শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পবিত্র আশুরা

ত্যাগের মহিমায় শুদ্ধ হোক অন্তর
নতুনধারা
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ইসলামী বষর্ পরিক্রমার প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে প্রিয় নবী হজরত মুহম্মদ (সা.) আশুরা নামে অভিহিত করেছেন। বিশ্ব ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূণর্ ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে। সেগুলো যুগে যুগে মুসলমানদের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোত। আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশরুন’ থেকে এসেছে। আশুরা মানে দশম। আশুরা বহু উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়া ও ধ্বংস-সৃষ্টির স্মৃতি ধারণ করে আসছে। এই মাসে হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউনকে সদলবলে সাগরে ডুবিয়ে মেরেছেন। পবিত্র আশুরার দিনে হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন করেন এবং মুক্তির উপত্যকায় পেঁৗছান, হজরত ঈসাকে (আ.) আসমানে তুলে নেয়া আবার এদিনেই হজরত আদম (আ.) ও হজরত দাউদ (আ.)-এর তওবা কবুল হয়। এই দিনের আরও নানা ঘটনা ইতিহাসে পাওয়া যায়। আর আশুরার ঘটনা পরম্পরায় হিজরি ৬১ সনে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইতিহাসের নিমর্মতম, হৃদয়বিদারক ও মমর্স্পশীর্ ঘটনা সংঘটিত হয়। এতে ঘটনাবহুল আশুরার সঙ্গে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার সংযোগ হয়। মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ও হজরত আলী (রা.)-এর পুত্র হোসাইন (রা.) এই দিন দামেস্কের অধিপতি ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অত্যন্ত নিমর্মভাবে শাহাদাতবরণ করেন। অন্যায়, অসত্য ও শোষণের বিরুদ্ধে কারবালা প্রান্তরে এই বিয়োগান্ত ঘটনাকে মুসলিম বিশ্ব প্রতি বছর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করে। আজ সেই দিন, পবিত্র আশুরা।

ইতিহাস অনুযায়ী, মহররমের ১০ তারিখে কারবালা প্রান্তরে আহলে বাইত ও হোসাইন (রা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে মোট ৭২ জন শহীদ হন। কারবালার প্রান্তরে হোসাইন (রা.) নিজের প্রাণ বিসজর্ন দিয়ে অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করার শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। তাই প্রয়োজন আদশের্র প্রতিষ্ঠা ও চেতনার জাগরণ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা/ত্যাগ চাই, মসির্য়া ক্রন্দন চাহি না।’ প্রাক-ইসলামী যুগেও আশুরার ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। সময়ের ব্যবধানে আজ আশুরা চেতনার জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় নিয়ে টিকে আছে। কোথাও একে স্মরণ করা হচ্ছে শোকের স্মারক হিসেবে, কোথাও আনন্দের উপাদান হিসেবে। আবার কোথাও প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে। মুসা (আ.)-এর অনুসারী ইহুদিরা আল্লাহর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আশুরার দিনে উপবাস করে। শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া, মাতম, মসির্য়া ও মিছিলের মাধ্যমে এই দিনে শোক প্রকাশ করে। আশুরা উপলক্ষে ইসলাম ধমের্ দুটি নফল রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। আশুরা ও কারবালার মূল চেতনা ক্ষমতার লোভ, চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কারবালায় সংঘটিত ওই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলমানরা জেগে ওঠে। আর তখন থেকে ইসলামের জাগরণ ও অগ্রযাত্রা নতুনভাবে দৃশ্যমান হয়। কারবালার শিক্ষা মুসলমানদের সঠিক পথের দিশা দিয়েছে। দিয়েছে কতর্ব্য কমের্র নিদের্শনাও। এটা শেষ হয়ে যায়নি, হবারও নয়। ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, ধমর্-অধমর্Ñ এসবই সুস্পষ্ট। ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়কে সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে ধমের্র সঙ্গে অধমের্ক গুলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। তবে এই দিবস পালন করতে গিয়ে বা শোক প্রকাশ করতে গিয়ে ধমের্র প্রকৃত চেতনার সঙ্গে সাংঘষির্ক যে কোনো কমর্পন্থা গ্রহণ অনুচিত। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) দুবৃের্ত্তর শাসন মানেননি। জালেমকে ছাড় দেননি। অন্যায়কে বরদাশত করেননি। মিথ্যাকে স্বীকার করেননি। অধমের্ক সহ্য করেননি। ফলে হজরত ইমাম হোসাইনের (রা.)-এর পথ অনুসরণ করা গেলে সব ধরনের অধমর্ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের জাগরণ ঘটতে পারে বলেই প্রতীয়মান হয়।

সবোর্পরি বলা যেতে পারে, সমকালীন বিশ্ববাস্তবতায় আশুরার আদশের্ উজ্জীবিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সত্য ও ন্যায়ের জয় ঘটানোর জন্য মহানবীর আদশর্ অনুসরণও জরুরি। প্রত্যাশা থাকবে, অন্যায়, শোষণ ও ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে কারবালার ত্যাগের মহিমায় সবার অন্তর আলোকিত ও শুদ্ধ হোক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<13488 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1