শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংলাপ অথর্বহ হোক

শান্তিপ্রিয় নাগরিক হিসেবে আমরা রাজপথে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা চাই না। সংঘাত নয়, সংলাপ ও সমঝোতাই গণতন্ত্রের পথ। সংলাপের জন্য উভয় পক্ষকে মুক্তমন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই প্রত্যাশায় রইলাম আমরা।
মীর আব্দুল আলীম
  ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

দেশের মানুষ শান্তি চায়; রাজনৈতিক বিবাদ চায় না। হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালও-পোড়াও চায় না। এ জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। সংলাপ হচ্ছে, সংলাপ সফল হবে, সংঘাত হবে না এটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

জাতীয় সংসদ নিবার্চন দ্বারপ্রান্তে। নিবার্চন কমিশন তফসিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে একাদশ সংসদ নিবার্চনের লক্ষ্যে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা দেশে নিবার্চনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট প্রস্তুতি নিচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণের জন্য। এর মধ্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল ও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটভুক্ত ১৪ দলসহ জাতীয় পাটির্ও রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং মহাজোটের বাইরে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, বিকল্প ধারা, এলডিপি কল্যাণ পাটির্সহ কয়টি দল। একাদশ সংসদ নিবার্চনে শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও মহাজোটের সঙ্গে মূল নিবার্চনী প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিলেট ও চট্টগ্রামে জনসভা করে তাদের ঐক্যের উদ্দেশ্য লক্ষ্যের কথা জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিবার্চন হবে। সরকারও বতর্মানে আশা করে সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হউক। দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের বাইরে থাকা সাবেক শাসক দল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক দল কাযর্ত দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে নিবার্চনের ব্যাপারে নানা শতর্ বিরোধী শিবিরের। এসব মানা নামানা নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ ক্রমেই ঘোলা হচ্ছিল। এমন সময় সিলেটের জনসভার পরই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সংলাপ চেয়ে চিঠি পাঠান গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। চিঠির উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১টি লক্ষ্য সংযুক্ত হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে কোনো রাগঢাক না রেখেই সংলাপে বসতে রাজি হয়েছেন। একদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি হিসেবে শাসক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে সংলাপ চেয়ে চিঠি পাঠানোর ঘটনাকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা অবশ্যই দেশের জনগণের কল্যাণের স্বাথের্ই। কেন না এক এগারোর মতো কোনো পরিস্থিতি এ দেশে জনগণ আশা করে না। সংলাপ সবসময় যে কোনো সমস্যা সমাধানের উত্তম পন্থা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে সংলাপ হতেই পারে। তবে শতর্সাপেক্ষে সংলাপ কখনো সমঝোতার পক্ষে শুভ নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে অথর্বহ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন।

আমরা মনে করি দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং হালসময়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দেশের শান্তি চায়। বতর্মান পরিস্থিতিতে দেশে সংঘাত না সংলাপ? এ প্রশ্নে জবাব জানতে সংবাদপত্রের নিচের কটি শিরোনামই যথেষ্ট- (১) আলোচনায় না এলে আবারও সংঘাত, (২) ‘সংলাপেই শান্তি স্বস্তি। কোনটা শ্রেয়? সংলাপ নাকি সংঘাত। সংঘাতের পথ ধরেই হঁাটছিল আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের শান্তির লক্ষ্যে এ মুহূতের্ সংলাপের বিকল্প নাই। তবে সংলাপের জন্য সংলাপ নয়; সংলাপ হোক দেশ ও জাতির স্বাথের্। সংলাপের ব্যাপারে এ তাগিদ বিভিন্ন দেশের। সংঘাতময় এ মুহূতের্ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা খুবই প্রয়োজন। এ জন্য সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। সংলাপ হচ্ছে, সংলাপ সফল হবে আর তাতেই জনগণ তথা দেশের স্বাথর্ রক্ষা হবে।

আমরা বরাবরই যা দেখি, দেশপ্রেম, ধৈযর্, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দেশের রাজনীতি থেকে উধাও। এ অবস্থায় বতর্মান রাজনীতিতে বেশি করে গণতন্ত্র চচার্ এবং দেশাত্মবোধ তৈরির জন্য আমাদের জোর দাবি তুলতে হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে দেশ দিন দিন আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে, যা জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য কখনোই কাম্য নয়। এ পরিস্থিতি আবার অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানকে সুযোগ করে দিতে পারে। দুই পক্ষই অনড়। বোঝা যাচ্ছে সংলাপ সফল না হলে সামনের দিনগুলো আর ভালো যাবে না। সংঘাত আর নৈরাজ্য দেশবাসীর নিত্য সাথী হয়েই থাকছে। নেতা-নেত্রী, আমলা-মন্ত্রীদের কথার জালেই আটকে আছে রাজনীতির সব কপাট। এর আগেও দেশে রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে। ফলাফল ছিল কেবলই শূন্য। এবার যেন সংলাপ বিফল না হয়। আমরা জানি সংলাপের বিপরীত তো সংঘাত। সেটা দেশের জন্য, সরকারের জন্য, কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।

দেশের চলমান সংকট দূর করতে আমাদের রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। সংকট যদি দূর হয়, তার কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই তাদের। যদি সংকট বাড়ে, তার দায়ও তাদের ওপর বতাের্ব। জনগণ আশা করে, তারা দেশের সংকট দূর করতে এগিয়ে আসবেন, বতর্মান অস্থিরতা থেকে জাতিকে মুক্ত করবেন। সেই পরিবেশ অবশ্যই রাজনীতিবিদদের নিশ্চিত করতে হবে। দেশের বিরাজমান নৈরাজ্য দূরীকরণে একসঙ্গে বসবেন এমনটি আশা করছে দেশের মানুষ। তবে নিরাশবাদীরা বলছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতারা কোনোদিন সফল সংলাপে বসবেন না, আর যদি নিদেনপক্ষে ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে বসেন, সে সংলাপ কখনো বিফল হবে না। আমরা মনে করি দুই পক্ষই আন্তরিকভাবে চাচ্ছে সংলাপের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসুক। কে কাকে রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত করতে পারবেন, কীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন, আর ক্ষমতায় যেতে পারবেন সে লক্ষ্যেই তারা না এগিয়ে জনগণের স্বাথের্ সংলাপকে সফল রূপ দেবেন এটাই সবাই কায়মনে চায়।

বাস্তব দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও রাজনীতির ক্ষেত্রে আলোহীন অন্ধকার আর ভুল পথেই চলছে বাংলাদেশ। অন্ধকার থেকে আলোর পথে কি দেশের রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনা যায় না? কদর্মাক্ত রাজনীতি আর সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে দেশকে উদ্ধার করা অবশ্যই সম্ভব। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের গণতন্ত্র আর বঁাচা-মরা নিভর্র করছে আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওপর। কিন্তু তারা কেউই সুস্থ রাজনীতি করছে না। ক্ষমতার রাজনীতিই তাদের কাছে মুখ্য বলে মনে হচ্ছে। তাই দলীয় নানা কমর্সূচি নিয়ে প্রায়ই অগ্নিগভর্ হয়েছে রাজপথ। মানুষ মরে; রক্তাক্ত হয় জনপদ। তাতে কেবল সম্পদই নষ্ট হয় না দেশের ভাবমূতির্ ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃস্ব হয়। হেঁাচট খায় দেশীয় অথর্নীতি। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দেয়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কোথাও কথায় কাজে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতার লোভ আমাদের দলগুলোকে অন্ধ করে দিয়েছে। তারা যা করছে তা কেবল ক্ষমতার জন্যই করছে। জনসম্পদ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, দেশের অথর্নীতি, দেশের ভাবমূতির্ কোনোটারই তোয়াক্কা করেন না তারা। এ অবস্থায় রাজনীতিকে সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতেই হবে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে ঘিরে যেন আর সংঘাত না হয় এটাই আমরা আমাদেও রাজনীতিবিদদের কাছে প্রত্যাশা করছি।

গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল থাকবে এবং তাদের মধ্যে মতপাথর্ক্য থাকবেÑ এটাই স্বাভাবিক। আর এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দযর্। তবে তাদের মধ্যে সহনশীলতা অবশ্যই কাম্য। দেশের কথা, জনগণের কথাও ভাবতে হবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে। ধৈযর্ মহৎ গুণ। কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও শুধু নিজেদের অবস্থানে অনড় না থেকে জনগণের কথা ভেবে পরস্পর আলোচনায় বসতে হবে। ধৈযর্, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ইত্যাদি বতর্মান রাজনীতিতে বেশি করে চচার্ করার জন্য আমাদের জোর দাবি তুলতে হবে এবং সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, যা জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য কখনোই কাম্য নয়। এ পরিস্থিতি আবার অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানকে সুযোগ করে দিতে পারে, যা আমরা চাই না। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি প্রবল গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ঘোষণা দিয়েই চলছে। সরকারের গুরুত্বপূণর্ ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিরোধী দলকে নানাভাবে উসকানি দিচ্ছেন। এই বলে তারা হুমকিও দিচ্ছেন যে বিরোধী দল রাস্তায় নামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বসে থাকবে না। এ ধরনের পাল্টাপাল্টি হুমকিতে নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। কারণ, বিরোধী দল রাস্তায় নামলে সরকারি দল তা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। এ কাজে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করবে। এর কোনোটাই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিঃসন্দেহে এর ফলে সহিংসতার সৃষ্টি হবে। এর পরিণতিতে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হবে।

শান্তিপ্রিয় নাগরিক হিসেবে আমরা রাজপথে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা চাই না। সংঘাত নয়, সংলাপ ও সমঝোতাই গণতন্ত্রের পথ। সংলাপের জন্য উভয় পক্ষকে মুক্তমন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই প্রত্যাশায় রইলাম আমরা।

মীর আব্দুল আলীম: সাংবাদিক, গবেষক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20201 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1