বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও বাংলাদেশ

দিনে দিনে ক্রমাগতভাবে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকতর নিকৃষ্ট প্রচলন জাতিকে অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। পারস্পরিক দোষারোপ, একে অন্যকে রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশের শত্রæ, দুনীির্তবাজ লোভী, রাষ্ট্রক্ষমতা প্রত্যাশী থেকে শুরু করে আরও কুৎসিত মন্তব্য পরস্পরের প্রতি ছুড়তে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন।
রণেশ মৈত্র
  ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধমির্নরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ হয়ে উঠেছিল বিপ্লবী বাঙালি জাতির সম্মিলিত, প্রত্যয় দীপ্ত কণ্ঠস্বর। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এই প্রত্যয়গুলো স্থান করে নিয়েছিল কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে সগৌরবে। তবে পঞ্চাশের দশকটি ছিল ওই প্রত্যয়গুলোর উন্মেষকাল। বিকশিত হয় ষাটের দশকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি নিয়ে।

অতপর ১৯৭১-এ এসে তা আমাদের সুমহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধেরও মূল রণধ্বনিতে পরিণত হয় এবং ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে লাখো লাখো অস্ত্রধারী যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠেও তাদের শত্রæ নিধনের মূল প্রেরণা হিসেবে।

পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধমির্নরপেক্ষতা স্বীকৃত ছিল না-ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও ধমার্ন্ধতা। ছিল না সমাজতন্ত্র, ছিল সামন্তবাদ-পঁুজিবাদের অবাধ বিকাশের এবং মানুষকে শোষণের সীমাহীন সুযোগ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল না, ছিল ধমীর্য় বিভক্তিমূলক দ্বিজাতিতত্ত¡। গণতন্ত্র? না তা-ও না। যা ছিল তা হলো সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় অজির্ত হলো-মুক্তিযুদ্ধের অসাধারণ সাফল্য অজের্নর মাধ্যমে। আর তার মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটল ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের, কোটি বাঙালির ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ হারানোর এবং তার মাধ্যমে নিঃস্ব হওয়ার মাধ্যমে। আর এই পথেই পরাজয় চ‚ড়ান্তভাবে ঘটল পাকিস্তানি ‘দুধর্ষর্’ সেনাবাহিনীর, পাকিস্তানি শাসককুলের এবং পাকিস্তানি চরম প্রতিক্রিয়াশীল ভাবাদশের্রও।

ধারাবাহিকভাবে দুযুগব্যাপী পরিচালিত অব্যাহত গণসংগ্রাম এবং নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অজির্ত বাংলাদেশের সংসদ ১৯৭২ সালেই মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই একটি সংবিধান জাতিকে উপহার দেয়-যাতে ওই চার মৌলিক রাষ্ট্রীয়নীতি হিসেবে গৃহীত হয় গণতন্ত্র, ধমির্নরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। এভাবেই ওই চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পূবের্কার গণসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান আদশর্সমূহকে রাষ্ট্রীয় জীবনে আত্মস্থ করে নেয়। পাকিস্তানকে ভৌগোলিকভাবেই শুধু নয়Ñ আদশির্কভাবেও চ‚ড়ান্ত বিদায় দেয়া হয়। রক্তের দামে কেনা হয় গণতন্ত্র ধমির্নরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের আদশর্।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় এবং ওই বাহাত্তরে প্রণীত বিধানটিই হলো যাত্রা শুরুর প্রথম ও ঐতিহাসিক অজর্ন। দেশ-বিদেশেও সংবিধানটি বিপুল খ্যাতি অজর্ন করেছিল তার ঘোষিত তিনটি লক্ষ্যের জন্য-গণতন্ত্র, ধমির্নরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধু বারবার তার স্বভাবসূলভ কায়দায় তার ওই লক্ষ্যগুলো ঘোষণা করেন। অসংখ্য ভাষণে, অসংখ্য স্থানে।

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির্র (ন্যাপ মোজাফফর) একটি মাত্র আসন ছিল ওই সংসদে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভিব্যক্তি দেখতে পাওয়া যায় যখন সংসদ নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্পিকারকে বলেন মাত্র একজন হলেও বিরোধী দলীয় সংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে যথেষ্ট সময় দেয়া হোক তার পরিপূণর্ বক্তব্য সংসদে উপস্থাপনের জন্য।

