বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বারবার বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি দেশি-বিদেশি অপশক্তি রোধ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাঙালির লড়াকু মনোভাবের কারণে তারা তা পারেনি। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কোনোদিনই বাঙালির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।
মোনায়েম সরকার
  ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

স্বাধীনতাপূবর্ বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঞ্চাশের দশক ছিল অসা¤প্রদায়িক জাতীয় চেতনা বিকাশের কাল আর ষাটের দশক ছিল গণতন্ত্র অজর্ন ও আইনের ভেতর দিয়ে জাতীয় চেতনা বহিঃপ্রকাশের প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরূপতা এবং রবীন্দ্রবিরোধিতা যত প্রবল হয়েছে, ততই বাঙালিদের মধ্যে প্রতিবাদী চেতনাও জোরদার হয়েছে। পাকিস্তানের ধমীর্য় সা¤প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জোরালোভাবেই উন্মেষ ঘটতে থাকে অসা¤প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার। স্বায়ত্তশাসনের জন্য ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা কমর্সূচি ঘোষণা করেন এবং এর সমথের্ন ৭ জুন দেশব্যাপী হরতাল ডাকেন। পরবতীর্কালে ৬ দফা ছাত্র সমাজের ১১ দফার অন্তভুর্ক্ত হয়ে ’৬৯-এর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দাবির অংশ হয়।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যতই ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সা¤প্রদায়িকতা ব্যবহার করেছে, ততই বিরোধী দলগুলো অসা¤প্রদায়িক হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার যে, আওয়ামী লীগ-আওয়ামী মুসলিম লীগ হিসেবে ১৯৪৯ সালে আবিভ‚র্ত হয়। কিন্তু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর অভিজ্ঞতার আলোকেই ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলটি ধমির্নরপেক্ষতাকে আদশর্ হিসেবে গ্রহণ করে। ধমর্-বণর্ নিবিের্শষে সব বাঙালির সমথর্ন পাওয়ার পথ সুগম হয় এই পরিবতের্নর মধ্য দিয়ে।

১৯৫২ কিংবা ১৯৪৮ থেকেই যে ভাষা আন্দোলন বিকশিত হতে শুরু করে তা মূলত বাঙালিদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের জন্যÑ সেখানে ধমের্র কোনো প্রাসঙ্গিকতাই ছিল না। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক পরিবেশটা পুরোপুরি পাল্টে যায়। পঞ্চাশ ও ষাট দশকের জনপ্রিয় আদশর্ ধমির্নরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হলো নতুন রাষ্ট্র। আর সময়ের ধারাবাহিকতায় যোগ হলো সমাজতন্ত্র। জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্তে¡র পরিবতের্ এলো জাতি ও রাষ্ট্রের ধারণা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামের নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সেই অধ্যায়ের শেষ হলো।

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে রাজনীতি খুব দুঃখজনক রূপ ধারণ করে। উগ্র বামপন্থী ¯েøাগান নিয়ে আওয়ামী লীগের ছাত্র ও শ্রমিক ফ্রন্ট ভেঙে সৃষ্টি হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। প্রচÐ সরকারবিরোধী ভ‚মিকা নিয়ে তারা ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও প্রকারান্তরে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির উত্থানের পথ প্রস্তুত করে। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে নতুন দেশের সংবিধান প্রণীত হয় এবং ১৯৭৩ সালের মাচর্ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানে ধমির্ভত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম প্রভৃতি রাজনৈতিক দলসমূহের কোনো অস্তিত্ব বা অংশগ্রহণ ছিল না। নিবার্চনে সরকার প্রায় সব কটি আসনে জয়ী হয়। আর দ্বিতীয় বৃহৎ সংসদীয়গোষ্ঠী হিসেবে আবিভ‚র্ত হয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাÑ তারা ১১টি আসনে জয়ী হয়। গোটা পাকিস্তান আমল জুড়েই কমিউনিস্ট পাটির্ নিষিদ্ধ থাকায় প্রকাশ্যে দলীয় কমর্কাÐ পরিচালনা করতে পারেনি। তবে তারা প্রথমে আওয়ামী লীগ ও পরে ন্যাপ বা ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির্র মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যায়। স্বাধীনতার পর তারা স্বনামে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে। ফলে স্বাধীনতার পর বাস্তব কারণেই কমিউনিস্ট পাটির্র তেমন গণভিত্তি ছিল না।

