শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের রোল মডেল বাংলাদেশ

হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বতর্মানে এ কাযর্ক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
আর কে চৌধুরী
  ২০ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। অপরিসীম তাদের ধৈযর্, সৃজনশীলতা এবং সংগ্রাম করার মনোবল ও উদ্যম। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। সম্ভাবনার দিগন্তে পতপত করে উড়ছে পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত¡াবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দঁাড়িয়ে যাচ্ছে। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগঁাও নৌ-টামির্নাল নিমার্ণ প্রকল্প, গ্যাসসংকট নিরসনে এলএনজি টামির্নাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নিমার্ণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নিমাের্ণর মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

উন্নয়নের এ কমর্যজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অথৈর্নতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেয়া আরও কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দঁাড়িয়েছে ১৩ কোটি, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশসংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষ যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আসবে। এর দুযোর্গপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। এমনকি স্যাটেলাইটের বধির্ত ফিকুয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপাজর্ন করা যাবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নিবার্চনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অজের্নর পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই সাড়ে ৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক সাফল্য অজর্ন করেছে।

এক নজরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন

১-পদ্মা সেতু নিমার্ণ, ২-সমুদ্র সীমানা বিজয়, ৩-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ৪-ফ্লাইওভার নিমার্ণ, ৫-জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, ৬-দরিদ্রতার হার নিম্ন পযাের্য়, ৭-যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, ৮-বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ৯-বিনামূল্যে প্রত্যেকটি শিক্ষাথীের্দর হাতে বই বিতরণ, ১০-বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, ১১-কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ১২-বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ১৩-দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, ১৪-মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, ১৫- গরিব শিক্ষাথীের্দর উপবৃত্তি, ১৬-অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনব্যবস্থা, ১৭- রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১৮- মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান, ১৯- প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য সেবা কেন্দ্র, ২০- বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নিমার্ণ, ২১- বিভিন্ন জেলায় শিল্প পাকর্ নিমার্ণ, ২২- দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নিমার্ণ, ২৩- গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও কালভাটর্ নিমার্ণ, ২৪- মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, ২৫- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ২৬- কমর্সংস্থান বৃদ্ধি, ২৭- কৃষিতে সফলতা, ২৮- জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, ২৯- এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, ৩০- বৈদেশিক মুদ্রার রিজাভর্ বৃদ্ধি, ৩১- প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, ৩২- নারীর ক্ষমতায়ন, ৩৩- বিধবা ভাতা প্রদান, ৩৪- মাতৃত্বকালিন ছুটি বৃদ্ধি, ৩৫- বয়স্ক ভাতা প্রদান, ৩৬- মাতৃকালীন ভাতা প্রদান ৩৭-ডিজিটাল বাংলাদেশ কাযর্কর, ৩৮-মেট্রোরেল, ৩৯- হাতির ঝিল প্রকল্প, ৪০- এলিভেটেড একপ্রেস প্রকল্পের কাজ চলছে, ৪১-স্যাটেলাইট ৪২-৪ জি-৫ জি, ৪৩- মাদক নিধন, ৪৪-ভিক্ষুক মুক্তকরণ, ৪৫-হরতাল মুক্তকরণ, ৪৬- ২০০টির উপরে মসজিদ স্থাপন, ৪৭- রূপপুরে পারমানবিক স্থাপন, ৪৮-প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দিয়েছিল। অথচ স্বাধীনতার ৪৬ বছরে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্। এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, সম্পদে ভরপুর এবং সম্পদে উপচেপড়া ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা অজর্ন এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, সাহসী, সৎ, যোগ্য নেতৃত্বের ফলে। আশির দশকে বাংলাদেশের গামের্ন্টশিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক অথর্ উপাজের্নর সূচনা হয়। কালক্রমে এই শিল্প এখন বিশ্বে অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক শিল্পে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী আয় আজ বাষির্ক ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আজ আমরা শত্রæর মুখে চুনকালি দিয়ে বিশ্ব অগ্রগতির মহাসড়কে।

বাংলাদেশের অজর্ন

ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুযোের্গর নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার ভ‚মিকা, জনবহুল দেশে নিবার্চন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অথৈর্নতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবতর্ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দঁাড়িয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সবের্ক্ষত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৩ বছরের অজের্নর পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদশর্ন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অথর্নীতিবিদ অমতর্্য সেনের করা মন্তব্য এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তার মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কাযর্ক্রম অন্যতম।

শিক্ষাখাতে অজর্ন

শিক্ষাকে সবর্স্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার কতৃর্ক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ কাযর্ক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পযর্ন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বতর্মান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভতির্ হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বতর্মানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে ‘শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’।

সূত্র: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য

শিশুদের টিকাদান কমর্সূচির সাফল্যের জন্য এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদশর্ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১’। তৃণমূল পযাের্য়র দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি(১) কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি(২) উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বতর্মানে দঁাড়িয়েছে ৫৩-তে(৩)। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিমার্ণ করা হয়েছে নতুন ১২টি(৪) মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি জনশক্তি।

নারী ও শিশু উন্নয়নে অজর্ন

নারীর সাবির্ক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পযর্ন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কাযর্ক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়নভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। ‘জাতীয় শিশু নীতি-২০১১’ প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সাবির্ক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুস্থ, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সাবির্ক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ‚ষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ এওয়াডের্।

নারীর ক্ষমতায়নে অজর্ন

নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কমীর্ হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভ‚তপূবর্ অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০%-এর ওপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পযাের্য় প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোটার্ল। কেন্দ্রীয় পযার্য় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পযার্য় পযর্ন্ত এ পোটাের্লর সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বতর্মানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ(১) এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখে(২) উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়াকের্র বাণিজ্যিক কাযর্ক্রম শুরু করা হয়েছে।

কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্তা অজর্ন

কৃষি খাতে অভ‚তপূবর্ কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে। প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বতর্মানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পযর্ন্ত মাত্র ১৭টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন ৩টা। তার এই অনন্য অজর্ন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গবির্ত।

প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অজর্ন

বতর্মানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লাখেরও অধিক শ্রমিক কমর্রত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পযর্ন্ত ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পযার্য় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকরা যেতে পেরেছে।

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পযর্ন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সঙ্গে তাদের কাযর্ক্রম পরিচালনা করেছে। এ পযর্ন্ত জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কাযর্ক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবাের্গ্র।

বিদ্যুৎ খাতে সাফল্য

বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অজের্নর মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট(১) বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে(২) উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট(৩) ঘণ্টায় দঁাড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লাখ গ্রাহককে। নিমার্ণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি(৪) বিদ্যুৎকেন্দ্র।

শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অজর্ন

বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ওষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্যশিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটিশিল্প বহিবিের্শ্ব অভ‚তপূবর্ সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ২০১৩-২০১৪ অথর্বছরে বাংলাদেশের আইটিশিল্প ১০ কোটি মাকির্ন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অজর্ন

হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে এ খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বতর্মানে এ কাযর্ক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।

খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৫% সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত হয়েছে।

আর কে চৌধুরী: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18321 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1