সংসদের অভ্যন্তরেই শুধু নয়। সংসদের বাইরেও সরকারি দল-বিরোধী দলগুলোর আন্তঃসম্পকর্ ছিল পরস্পরের প্রতি পরস্পরের শ্রদ্ধা মিশ্রিত। পারস্পারিক আস্থা-বিশ্বাস ছিল লক্ষণীয়। আর এতেই, বা এভাবেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রার শুভ সূচনা ঘটেছিলÑ আজ যা নেহাতই এক বিস্মৃত অধ্যায় মাত্র। একটি স্বপ্ন মাত্র।

গণতন্ত্র বিকশিত হতে হলে যেমন বহু দলের অস্তিত্ব থাকতে হবেÑ তেমনি আবার দলগুলোর মধ্যে তাদের নেতাকমীের্দর আচার-আচরণের মধ্যে পারস্পারিক আস্থা ও বিশ্বাস এবং যোগাযোগ সংলাপ প্রবৃতির প্রচলন থাকাও অপরিহাযর্। দলগুলোর মধ্যেকার নানাবিধ বিষয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে এবং তা থাকাই তো স্বাভাবিক। এই মতভিন্নতা-পারস্পারিক আলাপ-আলোচনা ও সৌহাদর্মূলক সম্পকের্র মধ্য দিয়েই বিদূরিত হতে পারে বহু মতভিন্নতা এবং তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যও হতে পারে।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অল্প কিছুকাল পরেই ছাত্রলীগের একটি বড় অংশ যখন ‘বৈজ্ঞানিক’ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ‘জাসদ’ গঠন করেÑ তখন থেকে ওই রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পশ্চাদপসারণ পবির্ট শুরু হতে থাকে। চালু হয় অস্ত্রের ভাঙার বিরোধিতা। ¯েøাগান উত্থাপিত হয়, ‘শেখ মুজিবের চামড়া-তুলে নেব আমরা’ এবং আরও আরও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ¯েøাগান। শুধু তাই নয়Ñ হত্যা-গুপ্তহত্যার রাজনীতিও চালু হয় স্বাধীন বাংলার মাটিতে। যা মুক্তিযুদ্ধের দলগুলোর দ্বারা সবর্দা নিন্দিত ছিল।

বেদনার সঙ্গে এও পরিলক্ষিত হতে থাকে, জাসদের হাত ধরেই বেআইনি ঘোষিত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক দল জামায়াতে ইসলামী যেন নতুন করে এ দেশের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে গোপনে পুনবাির্সত হওয়ার সুযোগ পেতে থাকল। তারা জাসদের অনেককে আত্মগোপনে থাকতে সহায়তাও করতে থাকল। ধীরে ধীরে নতুন করে নকশালী রাজনীতি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে শ্রেণিশত্রæ খতমের রাজনীতি নতুন করে দেখা দিল। ডাল-ভাতে পরিণত হতে থাকল হত্যার ও অস্ত্রের রাজনীতি।

এরই একপযাের্য় বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধ করে দেন। এর সুযোগও নিতে থাকল উগ্র সরকার-বিরোধী মহলে। তাদের পরিচালিত গোপন কাযর্কলাপ দিব্যি অব্যাহত থাকল। বন্ধ হলো বরং আইন মেনে চলা মূলধারার দলগুলোর কাযর্ক্রম যা ছিল প্রকাশ্যে পরিচালিত। উধাও হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, পারস্পারিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাশীলতার সংস্কৃতি। রাজনীতির অথর্ই দঁাড়ালো পারস্পারিক শত্রæতা। উধাও হতে থাকল গণতন্ত্রের চেতনা। পরিণতি যা হওয়ার তাই হতে শুরু করল। রাজনীতির অঙ্গন থেকে শক্তিকামী জনগণ দূরে-বহুদূরে অবস্থান নিতে শুরু করলেন। নৈরাজ্য গ্রাস করল দেশটাকে।

