শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের নারীদের সিরিজ জয়

এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে
নতুনধারা
  ০১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল। বিদেশের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে দলটি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের উন্নতি চোখে পড়ছে বেশ। কদিন আগে ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করে সালমা খাতুনের দল। তবে আয়ারল্যন্ডের বিপক্ষে বৃহস্পতিবার সমীকরণ একটু কঠিন ছিল। ১৮ বলে ২৭ রান। শুক্রবার সেখানে ১৮ বলে ১৭। শুক্রবার ১ বলে ১ রানের সমীকরণ মেলাতে হয়েছে। স্নায়ুপরীক্ষার সুযোগই দিলেন না বাংলাদেশের মেয়েরা। ৬ বলে ৬ রানের হিসাবটা দারুণ এক পুলে এক ঝটকায় মিলিয়ে দিয়েছেন সানজিদা। এটা নারী ক্রিকেটারদের প্রথম কোনো সিরিজ জয়। আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করে সালমা-সানজিদা-শামীমারা নিজেদের সাফল্যের মুকুটে যোগ করলেন আরেকটি নতুন পালক। নিজেদের সামথের্্যর সবোর্চ্চটুকু মেলে ধরতে পারলে কোনোকিছুই যে অসম্ভব নয়, তা দেখিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।

জানা যায়, ডাবলিনে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজে দ্বিতীয় দিন প্রথমে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে ১২৪ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। জাহানারা ও নাহিদা আক্তার ২টি করে এবং রুমানা আহমেদ ও ফাহিমা খাতুন ১ টি করে উইকেট শিকার করেছেন। তবে ১২৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা বাংলাদেশকে শেষদিকে কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়। শামীমা সুলতানা ও ফারজানা হকের দুদার্ন্ত ব্যাটিংয়ে স্বচ্ছন্দেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। দু’জনের দ্বিতীয় উইকেট জুটি যোগ করে ৭৫ রান। মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সবোর্চ্চ রান। শামীমা করেন ৫১ আর ফারজানা ৩৬। জুটিটা ভাঙতেই হঠাৎ ছন্দপতন। ১৩.৩ ওভারে ১ উইকেটে ৯৬ রান তোলা বাংলাদেশের যেখানে সহজেই লক্ষ্যটা পেরিয়ে যাওয়ার কথা, ২১ রানের মধ্যে হুট করে ৫ উইকেট হারিয়ে কাজটা হঠাৎ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে শেষ পযর্ন্ত জয় তুলে নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা এটা প্রমাণ করেছে যে, কঠিন কাজকে জয় করতে তারা শিখেছেন। শিখেছেন কীভাবে দলকে সাফল্য এনে দিতে হয়। ৪ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ দলের পক্ষে শামিমা সুলতানা করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। এখন পযর্ন্ত নারী ক্রিকেটে হওয়া তিন হাফ সেঞ্চুরির দুটিই করেছেন তিনি।

এতদিন পযর্ন্ত নারী ও পুরুষ সব ধরনের ক্রিকেটেই আমাদের অজর্ন সীমাবদ্ধ ছিল কেবল দ্বিপক্ষীয় কিছু সিরিজ জয়ের মধ্যে। সম্প্রতি নারী ক্রিকেটাররা এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তোলার পর এবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজও নিশ্চিত করল। এসব জয়ের মধ্য দিয়ে শিরোপা জয়ের খরা যেমন মুছেছে, তেমনি সম্ভাবনার নতুন বন্দরে পা রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। নারী ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক দুটি জয়ের যে অনেক তাৎপযর্ রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বলাই বাহুল্য, খেলাধুলা থেকে শুরু করে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে, বিশেষ করে ছেলেদের ক্রিকেটে যেখানে সাফল্য প্রায় শূন্য; সেখানে মেয়েরা এশিয়া কাপ অজর্ন এবং সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। নারী ক্রিকেটের ধারাবাহিক এই জয় সাবির্কভাবে ক্রিকেটে অনুপ্রেরণা জোগাবে, অন্যদিকে নীতিনিধার্রকদেরও নারীদের জন্য খেলাধুলা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা ও বরাদ্দ বাড়িয়ে দিতে দায়িত্বশীল করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।

সবোর্পরি বলতে চাই, নারী ক্রিকেট দল যেহেতু ধারাবাহিক সাফল্য তুলে এনে ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে, সেহেতু বিসিবি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রতি আমাদের পরামশর্ থাকবে, ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের সব ধরনের সুযোগ- উন্নত অবকাঠামো থেকে বিশ্বমানের কোচিং স্টাফ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নারী ক্রিকেটাররা প্রমাণ রেখে চলেছে যে, দলগত খেলা ক্রিকেটে আত্মবিশ্বাস থাকলে জয় পাওয়া কঠিন কোনো বিষয় নয়। ফলে নারীদের বিশ্বমানের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নিতে হবে সবোর্চ্চ উদ্যোগ। নারী ক্রিকেট দলের সাফল্যের হাত ধরে জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে- এটিই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে