বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি

দেশের ব্যাংকিং খাত সময়ের প্রয়োজনে বিস্তৃত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এ খাতকে অবশ্যই মানুষের আস্থা অজর্ন করে চলতে হবে। ব্যাংকগুলো যাতে আবারও কোনো সংকটে না পড়ে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। এ খাতে সৎ ও যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। বস্তুত অসৎ ব্যাংকারদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা জালিয়াতি চক্রই ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছে।
অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ
  ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

দুনীির্ত-নৈরাজ্যে-জাল-জালিয়াতির কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। দীঘির্দন ধরে ব্যাংকিং খাতে সংকট চললেও বিগত কয়েক বছরে এ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বস্তুত আমাদের ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে, তা রোধ করতে হলে এ খাতে সংস্কারের বিকল্প নেই। যথাযথ সংস্কার হলে এ খাতে বিদ্যমান সমস্যা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। বতর্মানে ব্যাংকিং খাতের যে অবস্থা তাতে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে হলে এ খাতে বড় ধরনের পরিবতর্ন আনা প্রয়োজন।

এ খাতে জালিয়াতি ও দুনীির্তর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যাংক নতুন নতুন অনিয়ম, জালিয়াতি ও দুনীির্তর জন্ম দিচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমগ্র ব্যাংকিং খাতে। এ খাতে অরাজকতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমানতকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

ব্যাংকিং খাতে চিরায়ত সমস্যা খেলাপি সংস্কৃতি আরও তীব্র হচ্ছে। গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দঁাড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৬২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। অনিয়ম-দুনীির্তর কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের আথির্ক সূচকের চরম অবনতি হয়েছে। এ জন্য ১৫ ব্যাংকে পযের্বক্ষক বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এর পরও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না।

দীঘির্দন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছে। বিনিয়োগ না থাকায় কমর্সংস্থানের সুযোগও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস গামের্ন্ট রপ্তানি এবং বৈদেশিক কমর্সংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগসহ অথৈর্নতিক মন্দার পেছনে যে সব সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি দায়ী তা নিরসনে কোনো কাযর্কর উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না।

একদিকে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে, অন্যদিকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের সুযোগ অবারিত রেখে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে নজিরবিহীন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ছোট-বড় সব ধরনের বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ কমর্সংস্থান ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের সহায়ক সেক্টর হিসেবে পরিগণিত ব্যাংকিং সেক্টরে ধস নামলে তা দেশের অথর্নীতিতে বড় ধরনের বিপযর্য় সৃষ্টি করবে। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকেই জাল-জালিয়াতি ও ঋণখেলাপের খপ্পরে পড়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। রিজাভর্ হ্যাকিংয়ের মধ্য দিয়ে একই ভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজাভর্ চুরির ঘটনার তদন্ত রিপোটর্ প্রকাশ নিয়েও অস্বচ্ছতা ও ছলচাতুরি দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টর ও আথির্ক খাতের প্রায় প্রতিটি বড় বড় কেলেঙ্কারির সঙ্গেই প্রভাবশালী রাঘব-বোয়ালদের জড়িত থাকার আলামত পাওয়া গেছে। ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ও কু-ঋণ বেড়ে যাওয়ার চিত্র থেকেই বোঝা যায় লুটপাট এখনো অব্যাহত রয়েছে। সবাের্গ্র কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভয় বা দুবর্লতা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এরপর সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের আথির্ক কমর্কাÐের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অথর্মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিরপেক্ষ ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি ও ঋণজালিয়াতির সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীদের সম্পদ জব্দ করাসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশের ব্যাংকিং খাত সময়ের প্রয়োজনে বিস্তৃত হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এ খাতকে অবশ্যই মানুষের আস্থা অজর্ন করে চলতে হবে। ব্যাংকগুলো যাতে আবারও কোনো সংকটে না পড়ে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। এ খাতে সৎ ও যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। বস্তুত অসৎ ব্যাংকারদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা জালিয়াতি চক্রই ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছে।

ব্যাংকগুলোয় বিদ্যমান অনিয়ম ও দুনীির্ত দেশের সামগ্রিক আথির্ক ব্যবস্থাপনাকে গ্রাস করে ফেলছে। আরও উদ্বেগজনক, এ দুনীির্তবাজদের উপযুক্ত শাস্তি হচ্ছে না। আজ সময় এসেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করার। এ লক্ষ্যে সরকার প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কারের মাধ্যমে একে সুশৃঙ্খল কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটর্ ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়াসর্।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21698 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1