স্বাধীনতা পরবতীর্ সরকার যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে সামাল দিতে পেরেছেÑ এটা বলা যাবে না। একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলা-বারুদ বাইরে রয়ে গেল, অন্যদিকে জাসদ সৃষ্টি হওয়ার পর সরকার দ্রæত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে থাকে। জাসদ ছাড়াও অন্যান্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চীনপন্থী গোপন দলগুলো চাঙ্গা হয়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে বামপন্থী খোলসে বাংলাদেশের বিরোধিতা করা খুব সহজ ব্যাপার হয়ে ওঠে। গোপন সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়তে থাকে। অসংখ্য থানা ও পুলিশ ফঁাড়িতে সশস্ত্র হামলা ও লুট করা হয়। বেশ কয়েকটি পাটের গুদামে আগুন ধরানো হয়।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অথৈর্নতিক স্থবিরতার সঙ্গে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের উপযুর্পরি বন্যা এবং আমেরিকার ষড়যন্ত্রের কারণে ১৯৭৪ সালে দুভির্ক্ষ দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করে। ১৯৭৫ সালের ২৬ মাচর্ তারিখে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি জাতীয় দলের নাম ঘোষণা করেনÑ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ Ñ সংক্ষেপে ‘বাকশাল’। জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য পরিবতর্ন হয়। থানা লুটের সংখ্যাও কমে আসে। অথৈর্নতিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটতে থাকে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে যবনিকাপাত ঘটে বাকশালের এবং সঙ্গে সঙ্গে পরিসমাপ্তি ঘটে মুক্তিযুদ্ধের আদশর্ ও চেতনাধারণকারী রাজনৈতিক ধারার।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের মধ্যে অনৈক্যের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ’৭১-এর পরাজিত শক্তিরা। ’৭৫ পরবতীর্ বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা হয় তার শিরোমণি ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি পযার্য়ক্রমে সামরিক ফরমান বলে সংবিধান পরিবতর্ন করে ধমীর্য় রাজনীতি পুনঃপ্রবতর্ন করে জামায়াতসহ নিষিদ্ধ দলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতাকারী, চীনপন্থী রাজনৈতিক দল, মুসলিম লীগসহ অন্যান্য ছোট বড় সা¤প্রদায়িক দল ও ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলেন প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট, পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

এটা ঠিক যে, প্রবণতার দিক থেকে ভাবতে গেলে এই প্রবণতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি হিসেবে খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ প্রথম ভাষণ শেষ করেন ‘জয় বাংলার’ পরিবতের্ ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ দিয়ে। এ ছাড়াও ‘বাংলাদেশ বেতারে’র নাম ‘রেডিও পাকিস্তানের’ আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ রাজনৈতিক পটপরিবতের্নর মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও তার প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন স্ব-মূতিের্ত আবিভ‚র্ত হন, তখন নতুন উত্থিত রাজনৈতিক সরকারের রাজনীতি ও আদশর্ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি এতই প্রতিক্রিয়াশীল ও নেতিবাচক হয়ে ওঠে যে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভারতীয় ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের ভারতীয়দের এজেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা শুরু হয়। দেশপ্রেমের নতুন সংজ্ঞা আমদানি করা হয়। যারা যত সা¤প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তারাই তত দেশপ্রেমিক। জাতীয়তাবাদ বলতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর রইল না; জাতীয়তাবাদ হয়ে উঠল ‘বাংলাদেশি’ যা ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদে’র নামান্তর। সমন্বয় ও সমঝোতার রাজনীতির নামে জিয়াউর রহমান দেশের প্রধানমন্ত্রী বানালেন একজন কুখ্যাত ‘রাজাকার’ শাহ আজিজুর রহমানকে ও পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আজমকে দেশে নিয়ে আসা হয়। পরবতীর্কালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হন।

জিয়াউর রহমানের হত্যার ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক ধারার সমাপ্তি না হয়ে বরং সেটাকে পুঁজি করে আজও তথাকথিত ‘জাতীয়তাবাদী’ শক্তি বেঁচে আছে। আর জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর প্রায় ৮ বছর দেশ শাসন করেন আরেক সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিও ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-কেই আদশর্ করে পথ চলেছেন। তবে এটা বলতে হয় যে, জিয়ার মতো তিনি ‘রাজাকার-পুনবার্সন’ কমর্সূচি গ্রহণ না করলেও তাদের প্রতিপালনের কমর্সূচি তারও ছিল। নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে সামরিক ফরমান বলে ‘ইসলাম’কে রাষ্ট্র ধমর্ হিসেবে ঘোষণা করে অসা¤প্রদায়িক রাজনীতির মাথায় কুঠারাঘাত করেন এবং স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে রেখে যান। এরশাদ তার শাসনামলে জনভিত্তি বাড়ানোর জন্য বারবারই ধমের্ক ব্যবহার করেছেন। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বিভক্ত করার জন্য ১৯৯০ সালের নভেম্বরে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গাও বাধিয়েছেন।

১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসে উগ্র-সা¤প্রদায়িক ধমীর্য় দল জামায়াতে ইসলামীর হাত ধরে। সেটা হয়তো খানিকটা স্বাভাবিক ছিল, কেননা, আদশির্ক দিক দিয়ে তারা একে অপরের অনেক কাছাকাছি। বিএনপি-জামায়াতের যৌথ রাজনীতি দেশে সা¤প্রদায়িক ও উগ্র ধমীর্য় গোষ্ঠীগুলোকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ করে দেয়। অসা¤প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাকে দুবর্ল করার জন্য রাষ্ট্রীয় মদদে নানা উগ্রবাদীগোষ্ঠী তৎপরতা শুরু করে।

২০০১ সালে এই দুই অপশক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিবার্চনে জয়ী হয়ে প্রথমেই ঝঁাপিয়ে পড়ে সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় বসার পর পরই পরোক্ষ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাঠে নামে ‘বাংলা ভাই’। তারা রাজশাহীর বাগমারায় তাÐব সৃষ্টি করে এবং পরে তাদের ‘আন্দোলন’ দেশের তেষট্টিটি জেলায় পঁাচশত বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে। আন্তজাির্তক চাপের কারণে শেষ পযর্ন্ত চারদলীয় সরকার ‘বাংলা ভাই’ ও তার কথিত আধ্যাত্মিক গুরু শায়খ আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। এক-এগারোর পর ফখরুদ্দিনের ‘বিশেষ’ তত্ত¡াবধায়ক সরকার আসার পর বাংলা ভাই ও তার গুরুর মৃত্যুদÐ কাযর্কর হয়।

সা¤প্রদায়িকতার ভিত্তিতে গড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্য থেকেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তাই এখানে সা¤প্রদায়িকতার শেকড় গজানোর সহায়ক পরিবেশ থাকাটাই স্বাভাবিক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে অসা¤প্রদায়িক ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ অজর্ন করলাম সেই দেশে অসা¤প্রদায়িক চেতনার আরো বিকাশ ঘটবে বলে স্বাভাবিকভাবেই আশা করা হয়েছিল। কারণ সা¤প্রদায়িক দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে জন্ম নেয়া পাকিস্তানের রাষ্ট্র-দশর্নকে প্রত্যাখ্যান করেই বাংলাদেশের পক্ষে দঁাড়িয়েছিল এই ভূখÐের জনগোষ্ঠী। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিবিের্শষে বাংলাদেশের প্রায় সব নাগরিক। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধমির্নরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় অন্যতম আদশর্ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। অবশ্য এটাও ঠিক যে, ধমির্নরপেক্ষতার আদশর্ দেশের সব মানুষ রাতারাতি গ্রহণ করে ফেলার মতো বিষয় নয়। তা ছাড়া দীঘির্দন দেশের মানুষ একটি ধমীর্য় আবহে বেড়ে উঠেছে, মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি বঞ্চনাবোধ কাজ করায় তাদের মধ্যে ধমর্ নিয়ে এক ধরনের ‘মাইন্ডসেট’ তৈরি হয়েছিল। হিন্দু ও ভারত বিরোধিতা ছিল যার বহিঃপ্রকাশ। সেখানে পরিবতর্ন আনার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ-প্রচেষ্টা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণ করা দরকার ছিল সেটা সরকারি-বেসরকারি কোনো পযাের্য়ই করা হয়নি। দেশের সা¤প্রদায়িগোষ্ঠী যখন ধমির্নরপেক্ষতার নীতির বিরোধিতা করেছে তখন বরং ধমের্র পক্ষেই অবস্থান নিয়ে নানা যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। অথার্ৎ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধমর্ ও রাজনীতিকে আলাদা করার যে সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, দূরদশীর্ পরিকল্পনা এবং দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থানের অভাবে তা কাযর্কর হয়নি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজনীতির গতিমুখ পরিবতর্ন করা না হলে দেশে উগ্র ধমীর্য় সা¤প্রদায়িক রাজনীতির জয়যাত্রা শুরু হতো না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র আমূল পরিবতর্ন করে একটি তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র এগিয়ে যেতে পারত না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যদি স্বাধীনতা অজর্ন করতে ব্যথর্ হতাম তাহলে আমাদের আজও পাকিস্তানের সঙ্গেই থাকতে হতো সেই পাঞ্জাবি সামরিক শাসকদের দ্বারা শোষণ-বঞ্চনা-অত্যাচার-নিপীড়নের মধ্যে। আর পাকিস্তান রাষ্ট্রের বতর্মান অবস্থা কি তা-ও আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি। পাকিস্তান এখন একটি লÐভÐ দেশ। ধমের্র নাম করে মসজিদের ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদেরও হত্যা করছে জঙ্গিরা। মানুষের জীবন সেখানে নিরাপদ নয়। ধমির্ভত্তিক ও সা¤প্রদায়িক রাজনীতি যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য একেবারেই কল্যাণকর হতে পারে না, পাকিস্তান তার বড় উদাহরণ।

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বারবার বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি দেশি-বিদেশি অপশক্তি রোধ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাঙালির লড়াকু মনোভাবের কারণে তারা তা পারেনি। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কোনোদিনই বাঙালির অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।

সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন, এই নিবার্চনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত নেতাকমীর্ ও দেশবিরোধী শক্তি যত কথাই বলুক না কেন, যত জোট-ফ্রন্ট তৈরি করুক না কেন, এই নিবার্চনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনালালনকারী দল আওয়ামী লীগকে এককভাবে বিজয়ী করে বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারা অটুট রাখতে আজ আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<22056 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1