বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি

দেশের স্বাথের্ক প্রাধান্য দিতে হবে
নতুনধারা
  ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট (পণ্য স্থানান্তর করার স্থান) চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ। আর চলতি মাসেই এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে, এমন তথ্যও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ট্রানজিট পণ্য পরিবহন-সংক্রান্ত চুক্তিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে স্থান ও অন্য সুবিধাদি থাকা সাপেক্ষে ভারতীয় পণ্য পরিবহনে অগ্রাধিকার পাবে। চুক্তিটি পঁাচ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হবে। পঁাচ বছর পর এটি স্বয়ক্রিয়ভাবে আরও পঁাচ বছরের জন্য কাযর্কর হবে। তবে কোনো দেশ চাইলে ছয় মাসের নোটিশে চুক্তিটি বাতিল করতে পারবে। এ চুক্তির ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ কম খরচে ভারতে তাদের মূল ভ‚-খÐ থেকে উত্তর-পূবার্ঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পেঁৗছাতে পারবে। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশি পণ্য অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কার বিষয়টি সামনে তুলে ধরে বাংলাদেশ কতটা সুবিধা পাবে সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। .

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, যে কোনো চুক্তি উভয় দেশের স্বাথের্ক প্রাধান্য দিয়েই করা হয়ে থাকে। ভারত দীঘির্দন যাবত বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। বতর্মান সরকার ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তিও করেছে। আর বতর্মানের ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি প্রসঙ্গে পলিসি রিসাসর্ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নিবার্হী পরিচালক মনে করেন, এটি বাংলাদেশের জন্য ভালো ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করবে। এটি দেশের অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের একটি খাত হতে পারে। সিঙ্গাপুরের মতো দেশ যদি ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ পারবে না কেন। এই ধরনের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) উপদেষ্টা আন্তজাির্তক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ মঞ্জুর আহমেদের মতে, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেয়ার জন্য বাংলাদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সুতরাং এ ধরনের সুবিধা যখন কোনো দেশকে দেয়া হবে সেখান থেকে আমরা কী সুবিধা পাব সেটাই প্রধান বিবেচ্য। ভারতের উত্তর-পূবার্ঞ্চলে বাংলাদেশের প্রচুর পণ্য এখন রপ্তানি হচ্ছে। দিন দিন সেখানে চাহিদাও বাড়ছে। ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য যখন সেভেন সিস্টারে যাবে তখন বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা কমবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমাদের উৎপাদনমুখী খাতে। এছাড়া এই সুবিধা দেয়ার ফলে দুই বন্দর এবং মহাসড়কে পণ্যবাহী যানের জট বাড়বে। যা দেশের ব্যবসা বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা মনে করি, যখন বিশেষজ্ঞ মতামতে এমন তথ্য উঠে আসছে, তখন সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পরবতীর্ পদক্ষেপ নেয়া।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য-সংস্কৃতিসহ নানান বিষয়ে চুক্তি যেমন আছে, তেমনইভাবে অনেক বিষয় এখনো অমিমাংসিত। অমিমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি অন্যতম। সম্প্রতি ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির খবর সামনে আসায় ভারতকে নানাবিধ সুবিধা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত বাংলাদেশকে কী কী সুবিধা দিচ্ছে, এমন বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসছে। ভারতের উভয় দেশের অভিন্ন নদ-নদীগুলোর উজানে বঁাধ নিমার্ণ করে আন্তজাির্তক আইন অমান্য করে চলেছে যুগের পর যুগ, এমন তথ্যও বিভিন্ন সময়ে আলোচিত। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, প্রস্তাবিত চুক্তিতে পণ্য পরিবহনের জন্য চারটি রুটের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো, চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর থেকে আখাউড়া হয়ে আগরতলা; চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর থেকে তামাবিল হয়ে ডাউকি; চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার হয়ে সীমান্তপুর এবং চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দর থেকে শিওয়ালা হয়ে সুতারকান্দি। চুক্তির কারণে অভ্যন্তরীণ যানজট বৃদ্ধি এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি যেহেতু বিশেষজ্ঞ আলোচনায় এসেছে, ফলে তা বিবেচনায় নেয়া জরুরি। পাশাপাশি আমাদের জাতীয় অথর্নীতি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়েও সতকর্ থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ এ থেকে কতটুকু লাভবান হবে, সে বিষয়েও চুক্তি স্বাক্ষরের আগে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

সবোর্পরি বলতে চাই, ভারত তার পশ্চিম ও পূবর্ অংশের মধ্যে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নৌ-করিডর চালু করতে আগ্রহী। নৌ-প্রোটকলের অধীনে তিনটি রুট অনুমোদনও দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নানাবিধ চুক্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব চুক্তিতে দেশের স্বাথের্কই প্রাধান্য দেয়া উচিত। নীতিনিধার্রকরা জরুরিভিত্তিতে বিষয়গুলো আমলে নেবেন বলেই আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<18698 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1