শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রভাত বাংলাদেশ

মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই সম্মানের পাত্র। দীঘর্ ৪৭ বছর পরও কি কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা তার কোনো সন্তানাদির কমর্সংস্থান হয়নি? কিন্তু বংশ পরম্পরায় এটা চলতেই থাকবে তা বিবেচনার বিষয় হতে পারে না।
মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষাথীর্ ও চাকরিপ্রাথীর্রা দীঘির্দন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের একপযাের্য় ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন ‘কোটা নিয়ে যখন এত কিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব’ এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না। তিনি কোটা সংস্কারবাদীদের দাবিটি পূরণ করবেন এবং এই জন্য তিনি একটি কমিটিও গঠন করবেন, সেই কমিটি গঠনে বিলম্বের জন্য ছাত্ররা আবারও মাঠে নামল এবং তাদের ওপর যে অত্যাচার নিযার্তন করা হলো জনগণ তা প্রত্যক্ষ করল। এই দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি নিদের্শনা দেয়ার পরেও তা বাস্তবায়ন করতে আমলাদের এত গড়িমসির পিছনে কোনো মতলব আছে কিনা তা ভেবে দেখা সরকারের উচিত। কেননা প্রায়ই পত্রিকা খুললেই নজরে পড়ে যে, দেশ নিয়ে চক্রান্ত চলছে, বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের স্বাথের্ গুজব ছড়াচ্ছে, জঙ্গিরা তৎপর, ছদ্মবেশী শত্রæরাই বেশি সক্রিয় ইত্যাদি ইত্যাদি খবর পত্রিকায় প্রতিদিন দেখা যায়। এগুলো দেখা এবং এর প্রতিকার করার জন্য নিশ্চয়ই সরকারের মনিটরিং সেল রয়েছে, তাদের কাছে এই ধরনের সংবাদ থাকা সত্তে¡ও কেন দ্রæত ব্যবস্থা না নিয়ে বতর্মান সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্ অজর্ন ঘরে ঘরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার যে উদ্যোগ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত তা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে? উন্নত প্রযুক্তির কারণে দেশের কোথায় কি হয় তা আমাদের দেশপ্রিয় বিভিন্ন সংস্থার কতার্-ব্যক্তিদের না জানার কথা নয়, তবুও তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতিতে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানকে গুজব বা চক্রান্ত বলে চালিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

ডিজিটাল যুগে আমরা ঘরে বসেই কোটা সংস্কারবাদীরা রাস্তায় বা কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের কাযর্ক্রম করছে তা জানতে পারি, তাদের কারা নিযার্তন করেছে তার তথ্যও আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি। যারা নিযার্তন করল তাদের পরিবতের্ যারা নিযাির্তত হলো তাদের কেন কারারুদ্ধ হতে হলো তা জাতির বিবেকের কাছে আজ বড় প্রশ্ন? অবশেষে ঈদের আগেই নিযাির্তত অনেকেই জামিন পেয়ে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন কিন্তু এখনো অনেকেই কারাগারে আছে। যারা কোটা সংস্কারের কাজে কারাবাস করেছে বা করছে তারা শুধু নিজের স্বাথের্ নয় দেশের আপামর ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের চাহিদার প্রেক্ষিতেই রাস্তায় নেমেছে। অনেক জায়গায় অভিভাকদেরও তাদের সহযোগিতায় দেখা গেছে। যদি সারা জীবন বিভিন্ন ধরনের কোটা বিদ্যমান থাকে তাহলে দেখা যাবে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাবে, ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে না।

মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই সম্মানের পাত্র। দীঘর্ ৪৭ বছর পরও কি কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা তার কোনো সন্তানাদির কমর্সংস্থান হয়নি? কিন্তু বংশ পরম্পরায় এটা চলতেই থাকবে তা বিবেচনার বিষয় হতে পারে না।

আমরা সত্যিই হতাশ হই যখন শুনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এখনো প্রণয়ন করা হচ্ছে। যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যাই জানা নেই, সেখানে কোটায় বংশ পরম্পরায় কীভাবে মেধাশূন্যভাবে সরকার তাদের কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করবেন! এক কথায় বলতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের সময় একমাত্র রাজাকার, আলবদর, আল শামস এরা ছাড়া আপামর জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই আমাদের মহান স্বাধীনতা এই কথা ভুলে গেলে চলবে না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মাচর্ ভাষণের পরে সব ছাত্র, কৃষক, পুলিশ, মিলিটারি তথা আপামর জনতা যার যা আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত ছিল এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর তথাকথিত রাজাকার আলবদর, আল শামসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাই দেশের স্বাথের্ যোগ্যপ্রাথীর্র সন্ধান আমাদের অবশ্যই করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ১২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, উচ্চ আদালতের নিদের্শনার কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোটের্র রায় রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করার। আর কোটা যদি পূরণ না হয়, তাহলে মেধা কোটা থেকে তা পূরণ করা যাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক। এ কারণে সংস্কারের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কোনো পরিবতর্ন করতে হলে আবার আদালতের নিদের্শনা লাগবে।

গত ১৪ আগস্ট ২০১৮ কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনুযায়ী তথ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন তারা কোটা উঠিয়ে দেয়ার সুপারিশ করবেন, এর পাশাপাশি মেধাকে প্রাধান্য দেয়ারও সুপারিশ করবেন। বতর্মানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগ হয় কোটায়, বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। বিসিএসসহ প্রথম শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০, জেলা কোটা ১০, নারী কোটা ১০ এবং ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ। তা ছাড়া তৃতীয় ও চতুথর্ শ্রেণির সরকারি চাকরিতেও বিভিন্ন ধরনের কোটা বিদ্যমান।

