বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ দিনে নিহত ৪০৫ জন

ভ্রমণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি
নতুনধারা
  ০১ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

দেশে যাতায়াতজনিত দুঘর্টনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুঘর্টনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুঘর্টনায় মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। ঈদুল ফিতর উদযাপন শেষে রাজধানীতে ফিরতি যাত্রায় একদিনেই ৩৯ জন নিহত হয়েছেন বিভিন্ন সড়কে। এই চিত্র নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, এবার ঈদে ঘরে ফিরতে গিয়ে নৌ, রেল ও সড়ক দুঘর্টনায় মাত্র ১৩ দিনে নিহত হয়েছে ৪০৫ জন। এ ছাড়া নৌ দুঘর্টনায় এখনো ২৫ জন নিখেঁাজ রয়েছে। এককভাবে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে সড়ক দুঘর্টনায়। নিহত মানুষের সংখ্যা ৩৩৯ জন। আর আহত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জন। অন্য বছরের তুলনায় এবার বেশি মানুষ বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুঘর্টনায় নিহত হয়েছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সরকারকে কঠোর ভ‚মিকা রাখতে হবে। সড়কের অব্যবস্থাপনা রোধ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির ‘ঈদ যাত্রায় সড়ক দুঘর্টনা প্রতিবেদন ২০১৮’-তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সড়ক দুঘর্টনার এই ভয়াবহ চিত্র আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে।

এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, প্রতিদিনই এখানে মানুষ মারা যাচ্ছে অত্যন্ত মমাির্ন্তকভাবে। কিন্তু ভয়াবহ এ দুঘর্টনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুঘর্টনা প্রতিরোধে কাযর্কর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কতৃর্পক্ষ এ ব্যাপারে কাযর্কর উদ্যোগ নিলে দুঘর্টনা রোধ করা সম্ভব। সড়ক দুঘর্টনার জন্য দায়ী মূলত অবৈধ চালক ও চালকের অসতকর্তা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও সড়ক-মহাসড়কের ভঙ্গুর অবস্থা। সড়ক দুঘর্টনা রোধে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে সরকার অভিযানও চালিয়েছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

গত ১৫ বছরে সড়ক পথে ৫৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ৭০ হাজার মামলাও হয়েছে বিভিন্ন দুঘর্টনায়। অন্যদিকে রাজধানীতে বছরে ১৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটছে সড়ক দুঘর্টনায়। ৩ বছরে ৬ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন রাজধানীতে। মানুষের জীবন যে কত তুচ্ছ তা এসব ঘটনার দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো। যোগ্য ও দক্ষ লোকেরাই যেন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিআরটিএর। যদি যোগ্য লোককে লাইসেন্স দেয়া হয় তা হলেই সড়ক দুঘর্টনা কমে আসবে। এ ছাড়া চালকের বিশ্রামের বিষয়টিও ইদানীং আলোচনায় উঠে এসেছে। ঘুমহীনভাবে গাড়ি চালাতে গেলে দুঘর্টনা ঘটবেই। এ ছাড়া শিক্ষিত ও সচেতন চালক নিয়োগ দেয়াও জরুরি। দূর পাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চালকদের একটানা পঁাচ ঘণ্টা গাড়ি চালাতে না হয় সে জন্য তিনি বিকল্প চালক রাখার নিদের্শনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা বাস্তবসম্মত।

মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুঘর্টনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুঘর্টনায় মৃত্যুর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ ও শিক্ষিত চালকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মমাির্ন্তক মৃত্যু রোধ করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে