শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

রাজধানীর শব্দদূষণ জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে

নতুনধারা
  ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

দাবিদার। ইউরোপ, আমেরিকা তো বটেই এশিয়ার সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের কোনো নগরীতে অকারণে হনর্ বাজানো কল্পনারও বাইরে। রাজধানীর যান্ত্রিক যানবাহনচালকরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হনর্ বাজানোকে তাদের অভ্যাসের অংশে পরিণত করেছেন। ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি স্থির দঁাড়িয়ে থাকলেও তারা হনর্ বাজিয়ে যান মজ্জাগত অভ্যাসের কারণে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাতদিন নিমার্ণকাজের জন্য সৃষ্ট বাড়তি শব্দে আশপাশের মানুষের সমস্যা হলেও তা দেখার কেউ নেই। একে অনুচিত কাজ বলে কেউ ভাবেনও না। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমনÑ গায়ে হলুদ, জন্মদিন বা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মাইক ও বিশাল সাউন্ড সিস্টেমের উচ্চশব্দে মানুষের কাজে সমস্যা হলেও আয়োজকরা একে নিজেদের অধিকার বলে ভাবেন। আওয়াজ কমানোর অনুরোধ করলে উল্টো তেড়ে আসা শুধু নয়, এ নিয়ে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে কখনো কখনো।

পরিবেশবিদরা বলছেন, বতর্মানে ঢাকার পরিবেশগত অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে শব্দদূষণ এবং এর ভয়াবহতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শব্দদূষণের প্রভাবে সাময়িকভাবে বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নগরবাসী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিশু, ছাত্রছাত্রী, হাসপাতালের রোগী, ট্রাফিক পুলিশ, পথচারী ও গাড়ির চালকরা। শব্দদূষণের কারণে কানের অসুস্থতায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা রাজধানীতে অসংখ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দনে পরিবতর্ন, হৃৎপিÐ ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, দিক ভুলে যাওয়া, দেহের নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং মানসিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ তৈরি হতে পারে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের নিধাির্রত মানমাত্রা দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল। কিন্তু রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোয় নিধাির্রত মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ পাওয়া গেছে এ-সংক্রান্ত জরিপে। এর মধ্যে শাহজাহানপুরে সবোর্চ্চ শব্দমাত্রা রেকডর্ করা হয়েছে যার পরিমাণ সবোর্চ্চ ১২৮.৪ এবং সবির্নম্ন ৫০.৭ ডেসিবল। শব্দদূষণ রাজধানীবাসীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে তা এককথায় ভয়াবহ।

নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে। শব্দদূষণ বন্ধে দূষণকারিদের বিরুদ্ধে নিতে হবে আইনগত পদক্ষেপ। জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

শব্দদূষণ রাজধানীর এক সাক্ষাৎ বিড়ম্বনার নাম। একশ্রেণির মানুষের দায়িত্বহীনতায় শব্দদূষণের উৎপাত প্রতিদিনই বাড়ছে। এ দূষণ থেকে বাদ যাচ্ছে না অবোধ শিশুরাও। রোগী এবং বৃদ্ধরাও এ দূষণের নিদর্য় শিকার। শব্দদূষণ মানুষের মনোজগতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলছে। ঢাকা মহানগরে শব্দদূষণের মাত্রা পৃথিবীর যে কোনো শহরের তুলনায় বেশি এবং ইতোমধ্যে বিপজ্জনক পযাের্য় চলে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশ দূষণের মতো শব্দদূষণও মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে শ্রবণ যন্ত্র অকেজো হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। রাজধানীর মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ যে কোনো শিশুর বেড়ে ওঠার আগেই তাকে বধিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানসিকভাবে বিপযর্স্ত শিশুরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে উঠছে, দেখা দিচ্ছে মনবৈকল্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শব্দের সহনীয় মাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডেসিবেল। ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি সাময়িক নষ্ট করে দিতে পারে। আর ১০০ ডেসিবেল শব্দে মানুষ চিরতরে হারিয়ে ফেলতে পারে তার শ্রবণশক্তি। এক গবেষণায় জানা যায়, সাম্প্রতিককালে ধানমÐি এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা ৭৮, শাহবাগে ৮২, গুলশানে ৯০, ফামের্গটে ১০০, গাবতলীতে ১০২ ও সায়েদাবাদে ১০৬ ডেসিবেল। ২০১৩ সালে পরিবেশ বঁাচাও আন্দোলন রাজধানীতে জরিপ চালিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের শব্দের মাত্রা নিরূপণ ও পযের্বক্ষণ করে যে তথ্য পেয়েছিল, তাতে প্রতিটি জায়গায় শব্দের মাত্রা ছিল সহনীয় মাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মেট্রোপলিটন সিটি, বিভাগীয় শহর, পৌরসভাকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র বাণিজ্যিক এবং শিল্প এ পঁাচ এলাকায় ভাগ করে পৃথকমাত্রায় শব্দ ব্যবহারের সীমা নিধার্রণ করা হয়েছে। এ আইনে দিনে ও রাতে নিধাির্রত সহনীয় মাত্রায় শব্দ হচ্ছে নীরব এলাকায় ৪৫ ও ৩৫, আবাসিক এলাকায় ৫০ ও ৪০, মিশ্র এলাকায় ৬০ ও ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ও ৬০ এবং শিল্প এলাকায় ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল। বিধিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চারদিকে ১০০ মিটার পযর্ন্ত ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। ওইসব এলাকায় গাড়ি চলাচলের সময় যে কোনো ধরনের হনর্ বাজানো নিষেধ হলেও সে নিষেধাজ্ঞা মানার যেন কেউ নেই।

বিশেষ করে মোটরসাইকেলসহ কিছু যানবাহনে বিকট শব্দের হনর্ বাজানো ফ্যাশন হয়ে দঁাড়িয়েছে। অকারণেও মাইক ব্যবহার জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। মানসিক স্বাস্থ্যের স্বাথের্ও শব্দদূষণ বন্ধ হওয়া দরকার।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21520 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1