, যা সাধারণ মানুষ আপাত দৃষ্টিতে তাদের স্বাথির্বরোধী বলে মনে করেন। ধরুণ, বিদ্যুতের ব্যাপার। দিনে দিনে প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েই চলেছে। এখন এমন একটা পযাের্য় এসেছে যে, অনেকেই তা অসহনশীল মনে করে। কিন্তু ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করতে যে হাজার হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ও বহিবিের্শ্বর ঋণ নিতে হয়েছে, যেভাবে দিনের পর দিন উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে তো জনগণের একটু বোঝা বইতেই হবে। প্রায় ৮০% জনগণের ঘরে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেওয়া হয়েছে। শিল্প-কারখানায় বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়েছে অবশ্যই জনগণের কর বৃদ্ধি করে। আর এ কর বৃদ্ধি করেই উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হয়, এটাই তো বাস্তবতা।

পদ্মা সেতু আমাদের একটা প্রাইভেট প্রকল্প। আমরা নিজস্ব সম্পদে এই সেতু নিমার্ণ করছি। এই সেতু তৈরি হলে, প্রতিদিন যে এর ওপর দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলবে, তা থেকে ট্যাক্স আদায় করেই তো পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর এভাবেই ক্রমাগত ট্যাক্স বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান অথর্নীতির এটাই তো বৈশিষ্ট্য। সাভির্স খাতে যে বিপুল জনকল্যাণমুখী অথর্ ব্যয় করতে হচ্ছে, তার ব্যয়ভারও তো জনগণদের বইতে হবে। এ সব যদি জনগণের ক্ষোভের কারণ হয় এবং সে কারণে যদি জনগণ ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়, তাহলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে কী করে? জনগণ দেখবে যে, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কারণে সরকার তাদের কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্য দিতে সক্ষম হয়েছে। তারা তখন বিবেচনায় নেবেন, আওয়ামী লীগ এর ১০ বছর আগে যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তারা বিগত ১০ বছরে কতটুকু উন্নয়ন কাজ করেছেন এবং তার দ্বারা জনগণ কতটুকু উপকৃত হয়েছিল। নিরপেক্ষ নিবার্চনী ভোট দিতে হলে অবশ্যই বিবেচনা হবে যে, শেখ হাসিনা এমন কিছু করেছেন যে, জনমতের ওপর ভর করে নিবার্চনে বিজয়ী হবেন। তিনি প্রত্যাশা করতে পারেন যে, সেই জনমত তার পক্ষেই আছে এবং আগামী এক বছরেও জনমত ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। কারণ ঐ সময়ের ভিতর অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এবং জনগণ তার সুফল ভোগ করতে শুরু করবে। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে ও বহিবিের্শ্ব দেশের মযার্দা বৃদ্ধি করতে, দেশের অথর্নীতিকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দঁাড় করাতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে ক্রমাগত এগিয়ে চলবে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে স্বাথর্কভাব মোকাবেলা করে, দেশের স্বাধীনতা ও সাবের্ভৗম সুসংহত করে, জনগণের জীবন-যাত্রার মান বৃদ্ধি করে, দেশে খাদ্য নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের ভিতর উন্নত দেশে রূপান্তর করার যে প্রচেষ্টায় দিন-রাত শেখ হাসিনার সরকার কাজ করে যাচ্ছেন, তা জনগণ নিবার্চনের পূবের্ অবশ্যই বিবেচনায় নিবে। অপর দিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে, ক্ষমতায় বসবেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি এবং সহযোগী দল জামায়াত-শিবির চক্র। বেগম খালেদা জিয়া তো প্রায়ই ১০ বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন, তার দল ক্ষমতায় ছিল প্রায় ১৫ বছর।

এ সুদীঘর্ সময়ে দেশ কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল, দেশের অথর্নীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দঁাড়িয়েছিল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কি ভয়াবহ অবনতি ঘটেছিল, দেশকে তখন কত লক্ষ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতো, পল্লী অঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবার কি করুণ দশা ছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ কত সীমিত ছিল, তখন গড় প্রতি একজন মানুষের আয় কত ছিল এবং এখন তা কোথায় গিয়ে দঁাড়িয়েছে। তখন দারিদ্র্যসীমা কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল, রাষ্ট্রীয়সম্পদ রাজনৈতিক কারণে কীভাবে লুট-পাট করা হয়েছিল, মযার্দার ক্ষেত্রে আন্তজাির্তক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান কোন পযাের্য় ছিল, মুদ্রাস্ফীতি কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল, বাৎসরিক বাজেটের পরিমাণ কত ছিল? বতর্মানে যে সব বড় বড় মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত করা হচ্ছে, সে রূপ একটা প্রজেক্টও বাস্তবায়ন করবার প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল কি? তাছাড়া যে ভোটের অধিকারের দাবি জানিয়ে বতর্মান সরকারকে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতাচ্যুত করতে চান, তার আমলে নিবার্চন পদ্ধতি, ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করবার ব্যথর্তা যে তার সরকারের ভাবমূতির্ ক্ষুণœ করেছিল।

২০০১ সালে নিবার্চনে বিজয়ী হয়ে তিনি যে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করেছেন, বিরোধী দলের ওপর সীমাহীন নিযার্তন চালিয়েছেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নিযার্তন চালিয়েছেন, ভোটের অধিকার থেকে যেভাবে জনগণকে বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে, দেশ যে সহিংসতার পথে এগিয়ে চলবে, এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে পরবতীর্ নিবার্চনে জনগণ যোগ্য সরকারকে ভোট দেবে। আর সে ভোটের ফল যে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের হাতে থাকবে, তা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায়। তাই আগামী নিবার্চনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কারচুপি করার তো প্রশ্নই আসে না।

সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই শেখ হাসিনা তার দলীয় অনুসারীদের বলেছেন, নিবার্চনে বিজয় সুনিশ্চিত করতে হলে, জনগণের আস্থা অজর্ন করুন। আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চনে যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রাথীর্রাই মনোনয়ন পাবেন। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। সুতরাং, আগামী জাতীয় নিবার্চনে কারচুপির সম্ভাবনা একেবারেই অমূলক ও অগ্রহণযোগ্য।

ডা. এসএ মালেক: রাজনীতিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12423 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1