শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকট

শান্তিপূণর্ প্রত্যাবাসনই লক্ষ্য হোক
নতুনধারা
  ০৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ দেয়ার কথা বলেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পযের্বক্ষণে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছি। আমাদের এই চাপ আরও বাড়াতে হবে যাতে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে কী করা উচিতÑ তা মিয়ানমার বুঝতে পারে।’ এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রতি সমথর্ন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। বলার অপেক্ষা রাখে না, রোহিঙ্গা সংকটের মতো এমন ভয়াবহ শরণাথীর্ সংকট বিশ্বে খুব কমই ঘটেছে। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্বে প্রশংসিত হলেও বাংলাদেশের পক্ষে বিপুল এই জনগোষ্ঠীর চাপ সামলানো সত্যিই কষ্টের। ফলে বিদ্যমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূণর্ সমাধানই প্রত্যাশিত।

তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রিত। আমরা জানি, মিয়ানমারের ওই সেনা অভিযানকে জাতিসংঘ শুরু থেকেই ‘জাতিগত নিমূর্ল অভিযান’ বলে আসছে। আন্তজাির্তক পরিমÐলে রোহিঙ্গা সংকটকে এশিয়ার সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণাথীর্ সমস্যা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। অস্বীকার করা যাবে না যে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তজাির্তক সংস্থা ও দেশের চাপে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করতে বাধ্য হয়। বাস্তবতা হলো, সে চুক্তি বাস্তবায়নে দেশটির পক্ষ থেকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেই। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করেছে জাতিসংঘের শরণাথীির্বষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা শরণাথীর্রা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তজাির্তক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করার পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করা দরকার। যা করতে পারে জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংকসহ আন্তজাির্তক সংস্থাগুলো।

অস্বীকারের সুযোগ নেই, যত দিন যাচ্ছে, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশকে ততই নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দীঘির্দন ধরে অবস্থান করায় এরা এখন বোঝা হয়ে দঁাড়িয়েছে। আগেও বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এ দেশে এসেছে। অন্যদিকে নতুন আসা রোহিঙ্গা শরণাথীের্দর ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তির সাত মাস অতিবাহিত হলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। জানা যায়, মাত্র আট হাজার রোহিঙ্গা তালিকা যাচাই করতেই তাদের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে মিয়ানমার যে, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে টালবাহানা করছে, এর মধ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। অন্যদিকে দেশে ফিরতে না পেরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা বাড়ছে। বাড়ছে খুনসহ নানা অপরাধ। ফলে সাবির্ক পরিস্থিতি বাংলাদেশের উদ্বেগের সব সীমা অতিক্রম করেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় পঁাচটি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি নাগরিককে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গারা নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে, খুনের ঘটনাও বাড়ছে। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। আশ্রিত রোহিঙ্গা উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়লে তা বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবেÑ বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কাও অযৌক্তিক নয়। ফলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি যে বাংলাদেশের জন্য কিছুতেই স্বস্তিকর নয়, তা সহজেই অনুমেয়।

সবোর্পরি বলতে চাই, শরণাথীর্র উপস্থিতি একটি দেশকে কতটা ঝুঁকিপূণর্ করে তুলতে পারে, তা বাংলাদেশের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হতে পারে। ফলে এ পরিস্থিতির অবসানই কাম্য। এর জন্য রোহিঙ্গাদের সসম্মানে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জাতিসংঘ মহাসচিবের ঘোষণা এবং বিশ্বব্যাংকের ৪৮ কোটি ডলার সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা মনে করি, সাহায্যের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফেরাও নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের কতর্ব্য হওয়া দরকার জাতিসংঘসহ আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা বাড়াতে ক‚টনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে