শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু ঝুঁকিতে ১৩ কোটি মানুষ মোকাবেলা করতে হবে

নতুনধারা
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

জলবায়ু পরিবতের্নর বতর্মান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ ঝুঁকির মধ্যে থাকা বাংলাদেশের উপক‚লবতীর্ জেলাগুলোর ১৩ কোটি ৩৪ লাখ মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ১৪.৪ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটি মনে করছে, এতে আথির্ক ক্ষতির পরিমাণ দঁাড়াবে ১৭১ বিলিয়ন ডলার। তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকির শীষের্ থাকা ১০ জেলা হলোÑ কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, বরগুনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ। জলবায়ু পরিবতের্নর ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যথর্তা ঝুঁকিপূণর্ অঞ্চলের মানুষের ভোগ ব্যয় কমিয়ে দেবে ১৪ শতাংশেরও বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়াস হটস্পটস’ শীষকর্ প্রতিবেদন উঠে আসা এই তথ্য আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।

বলাই বাহুল্য, জলবায়ু পরিবতের্নর বিরূপ প্রভাবের শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। বিভিন্ন আন্তজাির্তক গবেষণা এবং জরিপেও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন বলে উল্লেখ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবতের্ন পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহভাবে হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। ইউনিসেফের তথ্য মতে, বিশ্বে জলবায়ু পরিবতের্নর সঙ্গে সম্পকির্ত বিভিন্ন কারণে যেসব মৃত্যু ঘটছে তার ৯০ শতাংশই ঘটছে উন্নয়নশীল দেশে। জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাব যতই চরম রূপ লাভ করছে এবং দৃশ্যমান হচ্ছে ততই তার বিরূপ প্রভাবে পানি ও বাতাসবাহিত রোগ-ব্যাধি, অপুষ্টি, দুযোর্গকালীন মৃত্যু ও আঘাতের হার বাড়ছে। গড় তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকায় ঋতুর আচরণ বদলে গেছে, এতে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৃষির ওপর ইতোমধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের নিচু ও উপক‚লীয় এলাকা বেশি বন্যা ও ঘূণির্ঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা বলছে, আগামীতে এ ধরনের দুযোর্গ আরও শক্তি নিয়ে আসবে। ফলে জলবায়ু পরিবতের্নর ঝুঁকি মোকাবেলার প্রয়াস দ্রæততার সঙ্গে জোরদার করার বিকল্প থাকা সঙ্গত নয়।

জলবায়ু পরিবতর্নজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীষের্। বাংলাদেশ বরাবরই প্রাকৃতিক দুযোর্গকবলিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ¡াস প্রতি বছরই সাধারণ ঘটনা হয়ে দঁাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব প্রাকৃতিক দুযোের্গর সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও বিপযর্য় এভাবে বাড়ার প্রধান কারণ, জলবায়ু পরিবতর্নজনিত প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়া। সিডর ও আইলার কথা আমরা জানি। দেশের উপক‚লভাগ সিডর ও আইলায় রীতিমতো তছনছ হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ হারিয়ে স্থানচ্যুত ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাদের এখনো পুনবার্সন করা সম্ভব হয়নি। জলবায়ু পরিবতর্নজনিত কারণে আগামীতে এ ধরনের ঝড়-জলোচ্ছ¡াস আরও হতে পারে, হতে পারে বন্যা, লবণাক্ততার বিস্তার এমনকি অনাবৃষ্টি এবং খরাও। আমাদের দেশটা এত বড় নয় যে, বিপুলসংখ্যক জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষকে পুনবার্সন করা সম্ভব হবে। তখন দেশে মহাবিপযর্য়কর অবস্থা দেখা দেবে। সুতরাং আশঙ্কার এই দিকটি মোটেও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।

আশার কথা যে, বাংলাদেশ ২০০৯ সালে ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্রাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। প্ল্যান অনুযায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বঁাধগুলোর উচ্চতা বাড়ানো, আশ্রয়কেন্দ্র নিমার্ণসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। এরপরও বড় ধরনের ঘূণির্ঝড় হলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কাও অযৌক্তিক নয়। দেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, ঝুঁকি মোকাবেলার যথাযথ উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবতের্নর জন্য বাংলাদেশ বা তার মতো দেশগুলো দায়ী নয়, দায়ী ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো। কিন্তু এর খেসারত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই বেশি দিতে হচ্ছে। অথচ জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাব ও ক্ষতি মোকাবেলায় ধনী ও উন্নত দেশগুলো তেমন সহযোগিতা না করা অত্যন্ত হতাশার। যেহেতু জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাবজনিত সমস্যা একটি আন্তজাির্তক সমস্যা। সুতরাং তার সমাধানে আন্তজাির্তক উদ্যোগ-পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক। এ ব্যাপারে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোরই অগ্রবতীর্ ভ‚মিকা রাখা বাঞ্ছনীয়।

সবোর্পরি বলতে চাই, পৃথিবীতে মানুষ এখন যেভাবে চলছে, তাতে উষ্ণতা বৃদ্ধি এড়ানো কঠিন। সুতরাং প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের সমস্যা কতটা ব্যাপক ও প্রকট তা বিবেচনায় রেখেই জাতীয় উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় যতটা সম্ভব ঝুঁকি মোকাবেলার চেষ্টা করতে হবে। এদিকে সরকার আরও নজর দেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে