শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক ঠেকাবে নাকি অপপ্রচারকারী?

যেসব বিধান অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ থেকে সরকার সেই সব বিধান অপসারণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।
মীর আব্দুল আলীম
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সংসদের চলতি অধিবেশনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ পাস হয়েছে। এ আইনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতকির্ত ৫৭ ধারাসহ ৫টি ধারা বিলুপ্ত করা হলেও এ ধারার অনুরূপ বেশকিছু বিধান রেখেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগের। তাই এ নিয়ে সাংবাদিক, সংবাদপত্রের মালিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকমীর্ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতকির্ত ৫৭ ধারাটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারার প্রতিচ্ছবি কি-না, তা নিয়েই এখন সবার প্রশ্ন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো ধারা, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অনুলিখন হলে তো শঙ্কা আর প্রশ্ন থাকেই?

ভাবছি, সত্যিই সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধের জন্য ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ কি-না। অবশ্য আজকাল যেভাবে ডিজিটাল অপপ্রচারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, তা ভাবনারই বিষয়। মুহ‚তের্ই উদ্ভট সব অপপ্রচার চলে নানা ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে সরকার বিব্রত। কতক পত্রপত্রিকাও এমন প্রচারে সুখ পায় বটে! তাতে সরকার এমনি বিশেষ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। মিথ্যা প্রচার-প্রচারনা আমাদেরও উৎকণ্ঠায় ফেলে। তাই ডিজিটাল অপপ্রচারকারীদের কণ্ঠরোধের প্রয়োজন আছে বৈকি! ডিজিটাল অপপ্রচারকারীদের কণ্ঠরোধ করতে গিয়ে যেন সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা না হয় সেটাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়। সাংবাদিক সমাজে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সরকারকে দূর করতেই হবে। উৎকণ্ঠারও কিন্তু কারণ আছে। এর আগে ৫৭ ধারা নিয়ে দেশজুড়ে সাংবাদিকরা সোচ্চার হয়েছিলেন। তখন বলা হয়েছিল কোনো সাংবাদিক এ ধরায় হয়রানির শিকার হবেন না। কিন্তু আমরা কি দেখেছি? এ ধারায় সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন।

দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে কোনো সময়ই সংবাদপত্রের অবাধ স্বাধীনতা ছিল না। কখনো সংবাদপত্রের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেন্সরশিপ, প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন কালাকানুন। গণমাধ্যমের কাযার্লয়ে পুলিশের মারমুখী অনুপ্রবেশ, কমর্রত সাংবাদিককে চোর-ডাকাতের মতো আটক করার ঘটনা ঘটেছে অনেক। এবার নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে। সাংবাদিকরা এ নিয়ে এখন বেশ সোচ্চার। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং সংবাদপত্র মালিক সংগঠনও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন কিংবা বাতিল না হলে সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র অনৈতিক চাপের মুখে পড়বেন বৈকি!

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিধানগুলোর অপপ্রয়োগের আশঙ্কা প্রবল। উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রথম করা হয় ২০০৬ সালে। পরে ২০১৩ সালে শাস্তি বাড়িয়ে আইনটিকে আরও কঠোর করা হয়। এ আইনের ৫৭ ধারায় গত কয়েক বছরে সাংবাদিক ও সরকারি দলের প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক নেতা-কমীর্সহ বহু মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকগণ হয়রানী হয়েছেন সব চেয়ে বেশি। এর মধ্যে আমার কাছের মানুষ চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোরসালীন বাবলাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে একাধিক মামলায় হয়রানি করা হয়। এটা স্পষ্ট যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া পযাের্লাচনা করে দেখা গেছে, এতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কোনো মৌলিক পরিবতর্ন আসেনি। ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো উল্লেখ ছিল একসঙ্গে, নতুন আইনে সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে মাত্র। তবে অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তির মাত্রা কিছুটা কমানো হয়েছে। তা সত্তে¡ও নতুন আইনের ১৪টি ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে হয়রানির আশঙ্কা প্রবল, যা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে। যেমন, আইনটির ৩২ ধারায় ডিজিটাল অপরাধের বদলে গুপ্তচরবৃত্তির সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়াকর্ বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা সংরক্ষণে সহায়তা করেন, তাহলে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে।’ এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ১৪ বছরের কারাদÐ বা ২৫ লাখ টাকা অথর্দÐ বা উভয় দÐে দÐিত হবেন। আর এ অপরাধ একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদÐ বা এক কোটি টাকা অথর্দÐ অথবা উভয় দÐে দÐিত হবেন। এটা সাংবাদ পত্র সংশ্লিষ্ট। আর এর জন্য সাংবাদিকরাও যে হয়রানির শিকার হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নাই। সাংবাদিক সমাজ এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী ও হয়রানিমূলক কোনো আইনই কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রকে বাস্তবস্বাধীনতার পক্ষে সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।

একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরি। বতর্মান সরকারের উন্নয়ন কমর্কাÐ সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমেই উঠে আসছে। বলতে দ্বিধান নেই অধিকাংশ সাংবাদিক এবং ২/১টি ছাড়া সকল সংবাদপত্র তথা প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স গনমাধ্যম সরকারের পজেটিভ কমর্কাÐ তুলে ধরে সরকারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। এদেশের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক সমাজ সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। তবে কেন এমন কঠোর আইন করছে সরকার। তাতে সাংবাদিক সমাজ সরকারের বিপক্ষে বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। যা সরকারের জন্য মোটেও শুভ হবে না। ডিজিটাল আইনে আপত্তি ও বিতকির্ত ধারাগুলো অপরিবতির্ত রেখে সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা খুবই উদ্বেগজনক। একদিকে বিলের ৮, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারার বিষয়ে গণমাধ্যমকমীের্দর উদ্বেগ ও মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যা তাদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে বিতকির্ত ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩ অনুসরণের সুপারিশ করার দৃষ্টান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। নিবতর্নমূলক এই আইন সংযোজনের উদ্দেশ্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন তোলাই স্বাভাবিক।

এখানে স্পষ্ট যে, বিতকির্ত ৫৭ ধারার বিষয়গুলো এ আইনেও চারটি ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। আইনের ১৪টি ধারার অপরাধ হবে অজামিনযোগ্য। বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে, ১৮০ কাযির্দবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে। প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারার অপপ্রয়োগের ফলে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী দুনীির্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত আইনি অধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হবে। ফলে এই ধরনের অপরাধের আরও বিস্তার ঘটবে। এ ছাড়াও অনুসন্ধানীমূলক সাংবাদিকতা ও যে কোনো ধরনের গবেষণামূলক কমর্কাÐ পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এটি আইনে পরিণত হলে তা সংবিধানের মূল চেতনা, বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করবে। ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি কল্যাণ, দুনীির্ত প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটি তাতে বাধা সৃষ্টি করবে। গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের ভূমিকা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। গণমাধ্যমসহ সব নাগরিকের সমস্ত ধরনের ভয়ভীতির ঊধ্বের্ থেকে সরকারকে সহযোগিতা প্রদান এবং বাধাহীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে তার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ জন্য জনমত যাচাই করা যেতে পারে।

নীতিমালার নামে মানুষের বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ যেমন নিন্দনীয়, তেমনি স্বাধীনতার নামে স¤প্রচারমাধ্যম এবং পত্রপত্রিকাগুলোর দ্বারা এর অপব্যবহার করে সমাজে টেনশন ও গোলযোগ সৃষ্টিও কাম্য নয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রহরণেরই নামান্তর। তা করা মোটেও সুখকর নয়। বিশ্বে কোনো দেশে কোনো সময় তা সুফল বয়ে আনেনি। সরকারের কোনো আইন বা নীতিমালার বিরুদ্ধে আমি নাই। যে কোনো কিছুর জন্য নীতিমালা থাকা ভালো। সমস্যাটা হলো অপব্যবহারের। আর আমাদের দেশে এ সমস্যাটা প্রকট। আমরা সময় সুযোগ পেলেই যে কোনো কিছুর অপব্যবহার করি। ধরে নিই কোনো এক কামার ধারালো কোনো অস্ত্র (যেমন দা) বানাল নিত্যপ্রয়োজন সারতে। সে দা দিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা করা হলো। তাহলে কমর্টা কেমন হবে? যে অস্ত্র মানুষের কল্যাণে বানানো হলো তা ভালো কাজে ব্যবহার না করে মানুষের গলা কেটে দেয়া হলো। ঠিক তেমনি যে নীতিমালা বাকস্বাধীনতার সৌন্দযর্ রক্ষায় প্রণীত হবে, সে নীতিমালা যদি ‘নিয়ন্ত্রণের’ রূপ নিয়ে সেই আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতাকেই টুঁটি চেপে ধরে, তা ঠেকাবে কে? প্রশ্ন হলো, সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদিত নীতিমালাটি যথেষ্ট সতকর্তার সঙ্গে প্রণীত হয়েছে কি? সরকার সংশ্লিষ্টদের ভাষায় নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকগণ হয়রানি হবেন না। যদি তাই হয়, তাহলে ভালো কথা।

প্রকৃতপক্ষে সব সরকারই গণমাধ্যম নিন্ত্রয়ণ করতে চায়। সেই স্বাধীনতা-পরবতীর্ সময় থেকে যে শুরু আজও তার শেষ নেই। তবে পুরোপুরি তা পারে না কোনো সরকারই। তা হয় কেবল সাময়িক। একটা বিষয় বরাবই আমরা দেখে আসছি, আধুনিক বিশ্বে মোটামুটি সব দেশেই সরকার এবং তার দোসর বাহিনী গণমাধ্যমের ওপর চড়াও হয়েছে। বিশেষ করে নিবাির্চত গণতান্ত্রিক শক্তি বলে পরিচিত সরকারগুলো যখন ক্ষমতা দীঘাির্য়ত করতে চায়, তখন গণমাধ্যমের দুদির্ন নেমে আসে। আর বলতে গেলে আমাদের দেশে সংবাদপত্র প্রকাশের আগেই নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য প্রকাশক ও মুদ্রণকারীকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘোষণা দিতে হয়। নিয়মিত বা সাময়িক সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য পূবার্নুমতি গ্রহণ করতে হয়। এটি সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশে কতখানি আনুক‚ল্য তৈরি করতে পারে, তা সহজেই বোধগম্য। সরকারি অফিসগুলোর পেছনে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে অনেক সংবাদপত্রের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি লাভের পর নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে পদচারণা করা সম্ভব হয় না সংবাদপত্রের জন্য। সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধের জন্যও অবলম্বিত হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং আইনগত ও মৌখিক সেন্সরশিপ। কখনো কখনো এ সেন্সরশিপ রাতের গভীরে ‘অ্যাডভাইস’ আকারে ফোনের মাধ্যমে এসে আবিভ‚র্ত হয়। সংবাদপত্র কতৃর্পক্ষ নিজেও কখনো সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর মনস্তাত্তি¡ক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে, মুক্তচিন্তা প্রকাশের ক্ষেত্রেও ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি সৃজনশীল লেখকদের দৈনিক সংবাদপত্রে মুক্ত হাতে কলাম লিখতে অনুপ্রাণিত দেখা যাচ্ছে। চিন্তাজগতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কলাম লেখক হিসেবে তাদের ভূমিকা যদি মুখ্য হয়ে ওঠে, সংবাদপত্রের আদশর্, দশর্ন ও চিন্তা যদি তাদের ওপর অযাচিত প্রভাব বিস্তার করতে উদ্যোগ নেয়, তাহলে একদিকে সৃজনশীল সাহিত্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে, অন্যদিকে বুদ্ধিবৃত্তিক চচার্র মুক্ত-আকাশের পরিসর সীমিত হয়ে উঠবে। আমি এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকষর্ণ করতে চাই। এ মুহূতের্ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কঠোর কোনো আইন প্রণয়ন সমীচিন নয়।

১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর এ দেশের গণমাধ্যম এক নতুন চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠতে শুরু করে। তখন থেকেই বহু নিয়ন্ত্রণমূলক আইন-কানুন বাতিল শুরু হয়। এ কথা সত্য যে, ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখলেও ব্যক্তিমালিকানায় নতুন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। বতর্মান সময়ে বেতার এবং টেলিভিশনের জন্য এ সুযোগ আরো বিস্তৃত, অনেকটা অবারিত। বতর্মানে এ দেশে ব্যক্তিমালিকানায় প্রায় দুই ডজন টিভি চ্যানেল, ডজের্নরও বেশি এফএম রেডিও এবং বেশ কয়েকটি কমিউনিটি রেডিও চালু রয়েছে। এসব গণমাধ্যম কম বেশি এখন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে মুক্ত এবং স্বাধীন চরিত্র নিয়ে দঁাড়িয়ে গেছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের সুন্দর এ পথচলা রুদ্ধ করবে বৈকি! এ মুহ‚তের্ সংবাদপত্র তথা সাংবাদিকদের চটানো কতটা সঠিক হবে, তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। ভুল পথে হঁাটা সরকারের জন্য বিপজ্জনক হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, বাড়ছে এর অপপ্রয়োগও। তাই সাইবার অপরাধ বাড়ছে। সরকার বলছে, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বা দমনের জন্য এ আইন করা হয়েছে; সংবাদপত্র বা বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। মত প্রকাশে বাধা যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। সাংবাদিক প্রতিনিধি, শিক্ষক, মানবাধিকারকমীর্, গবেষক ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে আইনটিতে যথাযথ পরিবতর্ন আনা হোক।

যেসব বিধান অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ থেকে সরকার সেই সব বিধান অপসারণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

মীর আব্দুল আলীম: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক হবংিংঃড়ৎব১৩@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<14218 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1