এই পরিস্থিতির সুযোগ দেশি-বিদেশি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তকারীরা নিতে দ্বিধা করল না। তারই পরিণতিতে ঘটে গেল ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যালীলা-ঘটল সামরিক অভ্যুত্থান। ষড়যন্ত্রের নায়ক খোন্দকার মোশতাক প্রথমে হলেন তথাকথিক রাষ্ট্রপতি এবং পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল। গোলাম আযমের আবিভার্ব, জামায়াতের প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু মানুষকে ধোকা দেয়ার লক্ষ্যে বেআইনিপন্থায় সংশোধন করে ‘বিসমিল্লাহ্’ সংযোজন ও জামায়াতে ইসলামীসহ সব ধমার্শ্রয়ী দলকে বৈধতা প্রদান। এগুলোর কোনো অস্তিত্ব ছিল না বাহাত্তরের সংবিধানে।

মৌলিক পরিবতর্ন ঘটে যেতে থাকল বাংলাদেশের রাজনৈতিক আদশের্র ক্ষেত্রেও। অনেকে হয়তো ভুলে গিয়ে থাকবেন ভোররাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রক্তাক্ত অবস্থায় তার বিশাল বপু ধানমÐির ৩২নং বাড়ির দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে নামমাত্র প্রহরায় পড়েই থাকল আর সন্ধ্যাই খোন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে নিজেকে ‘প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করে বললেন ‘সোনার ছেলেরা’ দেশটাকে রক্ষা করেছে শেখ মুজিব ইসলামকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল।’ আবার বাহিনী প্রধানরাও তার অধীনে দ্রæত শপথ নিলেনÑ তার আদেশ নিদের্শ পালন করলেন।

অথার্ৎ আবার রাষ্ট্রের মুসলমানীকরণ, বাংলাদেশের ইসলামীকরণ বা প্রকারান্তরে পাকিস্তানিকরণ শুরু হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ সাধন প্রক্রিয়া নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়। আওয়ামী লীগ-ন্যাপ-কমিউনিস্ট পাটির্র নেতাকমীের্দর রুশ-ভারতের দালাল বলে প্রকাশ্যে অভিহিত করা শুরু হয়Ñ পাকিস্তান-বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে যেন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ফলেই বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণতও হলো। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বস্ত বন্ধু ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পকের্র শীতলীকরণ প্রক্রিয়াও। একই সঙ্গে সেই পাকিস্তান আমলের মতোই শুরু হয় আওয়ামী লীগ-ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পাটির্র নেতাকমীের্দর জেল-জুলুম প্রবৃতি। প্রক্রিয়াটি শুরু করেন মোশতাক জোরদার করেন জেনারেল জিয়া।

জিয়া ক্ষমতা দখল করে ওই গ্রেপ্তার প্রক্রিয়াই শুরু করেননি, তিনি গোলাম আজমকে ফিরিয়ে আনলেন পাকিস্তান থেকে, সামরিক আইন জারি করে ওই আইন বলে সংবিধান সংশোধন করে ধমার্শ্রয়ী দলগুলোকে বৈধতা প্রদান (জামায়াতে ইসলামীসহ) করেন সংবিধানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ সংযোজন করে সেই পাকিস্তানি ধারাকে পুনবার্র ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত, দেশি ও বিদেশি স্বাথের্ ওই ধারার পুনবার্সন করতে শুরু করলেন। বঙ্গবন্ধুর আমলে পাক-বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সহযোগিতা করার অভিযোগে আটক বন্দিদেরও দ্রæতই মুক্তির নিদের্শ দিয়ে তাদেরও রাজনীতিতে পুনবাির্সত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের গ্রেপ্তার করে ফঁাসিতেও লটকালেন।

পরে অপর সামরিক শাসিত এইচএম এরশাদ ওই ‘ইসলামী’ ও ‘পাকিস্তানি’করণ প্রক্রিয়া নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধমর্ ইসলাম’ লিপিবদ্ধ করে। এগুলো কিন্তু কেউ কোনোদিন দাবি করেনি বা পৃথিবীর কোথাও এমন ধরনের রাজনীতি (বিপরীত ধমর্) প্রতিষ্ঠা করতে দেখাও যায়নি। রাষ্ট্রীয় মৌলনীতির পশ্চাদমুখী পরিবতের্নর আধুনিক বিশ্বে অন্য কোথাও নজির নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীদের পারস্পারিক সুসম্পকর্, সম্মানবোধ প্রবৃতি (যেমন রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মান উপলব্ধি করতে সাহায্য করে-তেমনই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অজির্ত স্বাধীন দেশে গৃহীত সংবিধানে বিধৃত রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিগুলোর বিপরীতমুখী নীতি প্রতিস্থাপনও মারাত্মকভাবে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিম্নমানের পরিচায়ক বলেও বিবেচিত। এই ধারা বা সংশোধনীগুলো আজও আমাদের সংবিধানে দিব্যি শোভা পাচ্ছে-সম্পূণর্ বিস্ময়করভবে।

কালপরিক্রমায় আমরা দুটি বৃহৎ দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে) ক্ষমতায় বসতে দেখলাম ভোটের মাধ্যমে। এই পযাের্য়ও দেখা গেল, দুই সামরিক একনায়কই অবৈধ ও অগণতান্ত্রিকভাবে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বা ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না দেখিয়ে যে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতিকে অবৈধপন্থায় সাংবিধানিক বৈধতা দিলেন, তার সযতনে গণতন্ত্রায়ন (গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় পন্থায়) করে জাতিকে উপহার দিয়ে তারই স্থায়ী রূপ দিলেন দ্বিধাহীন ভাবে। বজির্ত হলো ‘হাজারো গণসংগ্রাম একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অজির্ত বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংসদ গৃহীত চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও আদশর্ যা বাহাত্তরের সংবিধানে ৪ নভেম্বর, বাহাত্তরে অনুমোদিত ও প্রচলন করা হয়েছিল তাকে।

দিনে দিনে ক্রমাগতভাবে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকতর নিকৃষ্ট প্রচলন জাতিকে অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে। পারস্পরিক দোষারোপ, একে অন্যকে রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশের শত্রæ, দুনীির্তবাজ লোভী, রাষ্ট্রক্ষমতা প্রত্যাশী থেকে শুরু করে আরও কুৎসিত মন্তব্য পরস্পরের প্রতি ছুড়তে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন।

একজন আইনজ্ঞ সাংবাদিক তো সম্মানিত একজন নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে দিব্যি অপদস্থ করলেন। মহিলা সাংবাদিকটি যথাথর্ই বলেছিলেন, ওই আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর তো প্রমাণও আছে। ওই আইনজীবী অতীতে বেশ কয়েকবার ইসলামী ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভাষণও দিয়েছেন অথচ কোনো দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীই ইসলামী ছাত্র শিবির বা জামায়াতে ইসলামীর সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে এ পযর্ন্ত যোগ দেননি। একমাত্র তিনিই দিয়েছেন যদিও তিনি প্রকাশ্যে কোনো দল করেন না। জামায়াতে ইসলামী এমন একটি দল যার সব সদস্যের পরিচয় দলটি কদাপি প্রকাশ করে না। একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং একজন অতি সম্মানিত প্রথিতযশায় সাংবাদিক প্রয়াত তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সন্তান হয়ে এমন কুৎসিত অভিযোগ একজন সম্মানিত নারীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এসে সমগ্র নারীকুলকেই অপমানিত করে যে সংস্কৃতি ও রুচিবোধের পরিচয় তুলে ধরলেন তা জাতির বিবেককেই আহত করেছে।

নিবন্ধটির পরিসর আর না বাড়িয়ে বলতে চাই-বাঙালি জাতি দৃঢ়ভাবে গণতন্ত্র চায়-চায় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ। তাই যে অপসংস্কৃতির পাহাড় দিনে দিনে জমেছে তার দ্রæত অপসারণও কামনা করে। গণতন্ত্রবিরোধী সংস্কৃতি দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না-গণতন্ত্রকে বিলুপ্তই করা যায় শুধু। তাই দ্রæত এ রাগমুক্তিই কাম্য।

রণেশ মৈত্র: সাংবাদিকতায় একুশে পদক প্রাপ্ত

ৎধহবংযসধরঃৎধ@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20445 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1