শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাকস্বাধীনতা বনাম কথামৃত: হুশিয়ার হবে কেন?

সংলাপ বাকস্বাধীনতার একটি প্রকাশ। যারা সংলাপ চায়, তারা মূলত তাদের কথা শোনাতে চায়। তাদের ধারণা হয়েছে, সরকার তাদের কথা শুনতে পায় না। কথা শোনানোর জন্যই তাদের সংলাপের প্রয়োজন। কিন্তু কে কথা বলবে, কী কথা বলবে, সেটি বিচারে নিতেই হবে।
ড. ইশা মোহাম্মদ
  ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনা বাকস্বাধীনতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। কিন্তু সেই স্বাধীনতার কি সীমা নেই। নিয়ন্ত্রিত অথৈর্নতিক সমাজে বলা হয়। বাকস্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় নিদের্শনার মধ্যেই থাকে। অথার্ৎ বুজোর্য়া দৃষ্টিভঙ্গির বাকস্বাধীনতা থাকেই না। কেননা, রাষ্ট্রীয় নিদের্শনা কখনই ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেয় না, সম্ভবত ভয়েই। ব্যক্তি রাষ্ট্রকে অতিক্রম করবে এই ভয়ে। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দ্ব›দ্ব গণতান্ত্রিক দ্ব›েদ্বর ‘একক’। কিন্তু তারপরও গণতন্ত্রে যতটুকু বাকস্বাধীনতা আছে তাতেই ব্যক্তি সাধারণ মোহিত হয়ে, তার সবটাই প্রত্যাশা করে। তবে, প্রকৃত ঘটনা হলোÑ গণতন্ত্রের কোনো অসীম বাকস্বাধীনতা নেই। ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণকৃত হয়। এমন কথা বলা যাবে না। এই এক কথাতেই সব বাকস্বাধীনতা হরিত হয়। বুজোর্য়া দৃষ্টিভঙ্গির অতি গহিনে থাকে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা। এখানে ইনডিভিজুয়ালিজমের প্রকৃত আদশর্। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় প্রত্যেকেই প্রত্যেকের এলাকা নোংরা করার সুখানুভ‚তি সংগ্রহ করে বাকস্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে। এটি এমন পযাের্য়ও যায় যে মানহানির মামলাও করা যায়। প্রকৃত অথের্ সমাজে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা বিপরীতক্রমে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের হিংসা, পরিণামে হিংস্রতায় পযের্বশিত হয়। ব্যক্তিগত হানাহানি এক পযাের্য় শ্রেণিগত হানাহানি এবং আরও কুটিলচক্রে সমশ্রেণিগত হানাহানিতে রূপ নেয়। যে কারণে ব্যক্তি স্বাথর্পর না হয়ে পারে না। বুজোর্য়াজিতে স্বাথর্পরতাই আত্মরক্ষার কৌশল। যা পরিণামে মনুষ্যত্ব বিবজির্ত সমাজে পরিণত হয়।

সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যকার দ্ব›দ্ব, যা প্রকাশ্যে পাওয়া গেছে, তাতে এ রকম বাকস্বাধীনতা নমুনা দেখা গেছে কাজ নেই, কম্ম নেই, ড. কামাল হোসেনকে কাওয়াডর্ বলে নিছকই বাকস্বাধীনতা অনুশীলন করা হয়েছে। লজ্জা-শরমের বালাই থাকলে ড. কামাল হোসেন মানহানির মামলা করত। কিন্তু তিনি করেননি। কেন করেননি সম্ভবতই ধারণা করা যায় যে, তিনি ঐক্য নিমাের্ণ এত ব্যস্ত যে, কাছা খুলে গেছে কিনা তা দেখার সময় পাচ্ছেন না। তার মতো এত বড় নেতার এহেন কিংকতর্ব্যবিমূঢ় ভাবসাব ভালো দেখায় না। তিনি যদি এর বিরুদ্ধে কিছু না করেন, তবে তার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা পুরোটাই অপচেষ্টা হয়ে যাবে।

