শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দীঘর্সূত্রতা মিয়ানমারের শুভঙ্করের ফঁাকি

নতুনধারা
  ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

প্রায় ১৪ মাস আগে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিযার্তনে যে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণাথীর্ হয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হলেও শুরু হয়েছে, এটি আশার খবর। গতকাল মায়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শিবির পরিদশর্ন করেছেন এবং সেখানকার রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ও বসেছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব এই প্রতিশ্রæতিও ব্যক্ত করে গেছেন যে, নভেম্বরের মাঝামাঝি ৫০০০ রোহিঙ্গা শরণাথীের্ক মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি শুরু হবে। এর মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আন্তজাির্তক মহলের ক্রমাগত চাপের মধ্যে থাকা মিয়ানমার সরকার দেখাতে চাইছে যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তারা আন্তরিক। কিন্তু তাদের নেয়া পদক্ষেপের দীঘর্সূত্রতা এবং বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের জেনারেল ও রাজনৈতিক নেতাদের দেয়া ব্যক্তব্যের পরস্পরবিরোধিতার কারণে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে বিষয়টি সমাধানে তারা সত্যিকার অথের্ই আন্তরিক কিনা, নাকি এটি আন্তজাির্তক মহলে তাদের ভাবমূতির্ ফিরিয়ে আনার জন্য লোকদেখানো প্রচেষ্টা। সন্দেহের প্রথম জায়গাটি অং সান সুচিকে নিয়ে। শুরু থেকেই নোবেলজয়ী এই নারী বিতকের্র জন্ম দিয়েছেন এই ইস্যুতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অপরাধ আড়াল করতে গিয়ে এবং রোহিঙ্গাদের পক্ষে টঁু শব্দটি না করে। তারপরও মিয়ানমার সরকার যে প্রত্যাবতর্ন প্রক্রিয়াটি শুরু করেছে, সেখানে নিদির্ষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি কত সময়ের মধ্যে পুরো সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণাথীের্ক ফিরিয়ে নিয়ে যাবে মিয়ানমার। আপত্তি রয়ে গেছে প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা নিয়েও। কারণ আন্তজাির্তক কোনো মানবাধিকার সংস্থাকে অনুমতি দেয়া হয়নি বিষয়টি পযের্বক্ষণের। কালকের বৈঠকে যখন রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন যে, তাদের আগে আকিয়াবের শরণাথীের্দর প্রত্যাবাসন শুরু করা হচ্ছে না, তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, ফিরেই তাদের ‘ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন কাডর্’ সংগ্রহ করতে হবে। এর ফলে রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন গিয়ে তাদের আবার কঠোর নজরদারির সম্মুখীন হতে হবে। তাই তারা এই বৈঠকে বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করেছেন। জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বিষয়গুলো তিনি মিয়ানমারে গিয়ে ঊধ্বর্তন কতৃর্পক্ষকে অবহিত করবেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গারা আর কিছু বিষয়ের নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকার করেছে। তারমধ্যে রয়েছে, মিয়ানমারের সংবিধানে সেদেশের আর ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো তাদেরও অধিকার ফিরিয়ে আনা, তিন দিনের বেশি ট্রানজিট ক্যাম্পে না রাখা, তাদের ভিটেবাড়ি ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেগুলো কিছুদিন আগেই পুড়িয়ে দিয়েছে সেদেশেরই সেনাবাহিনী। তাই তাদের এই দাবিগুলো যে অযৌক্তিক নয় তা বলাবাহুল্য। অনেকেই বলছেন, অস্ট্রেলিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের মতো দেশ যেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বিপুল সম্পদ রয়েছে, তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরই নড়েচড়ে বসেছে মিয়ানমার। তবে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ করার জন্য আন্তজাির্তক মহলের সংযুক্তির বিষয়ে জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। আব্দুল্লাহ সাদমান জামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে