শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

শিক্ষাথীের্দর স্বাধীনতা প্রয়োজন

শামীম শিকদার কাপাসিয়া, গাজীপুর
  ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সমাজের কথা ভাবে না এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে। তবে কেউ ভাবে একান্ত ভালো মানসিকতা নিয়ে, আবার কেউ ভাবে খুবই মন্দ মানসিকতা নিয়ে। যারা নিতান্তই ভালো মানসিকতা নিয়ে সমাজের কথা ভেবে সমাজকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে তারা অনেক সময় মন্দ মানসিকতার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে না। একদল মানুষ আছে, যারা সাধুতার মুখোশ পড়ে অনৈতিক কমর্কাÐের সঙ্গে লিপ্ত থেকে নিজের একটি সুন্দর অবস্থান তৈরি করতে চায়। তাদের নিজেদের জন্য সুন্দর একটি অবস্থান তৈরি করতে গিয়ে পারিপাশ্বির্ক অবস্থার অনেক মন্দ প্রভাব ফেলে। যা তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনুধাবন করতে পারলেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয় না। তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে গড়ে তোলা, পারিপাশ্বির্ক অবস্থাকে নয়। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে চুরি পেশার সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত। চোর তাকেই বলা যেতে পারে, যে সরাসরি হাতেনাতে ধরা পড়ে। এমনভাবেই সমাজের সবাই ভালো মানুষ কিন্তু যখন সে চুরিতে ধরা পড়ে তখন সে চোরে পরিণত হয়। যারা নিজের স্বাথের্র বাহিরে কাজ করে তারাই হচ্ছে প্রকৃত সমাজসেবক বা মানবসেবক। স্বাথের্র বাহিরে বলতে, একবারে স্বাথর্ থাকবে না এমনটা নয়। কারণ একেবারে স্বাথর্ না থাকলে সেখানে কোনো প্রকার প্রেষণা থাকে না। ফলে ধীরে ধীরে নিজের মধ্য থেকে কাজের আগ্রহ কমে যায়।

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর, আবার তারাই মানুষ ধ্বংসের কারিগর হিসেবে পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাথীের্দর অবশ্যই পড়ালেখাতে স্বাধীনতা প্রয়োজন। তারা যেখানে খুশি সেখানে পড়বে ও কোচিং করবে এটাই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু কোনো স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক যদি তার কাছে পড়ার জন্য বাধ্য করে তবে সেখানে আর স্বাধীনতা রইল কোথায়। প্রাইভেট ও কোচিং না করে উপায় থাকলেও ক্লাসে মারধর করা, মন্দ ব্যবহার করা, পরীক্ষার খাতায় নম্বর কম দেয়া ইত্যাদি থেকে বঁাচার কোনো উপায় নেই। ফলে বাধ্য হয়ে শ্রেণি শিক্ষকের ক্লাসে প্রাইভেট বা কোচিং করতে হয়। শ্রেণি শিক্ষকের কাছে পড়ে সাময়িকভাবে ভালো ফলাফল করলেও পরবতীের্ত বৃহৎ অংশই মন্দ ফলাফল করে। এখানে যে জিনিসটি সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে স্কুলে বা কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোতে শ্রেণি শিক্ষক সাজেশনের নাম করে সব প্রশ্ন ফঁাস করে দেয়। কিন্তু পরে ফাইনালে তা হয় না বলে সিংহ ভাগ শিক্ষাথীর্র চোখের জল ঝরাতে হয়। শিক্ষা যেখানে ব্যবসায় পরিণত হয় সেখানে প্রকৃত শিক্ষা কোথা থেকে আসবে? নিজের স্বাথের্র জন্য যেখানে স্বপ্ন ধ্বংস করা হয় সেখানে স্বপ্ন কীভাবে দেখবে? শুধু কোচিং বাণিজ্য নয়, বই বাণিজ্যও চলছে হরদম। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক যে বইয়ের নাম বলে দেবে সে বই কিনতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক বাতার্র পেছনে যদি অস্বাভাবিক কিছু কারণ জড়িত থাকে তবে সেখানে প্রশ্ন তোলারই কথা। যে বইয়ের লেখক ভালো না এবং প্রকাশনী শিক্ষাথীের্দর জন্য কাযর্কর নয়, সে বই কিনতে শিক্ষক বাধ্য করবে কেন? তার পেছনে সবচাইতে বড় কারণ এখানে অবশ্যই তার নিজের বেশ কিছু স্বাথর্ রয়েছে। শিক্ষা মানুষকে অজানাকে জানাতে সাহায্য করে। মানুষের নৈতিকতার উৎস নিধার্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। একজন শিক্ষিত ব্যক্তি খুব সহজেই নিজের কাজে আসবে এমন দিকটি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে পারে। এমন নৈতিকতার গান গেয়ে যদি সনদপত্র অজের্নর জন্য দৌড়ানো হয় তবে শিক্ষার প্রকৃত অথর্ থাকে কতটুকু? খুব সুন্দরভাবে সমাজে বা প্রতিষ্ঠানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে শাসনের নামে শোষণ করার নাম যদি প্রকৃত শিক্ষা হয় তবে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ শিক্ষিত। কারণ এমন কাজ হয়তো পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই চেষ্টা করলে অল্প হলেও পারবে। যেখানে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বিবেকের মাঝে তফাৎ নেই সেখানে শিক্ষার প্রয়োজন কতটুকো আছে? সমাজে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই ব্যক্তিত্ব বোধের প্রয়োজন আছে, তবে তা নিজের প্রভাব বিস্তার করে অন্যকে না ঠকিয়েও করা সম্ভব। যাদের মুখে বড় বড় নৈতিকতা সমৃদ্ধ বাক্য কোনোা যায়, তারা নৈতিকতাবিরোধে কমর্কাÐে আরও তীব্রভাবে জড়িত। মূল সমস্যাটা হচ্ছে যাদের ক্ষমতা আছে তারা সমাজের উঁচু ব্যক্তিবগর্ ও মিডিয়া ডেকে নিজের অস্তিত্ব বোঝাতে সক্ষম হয়। তাদের বিপরীতে যারা সাদা-সিদে তাদের ডাকে প্রভাবশালী ও ব্যক্তিত্ববান লোক সাড়া দেয় না, আর এখানে মিডিয়ার কথা না বলাই ভালো।

একজন ছাত্র যখন আন্দোলন করে তখন তা যে দৃষ্টিতেই দেখা হোক না কেন, রাজনৈতিক আন্দোলন ঠিকই প্রখর দৃষ্টিতে দেখা হয়। সমাজে কী শিক্ষাথীের্দর ন্যূনতম ভূমিকাটুকু নেই? যে প্রতিষ্ঠানের কতৃর্পক্ষ দুনীির্তর সঙ্গে সম্পৃক্ত সে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীর্রা যাবে কোথায়? এমন এক সময় ছিল যখন জেলায় দু একজন জিপিএ ফাইভ পেত। কিন্তু এখন তার চিত্র সম্পূণর্ বিপরীত, এক গ্রামেই এমন মেধাবী শিক্ষাথীের্দর দেখা খুব সহজেই মিলে। কিন্তু এখানে একটি সমস্যা হচ্ছে তারা জিপিএ অথর্ কী তাই জানে না।

আমাদের দেশের সরকার মনে করছে শিক্ষার হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। খুব সম্ভবত সরকারের এই ধারণায় কিছুটা হলেও ভুল রয়েছে। কারণ শিক্ষার হার ঠিকই বাড়ছে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত বিবেকের সংখ্যা কমছে। শিক্ষিত হয়ে যদি একজন রিকশা চালকের গায়ে আঘাত করা যায় তবে শিক্ষিত ব্যক্তি অপেক্ষা রিকশাচালক মনে হয় বেশি শিক্ষিত। কারণ শিক্ষা আমাদের মারামারি শিখার জন্য নয়, শিক্ষা হচ্ছে সাম্যের শিক্ষা। এমন বিবেকহীন শিক্ষা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রতিটি শিক্ষাথীের্দর পিতা-মাতাকে সচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো উচিত। সনদপত্র অজর্নকে গুরুত্ব না দিয়ে নৈতিকতা ও মানবিকতা অজর্নকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বড় বড় ভাসিির্টর শিক্ষাথীের্দর মূল্যায় না করে প্রকৃত শিক্ষার আলো যার মধ্যে রয়েছে তাতে সবর্ত্র মূল্যায়ন করা উচিত। আর এমন ভাবে যদি শিক্ষা ও সনদপত্র অজর্নকে আমরা আলাদা না করতে পারি তবে আমাদের পাশাপাশি ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের দেশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21224 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1