তিনিও তার সঙ্গী-সাথীরা তো জানেনই যে, কাওয়াডর্ পলিটিশিয়ানদের বাঙালিরা পছন্দ করে না। তিনি রাজনৈতিক বিনিয়োগ করেছেন, তার পুরোটাই মাঠে মারা যাবে। লাভ তো দূরের কথা, আসলও উঠবে না। মইনুল হোসেনের রাজনৈতিক এতই কম যে, কিছু না পেলেও ক্ষতি হবে না। তিনি আশায় আশায় থাকেন। পেলেও হয়, না পেলেও হয়। কিন্তু ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক। তিনি কেন নিজেকে বিতকির্ত করছেন। বিএনপির সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তার কেবলই বদনামই হবে, সুনাম হবে না। যেমন জামায়তের সঙ্গে ‘সখ্য, করে বিএনপির বদনামই হয়েছে, সুনাম হয়নি। এ বিষয়টি বিএনপির কোর সদস্যরাও ভালোভাবে বোঝেন। কিন্তু তারপরও জামায়াত ছাড়েন না। সম্ভবত পাকিস্তানি পরামশের্র কারণে। তারা একটা অদ্ভুত ভুল ধারণার মধ্যে নিমজ্জিত আছেন। ভুলটা হলো, যারা পাকিস্তানের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করবে তারাই দুগর্ন্ধযুক্ত হবে এবং বাংলাদেশের সবার কাছেই ঘৃণিত হবে। এবং ওই কারণেই অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাবে। জামায়াত যেভাবে সংলাপে সাধারণ মানুষের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গে­ে ঠিক তেমনি ভাবে। বিএনপি জামায়াত না ছাড়লে ভবিষ্যতে কখনই ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আওয়ামী লীগ যত ভুলই করুক না কেন, জামায়াতের প্রতি ঘৃণাই মানুষকে বিএনপির প্রতি ঘৃণার উৎস হিসেবে কাজ করবে এবং নিবার্চনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।

ঐক্যফ্রন্ট গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, দাবি করে রাষ্ট্রীয় বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য করে কি করে? অন্যেরা না জানলেও ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরীরা তো জানেনই যে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত কী পরিমাণ নোংরামী করেছে। যে বিএনপি জামায়াতের কোলে চড়ে ক্ষমতায় যেতে চায় তার সঙ্গে ডা. জাফরউল্লাহ কীভাবে পাশাপাশি বসে থাকে? ঘৃণা বলে কি কিছুই নেই।

মাহমুদুর রহমান মান্নাও তো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তিনিইবা কীভাবে জামায়াতঘেঁষা লোকের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করেন? বি চৌধুরীরও দোষগুণের সীমা নেই। তারপরও তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় এ জন্য যে, তিনি জামায়াতের সঙ্গে ঘৃণ্য সহচাযর্ করতে নারাজি জানিয়েছেন। যেমনটা জানিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।

বিদেশি এজেন্ট না হয়ে কি রাজনীতি করা যায় না? জামায়াত তো ইচ্ছা করলেই পাকিস্তান কানেকশন পরিত্যাগ করতে পারে। করে না কেন? বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পকর্ ত্যাগ করতেই হবে। বিদেশের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কারণেই তার বাকস্বাধীনতাকে কেউই স্বীকার করে না। কথাই যদি না বলতে পারে তাহলে রাজনীতি করবে কি করে? বিএনপির সঙ্গে চলেফিরে তারা তাদের শক্তি বাড়াতে পারবে, কিন্তু নিজেরা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করার দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন হাজারটা ইসলামিক দল আছে বাংলাদেশে। আরও বাড়বে। ধমার্শ্রয়ী রাজনীতি বেশিদিন চলে না। মানুষকে বাস্তবের কাঠিন্য অনুভব করতে হয়। একা বঁাচা যায় না। সবার সঙ্গেই মিলেমিশে বঁাচতে হয়। জামায়াতের উচিত হবে ধমর্ নিয়ে বাণিজ্য ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে আসা। নইলে তাদের জানাজা তাদেরই পড়তে হবে।

সংলাপ বাকস্বাধীনতার একটি প্রকাশ। যারা সংলাপ চায়, তারা মূলত তাদের কথা শোনাতে চায়। তাদের ধারণা হয়েছে, সরকার তাদের কথা শুনতে পায় না। কথা শোনানোর জন্যই তাদের সংলাপের প্রয়োজন। কিন্তু কে কথা বলবে, কী কথা বলবে, সেটি বিচারে নিতেই হবে।

ব্যাঙের ছাতা মাকার্ পাটির্র সভাপতি যদি জাতীয় স্তরের পাটির্র সমান মযার্দা চায় তবে সংলাপে বছর কে বছর পার হয়ে যাবে। কোনো ব্যক্তির মযার্দা কি স্তরের তা ঠিক করে দেবে জনসাধারণ। তার সামাজিক ও রাজনৈতিক মযার্দার মান কি নিধাির্রত হয়েছে। যারা প্রথম শ্রেণির রাজনীতিক আর যারা তৃতীয় শ্রেণির রাজনীতিক, তারা কি পরস্পরের সঙ্গে সংলাপে বসার যোগ্য। গণতন্ত্রে চ‚ড়ান্ত নাম্বার দেয় জনসাধারণ। তারা কাকে কি মযার্দা দিয়েছে? যারা নিবার্চন করে জামানত হারিয়েছে, তাদের থাডর্ক্লাস পলিটিশিয়ান বলতেই হবে। এদের সঙ্গে ফাস্টর্ক্লাসের রাজনীতিক সংলাপে বসলে জনগণ মাইন্ড করে। জনগণের মনে দুঃখ দেয়া উচিত নয়।

বাকস্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশের আর একটা দিক মুক্ত গবেষণা। স্বাধীনভাবে যারা গবেষণা করে বইপুস্তক লিখছেন, তারাও বাকস্বাধীনতাই ভোগ করছেন। তবে কোনো কোনো বিষয়ে বেশি বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে যদি দেশ ও জাতির ক্ষতি হয় তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে সে বিষয়ে নজর দেয়া। জাতির পিতাকে নিয়ে বেশকিছু গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষক স্বাধীনতা ভোগ করেই লিখেছেন। কিন্তু কোনো কোনো বিষয়ে স্পশর্কাতরতাকে অবজ্ঞা করেছেন। জীবনালেখ্য রচনার ক্ষেত্রে বা চরিত্র পুনমূর্ল্যায়নের ক্ষেত্রে টিকা টিপ্পুনি দিতে হয়, বা শানে নজুল বিস্তারিতভাবে লিখতে হয়। অনেক গবেষক এসব ব্যাপারে সচেতন নয়। যেমন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সংখ্যালঘু সংস্কৃতির কেউ কেউ কি ব্যবহার করেছেন, সে ব্যাপারে উদ্ধৃতি দেয়া। এমনভাবে উদ্ধৃতি দেয়া হয়, যাতে মনে হয় একসময় শেখ মুজিব হিন্দু সম্প্রদায়কে ঘৃণা করতেন। বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। যারা ছোটবেলা থেকে তাকে দেখেছেন, তারাই সাক্ষী দিয়েছেন যে, শেখ মুজিবের বন্ধু ছিল সবাই। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কোনো ভেদাভেদ ছিল না। অনেকটা কবি কাজী নজরুলের মতোই। মেশামেশির ব্যাপারে কোনো স্পশর্কাতরতা তারা কৈশোরে কিংবা যৌবনে দেখেননি। ডা. মারুফ নিজে বলেছেন, আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক পাথর্ক্য থাকা সত্তে¡ও ‘মুজিব’-এর সঙ্গে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল না। আমরা যেমন সবার সঙ্গে মিশতাম, ধমর্ কোনো বাধা ছিল না, ছিল না সামাজিক মযার্দাও। তেমনিই ছিল শেখ মুজিব। উদারপ্রাণ মানুষ। ছোট, বড়, হিন্দু, মুসলমান কোনো পাথর্ক্যই ছিল না তার মনে। ডা. মারুফ ছিলেন প্রথমদিকের কমিউনিস্ট এবং শ্রমিক বেল্টে কাজ করতেন। তার সাক্ষ্য মিথ্যা হতে পারে না।

হিন্দু সম্প্রদায় সম্পকের্ যে মন্তব্যটি উদ্ধৃত হয়েছে, সেটি ওই সময়ে গেঁাড়া ও অতি ধমর্ভীরু হিন্দুদের মনমানসিকতাকে বোঝানোর জন্য। আমি নিজেও ছোটবেলায় দেখেছি, অনেক সম্ভ্রান্ত মুসলমান তাদের বাড়ির ভেতরে হিন্দুদের ঢুকতে দিত না। এটিও গেঁাড়া ও অতি ধমর্ভীরু মুসলিম মানসিকতা। বঙ্গবন্ধুর জবানীতে বহুবার হিন্দুদের সঙ্গে গভীর মেলামেশার ব্যাপার আছে। দাঙ্গার সময়ে হিন্দুদের প্রাণ বঁাচানোর চেষ্টার ইতিহাস আছে।

গবেষক তার ইচ্ছামতো, প্রয়োজনমতো উদ্ধৃতি দিতেই পারেন। তবে কোনো কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা মানতেই হবে। রাষ্ট্রের উচিত হবে, এ ব্যাপারে দিকনিদের্শনা তৈরি করে সবাইকে জানিয়ে দেয়া। অন্তত বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে এরকম দিকনিদের্শনা থাকতেই হবে। নইলে নবীন পাঠকরা বিভ্রান্ত হবেই। ইচ্ছামতো উদ্ধৃতির কারণে কয়েকজন পাঠক বঙ্গবন্ধুকে ভুল বুঝে মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। আমি পাঠকদের সম্মান করি। আসলে পাঠকদের দোষ নয়, লেখকদেরই দোষ। স্টালিন এসব ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। নবীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গঠনপ্রক্রিয়ায় লেখালেখির ভালো-মন্দ দিক নিয়ে তিনি খুবই সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে যেহেতু বাকস্বাধীনতা আছে, সেহেতু কাউকেই কোথাও বাধা দেয়া যাবে না। কেবল বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ব্যাপারে একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।

জাতি গঠনপ্রক্রিয়ায় অনেক কিছুই সামাল দেয়ার জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। যেমন বঙ্গবন্ধু বাকশাল তৈরি করে অনেকগুলো পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার প্রয়োজনও ছিল। তারা নতুন বাংলাদেশের স্বাথের্র বিরুদ্ধে লেখালেখি করছিলেন। তাদের অনেকেই বিদেশের টাকা খেয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে, জাতীয় স্বাথের্র বিরুদ্ধে, জাতীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে লিখছিলেন। এমনকি জনসাধারণকে বিদ্রোহ করার জন্য উস্কানিও দিচ্ছিলেন। জাতি গঠনপ্রক্রিয়ায় এমন ধারা বাকস্বাধীনতা খুবই ক্ষতিকর। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সঠিক কাজটিই করেছিলেন। তার ধারণা ছিল অবস্থা পরিবতির্ত হলে আবার অসংখ্য পত্রপত্রিকার প্রকাশের অনুমোদন দেবেন। কিন্তু ততদিন ঘাতকরা অপেক্ষা করেনি। যে আন্তজাির্তক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধুকে প্রাণ দিতে হয়েছিল সেই ষড়যন্ত্রকারীরা ভালোভাবেই বুঝেছিল যে, বাকশাল একবার শিকড় গেড়ে বসলে দেশটি পুরোপুরি সমাজতান্ত্রিক দেশ হয়ে যাবে। জনগণ একবার সমাজতন্ত্রে অভ্যস্ত হলে তারা ধনতন্ত্রে ফিরে যাবে না। তাই কালক্ষেপণ না করে বাকশালকে বসতে না দিয়ে বাকশালের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে তড়িঘড়ি হত্যা করে বাংলাদেশকে একটা লুম্পেন গণতন্ত্রের দেশ বানানোর ছলে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানাতে কসরত করেছে। জিয়াউর রহমান নিহত না হলে বাংলাদেশ যে কোথায় গিয়ে দঁাড়াতো তা এখন কল্পনা করেও বলা যাবে না। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়েই বহুদলীয় রাজনীতির চচার্ করার নামে জাতবৈরীদের রাজনীতিতে পুনবার্সন করেছিলেন। বাকস্বাধীনতার নামে অসংখ্য পত্রপত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন। ওইসব পত্রপত্রিকায় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের সমালোচনাই করা হতো। বাকশালকে ভুলভাবে একদলীয় শাসন বলে গালমন্দ করা হতো। অসংখ্য পত্রিকার অনুমোদন এবং প্রকাশের আথির্ক সহায়তার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে, মুক্তিযুদ্ধকে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হেয় প্রতিপন্ন করা। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানানোর জোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল প্রধানত জনমত তৈরির মাধ্যমে। ওইসব পত্রপত্রিকা আওয়ামী নেতাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টাও করেছিল। জিয়া বাকস্বাধীনতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। এখন আবার ওইরকম একটা আবহ তৈরি হয়েছে। বাকস্বাধীনতার নামে আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধ এবং শেখ হাসিনাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বাকস্বাধীনতা ব্যবহার করা হচ্ছে।

জাতি গঠনপ্রক্রিয়া একটি বড়মাপের যুদ্ধ সদৃশ। বলা হয়, বিল্ডিং এ নেশন ইজ এ ওয়ার। বাংলাদেশ সে হিসেবে এখন রণক্ষেত্র। যুদ্ধের সময় যেমন নাশকদের ব্যাপারে সাবধান হতে হয় এখনো তেমন সাবধান হতে হবে। বাজে কথা বলার সুযোগ একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।

রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতিতে অসংখ্যবার বাজে কথা বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো গাইডলাইন নেই। রাজনৈতিক সদাচার তৈরি করার জন্য রাজনীতিকদের গাইড বই দিতে হবে। নিবার্চন কমিশন বৈধ রাজনীতিকদের কি কথা বলা যাবে তা লিখিতভাবে জানিয়ে দেবেন। রাজনৈতিক বক্তৃতায় নোংরামী যেমন থাকবে না, তেমনি কাদা ছোড়াছুড়িও থাকবে না। আর যারা নিবার্চন করবে না তাদের ব্যাপারে তো নিবার্চন কমিশনের কিছুই বলার নেই। তাদের জন্য পেনালকোড ব্যবহার করতে হবে। অসংখ্যবার আপত্তিকর কথা বলার পরও যখন কোনোই শাস্তি পায় না, তখন সাধারণ মানুষ ওই কথাগুলোই সত্যি বলে ধরে নেয়। জনমত উন্নয়নের সহায়ক শক্তি। জনমত বিগড়ে গেলে উন্নয়নও বেকা হয়ে যায়। বাংলাদেশে এখন উন্নয়নের রাজনীতি চলছে। বাকোয়াজ রাজনীতি পালিয়ে গেছে। পালানোরা আর যাতে ফিরে আসতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাকস্বাধীনতার নামে বাকোয়াজগিরি বন্ধ করতে হবে। সাধারণ মানুষ উন্নয়নের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এ বিশ্বাস যেন অক্ষুণœ থাকে।

ড. ইশা মোহাম্মদ: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21169 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1