শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু ঝুঁকিতে লাখো মানুষ বাস্তুহারা

মোহাম্মদ অংকন ঢাকা
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুযোর্গপ্রবণ দেশ হওয়ায় প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো দুযোর্গ আঘাত হানে। দুযোর্গ প্রতিরোধের অক্ষমতার কারণে অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। খাদ্য, সুপেয় পানি সংকটসহ বাসস্থানের প্রবল সংকট দেখা যায়। আন্তজাির্তক একটি পরিসংখ্যানে এসেছে, প্রাকৃতিক দুযোের্গর কারণে বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশের ৫৭ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝেমধ্যেই ঘূণির্ঝড়, জলোচ্ছ¡াস সংঘটিত হতে দেখা যায়। এসব দুযোর্গ মোকাবেলার অসক্ষমতায় প্রাথমিকভাবে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ে। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ভিটে-মাটি, জায়গা-জমি ও কাজকমের্র সুযোগ হারিয়ে দেশের অন্যত্র চলে যায় বৈ কী যেতে বাধ্য হয়। পরবতীের্ত বাস্তুহারা এই মানুষগুলোর বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকায় আশ্রয় নেয়। ঢাকায় বাড়তে তাকে জনসংখ্যা। পাশ্বর্বতীর্ দেশ সন্নিকটে হওয়ায় অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতেও আশ্রয় নেয়। কিন্তু এই বাস্তচ্যুত মানুষগুলো কী অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে সুখী হতে পারে? আগের মতো কী তাদের সংসার সাজাতে পারে? বরং তাদের অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়ে যায়। নিজস্ব জমি-জমা না থাকায় তারা আয় করতে পারে না। ফলে বেড়ে যায় দরিদ্রতা। অনাহারে, অধার্হারে জীবনযাপন করে কাটাতে হয় দুযোের্গ বাস্তুচ্যুতদের।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে দেশে ক্রমেই জলবায়ু শরণাথীর্র সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুযোর্গ এবং জলবায়ু পরিবতের্নর ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি হবে, তা এখনই অনুমান করা যায়। ইতোমধ্যে দেশে পদ্মা নদীর ভাঙনে গ্রামের পর গ্রাম মানুষ তাদের বসতি হারাতে শুরু করেছে। বষার্ মৌসুমের আগেও যারা বিত্তশালী ছিল, যাদের কাজের সুযোগ ছিল, তারাই আজ বাস্তুহারা। পদ্মার আগ্রাসনে বসত-বাড়ি সব কিছু বিলীন হয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি সমুদ্রের পানির উচ্চতা ১০০ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়, তাহলে দেশের উপক‚লবতীর্ এলাকার দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। একদিকে পদ্মা, যমুনার আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত মানুষ, অন্যদিকে সমুদ্রের আগ্রাসনে বাস্তুচ্যুত মানুষ, এত মানুষের ঠঁাই কোথায় মিলবে? জানি, এর একটি বিরাট অংশ ঢাকায় পাড়ি জমাবে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ভিড় করবে। আশ্রয়ের জন্য তারা বস্তি গড়ে তুলবে। ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে যারা ইতোমধ্যে পাড়ি জমিয়েছে, তারাও কোনো না কোনো দুযোের্গর শিকার। তবে তাদের অথের্নতিক অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। রোগ-শোকে তারা জজির্রত। শিক্ষালাভের সুযোগ নেই নতুন জন্মকৃত শিশুদের। ঢাকায় অবস্থানরত মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ ভাসমান। এবং এদের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু বা বাস্তুহারা মানুষ। কিন্তু এত সংখ্যক মানুষের জন্য কী গৃহায়ণ করা সম্ভব? না কি খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা দেয়া সম্ভব?

বাংলাদেশের উপক‚লে টনেের্ডার আঘাত ভয়াবহ। বিগত দিনে দেখেছি, এর ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিখঁুত যে সেখানে কিছু গাছের চিহ্ন ছাড়া দঁাড়ানো আর কোনো বস্তু থাকে না। টনেের্ডা ছাড়াও ঘূণির্ঝড়ের নিয়মিত শিকার হয় বাংলাদেশ। এ ছাড়া বজ্রপাত, ভ‚মিকম্প প্রায়ই সংঘটিত হচ্ছে। [এই নিবন্ধ রচনাকালীন আমি ভ‚মিকম্পের কম্পনে আতঙ্কিত হই। পরে ভ‚মিকম্পের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন মিডিয়ায় প্রচার হতে দেখা যায়। ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে সংঘটিত ভ‚মিকম্পের তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৩। ভ‚মিকম্পটির উৎপত্তি স্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৯৩ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্ত লাগোয়া উত্তর-পূবর্ ভারতের আসামে। এর গভীরতা ছিল মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। তবে এতে দেশে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।] সাম্প্রতিক সময়ের প্রাকৃতিক দুযোর্গ হতে যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় তা হলো- বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবতের্নর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির ফলে দেশের সমুদ্র উপক‚লীয় বিশাল এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই আশঙ্কা যদি সত্য হয়, তবে দেশে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা কোটি ছাড়াবে। তাই বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা হ্রাসকরণে এখনই জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশই ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাযর্ক্রম শুরু করে দিয়েছে। তবে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12606 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1