১৯ আগস্ট এক পত্রিকায় দেখলাম স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া বাকি সব কোটা বাতিল হচ্ছে। আসলে সরকার বা কোটা সংস্কার কমিটি কি চাচ্ছে তা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে পরিষ্কার কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

২৮ আগস্ট ২০১৮ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী কোটাসংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নিবার্হী বিভাগের বা সরকারের। কোটা সংস্কারসংক্রান্ত সচিব কমিটি এমন অভিমত পেয়েছে অ্যাটনির্ জেনারেলসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমর্কতার্রা একথা জানিয়েছেন। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই কোটাবিষয়ক চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিষয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এর আগেও কোটাসংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। কোটা সংস্কার, কোটা সংরক্ষণ, নাসর্ নিয়োগে কোটা এককালীন শিথিল, বিভিন্ন বিসিএসের ক্ষেত্রেও এককালীন কোটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা।

এদিকে কোটা বাতিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোটের্র কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আইনি পরামশর্ নিতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটাসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে করণীয় কী হবে, তা জানতে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স চাওয়ার দরকার আছে কিনা, তা আমরা এখনো চ‚ড়ান্ত করিনি। বিষয়টি নিয়ে আমরা দু-একদিনের মধ্যেই বসব’।

কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। আর প্রতিটি দেশের নিবার্হী বিভাগের নেয়া নীতির ভিত্তিতেই কোটাব্যবস্থা পরিচালিত হয়। বিশ্বের কোনো দেশে কখনো এটা বিচার বিভাগের নিদের্শনার ভিত্তিতেই চলেনি। সুতরাং অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলম যদি সত্যিই মতামত দেন যে বিষয়টি নিবার্হী বিভাগের সিদ্ধান্তের ওপরই নিভর্র করছে, তাহলে আমরা তাতে বিস্ময়ের কিছু দেখি না।

তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার সংস্কারে জেগে ওঠা উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এর আগে এ বিষয়ে আদালতের দেয়া রায়কে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছিল। বিভিন্ন মহল থেকে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয় যে এই বিষয়ে বিভিন্ন মামলায় আদালত যা বলেছেন, তা নিতান্তই ‘পযের্বক্ষণ’। আইনি মত হলো, পযের্বক্ষণ ঐচ্ছিক, নিবার্হী বিভাগের প্রতি তা মেনে চলা বাধ্যতামূলক নয়। অবশ্য আমাদের অনুসন্ধানে এটা পরিষ্কার যে এ বিষয়ে রায় বা পযের্বক্ষণ যা-ই থাকুক না কেন, তা কোটা সংস্কারে নিবার্হী বিভাগের এখতিয়ারকে সংকুচিত করে না। কোনোভাবেই আদালতের অবস্থানকে কোনো প্রতিবন্ধকতা বলা আগেও যেত না, এখনো যাবে না। অবিলম্বে এর একটা ফয়সালা না করা হলে সাবির্ক বিচারে এটা নিবার্হী বিভাগের তরফে এক ধরনের পলায়নপরতা কিংবা কালক্ষেপণের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হবে।

অ্যাটনির্ জেনারেল রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ আইন কমর্কতার্। তিনি যে অভিমত দিয়েছেন, তার আলোকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কমিটি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে অনুযায়ী মন্ত্রিসভাকেই পরিবতির্ত নীতিনিধার্রণী সিদ্ধান্ত কোনো প্রকারের রাখঢাক ছাড়াই ঘোষণা করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বাংলাদেশের আগে বিশ্বের বহু দেশ জাতির গবির্ত সন্তান ও তাদের পোষ্যদের জন্য যথাকরণীয় কী হতে পারে, তার সফল নজির স্থাপন করেছে। সুতরাং বিষয়টি অনুসরণ করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন নয়।

আমরা বিশ্বাস করি, ক্ষমতাসীন দলের নীতিনিধার্রকেরা জানেন, দেশের স্বাথের্ কোনটি সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার সংকেত তার নিদের্শনা দেয়ার দায়িত্বও সরকারের।

আমাদের মান্যবর রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান, সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন মানুষ শুধু তাই নয় তিনি মানবদরদিও; আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতি এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী একজন মা। জাতির এই ক্রান্তিকালে নিশ্চয় সঠিক ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের মায়ের ¯েœহ দ্বারা আবিষ্ট করবেন।

১৮ আগস্ট ২০১৮ সালে পরলোকগত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান গত বছর ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সভায় বিশেষ অতিথির ভাষণে বলেন ‘আজ বিশ্বের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ হলো তরুণ। এই তরুণদের একটা বড় অংশই শান্তি, টেকসই, উন্নত ও মানবতার জন্য নিবেদিত প্রাণ। আমার জীবনে বহু তরুণদল, ছাত্রসংগঠন, তরুণ নেতার মুখোমুখি বসেছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মেধা, জ্ঞান, একটা সুন্দর পৃথিবী গড়ার যত ভাবনা, সব সময় আমাকে অবাক করেছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে তোমাদের প্রজন্ম অনেক বেশি মুক্তমনা। তোমরা বিশ্ব নাগরিক, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো প্রজন্মের জন্যই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকাটা এত সহজ ছিল না। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের প্রজন্ম যা অজর্ন করতে পারেনি, তোমরা তা করে দেখাবে।

প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বলছি আমাদের তরুণ শক্তিকে দমন-পীড়ন না করে উজ্জীবিত করতে হবে। ভবিষ্যতের কাÐারি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সুরে বলতে হয় ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে’। আশা করি আমাদের বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়কদের বাস্তব ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তেই প্রত্যাশিত সুপ্রভাত একদিন দেখা যাবে।

মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও

ইসলামী কমাশির্য়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12786 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1