বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু: এখনো এক আতঙ্কের নাম

মো. মাঈন উদ্দিন কথা সাহিত্যিক ও প্রশাসনিক কমর্কতার্, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়ার সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু নামক এক আতঙ্কের নাম। রাজধানীসহ সারাদেশব্যাপী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। খবরে প্রকাশ ২৪ ঘণ্টায় ৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভতির্ হয়েছেন। গত তিন মাসে ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন ১১ জন। বতর্মানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন আছেন ২৮৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গড়ে প্রতিদিন ৮৫ জনেরও বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীবাসীর মনেও ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক।

যদিও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কতৃর্পক্ষ। তারা বলেন, আমরা বিষয়টি নজরদারি করছি। আমাদের পরামশর্ হচ্ছে, ডেঙ্গুর বিষয়ে সতকর্ থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামশর্ নিতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ এ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। ডেঙ্গু হলে অনেক সময় রেশ পরে উঠতে পারে। তিনি আরও জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর বাড়লেও তা ২০১৬ সালের তুলনায় বেশি নয়। কিন্তু যে সব ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তারাই কেবল জানে ডেঙ্গুতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু আছে না নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৪-৫ জন করে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতাল থেকে প্রাইভেট চেম্বারে বেশি ডেঙ্গুজ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পযর্ন্ত ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম। এডিস মশা ডেঙ্গুর বাহক। এ সময় জ্বর বা শরীরে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের লক্ষণ (যেমনÑ মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) দেখা দেয়, তখনই একে হেমোরেজিক ডেঙ্গু বলা হয়।

অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে জলীয় উপাদান কমে যায়। এ বছর হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে সাধারণত জ্বরের মাত্রা বেশি হয় এবং গায়ে রেশ ওঠে। এ বছর কম জ্বর এবং গায়ে রেশ ওঠেনি এমন ডেঙ্গু রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। জ্বর কম থাকায় এবং গায়ে রেশ দেখা না দেয়ায় অনেকে সাধারণ জ্বর ভেবে চিকিৎসকের কাছে যান। এতে করে রোগী সিরিয়াস অবস্থায় চলে যাচ্ছে, যাদের বঁাচানো কষ্টকর। কারও ৪-৫ দিন জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামশর্ নিতে হবে। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পযর্ন্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রচুর পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে।

তথ্যমতে, ডেঙ্গুজ্বরের ধরন ও প্রাদুভাের্বর বিষয়টি সাবর্ক্ষণিক পযের্বক্ষণ করে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। চলতি বছর যারা মারা গেছেন, তাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আইইডিসিআরের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী এবং এ রোগে মৃতদের তথ্য সংগ্রহ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভতির্ হয়েছেন ৬০ জন। বতর্মানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ২৮৫ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল রোববার পযর্ন্ত ৯ দিনে ৭৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৮৫ জনেরও বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের ২২টি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এসব হাসপাতালের বাইরেও বিভিন্ন হাসপাতাল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তাদের কোনো পরিসংখ্যান সাধারণত অধিদপ্তরের কাছে থাকে না।

কন্ট্রোলরুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল রোববার বিকাল পযর্ন্ত ৩ হাজার ৬৮২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ৭৬৬ জন, আগস্টে ১ হাজার ৬৬৬, জুলাইয়ে ৮৮৭, জুনে ২৮৬, মে মাসে ৩৫, এপ্রিলে ১৪, মাচের্ ৫, ফেব্রæয়ারিতে ৭ জন এবং জানুয়ারিতে ২৬ জন। এর মধ্যে জুনে ৩ জন, জুলাইয়ে ৪ জন এবং আগস্টে ৪ জনসহ ১১ জন মারা গেছেন। ডেঙ্গুজ্বরে গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে সবাির্ধক লোক মারা যায়Ñ ১৪ জন। তবে এ বছর মাত্র তিন মাসেই মারা গেছেন ১১ জন।

ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৫৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়; মারা যায় ৮ জন। ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৭৬ জন আক্রান্ত হয়; মারা যায় ১৪ জন। ২০১৫ সালে ৩ হাজার ১৬২ জন আক্রান্ত হয়; মৃত্যু হয় ৬ জনের। ২০১৪ সালে ৩৭৩ জন, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১ হাজার ২৮৬ জন, ২০১১ সালে ১ হাজার ৩৬২ এবং ২০১০ সালে ৪০৯ জন ডেঙ্গু-আক্রান্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, জুন থেকে অক্টোবর ডেঙ্গু রোগ ছড়ানো বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার ফেব্রæয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব আগে থেকেই বাড়তে থাকে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ফলে রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। এ জ্বর থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা যেন বংশবিস্তার করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসা বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।

মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটিয়ে থাকে। তবে রাজধানীবাসী বরাবরই বলে আসছেন যে, মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের কাযর্ক্রম মোটেও সন্তোষজনক নয়। আসলে মিডিয়ায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্পকের্ কতৃর্পক্ষের কথাগুলো মিষ্টি লাগলেও প্রান্তিক পযাের্য়র জনগণ ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোনো সেবাই পায় না। এদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুভার্ব দিনকে দিন বেড়ে যাওয়ায় এই ডেঙ্গুজ¦র সাধারণ জনগণের মধ্যে এক আতঙ্কের কারণ হয়ে দঁাড়িয়েছে সুতরাং ডেঙ্গুর প্রভাব বিস্তার রোধে জনগণকে যেমন সচেতন হতে হবে। তেমনি সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12610 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1