শিশু মৃত্যুর হার কমছে না; সন্দেহাতীতভাবেই এটি উদ্বেগজনক। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, গত বছর ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভতির্ হওয়া ১৩ হাজার ৯৫৫ জন শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৭৮ জন। এ সময় হাসপাতালটিতে ১৩৬ জনের মৃত্যু ও শুধু অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য রোগী প্রতি গড়ে ১ হাজার ৯০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক বাস্তবতা হলো, অসচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসাকেন্দ্রে না আসা ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুহার কাক্সিক্ষত পযাের্য় নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে সারা বিশ্বে পঁাচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এ ছাড়া বিশেষভাবে উল্লেখ্য, নিউমোনিয়ার কারণে শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর ১৭ হাজারের বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতির ভেতর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সোমবার বাংলাদেশেও পালিত হলো বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস-২০১৮।
আমরা বলতে চাই, যখন অসচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসাকেন্দ্রে না আসা ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না, তখন এই বিষয়গুলো আমলে নেয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন। ভুলে যাওয়া যাবে না, শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে তা সাবির্ক দিক থেকেই নেতিবাচক। প্রসঙ্গত বলতে চাই, এ বছর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবসটির প্রতিপাদ্য নিধার্রণ করা হয়েছে ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ আমাদের ভাগ্যে নয়, এটি আমাদের দায়িত্ব’। ফলে এই দায়িত্ব পালনে সবারই যথাযথ ভ‚মিকা রাখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমরা উল্লেখ করতে চাইÑ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া সহজেই নিরাময়যোগ্য। তারপরও বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের নিচে শিশুর মৃত্যু, অন্য যে কোনো রোগের চেয়ে এ রোগটি সবাির্ধক দায়ী। আমরা মনে করি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতাÑ নিউমোনিয়া সহজেই নিরাময়যোগ্য হলেও মৃত্যুর হার কমছে না। এ ক্ষেত্রে আমলে নেয়া দরকার, নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুর শতকরা ৯৮ ভাগ নাইজেরিয়া, মালউরি এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে। আর এর মূল কারণই হলো অভিভাবকদের অসচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসকের কাছে না যাওয়া। এমনকি উন্নয়নশীল দেশে শতকরা ৫৪ এবং বাংলাদেশে মাত্র ৩৭ শতাংশ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেয়া দরকার, ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ৫ বছরের কমবয়সী ৪২ ভাগ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা পেয়েছে। ২০০৪ সালে এই হার ছিল ১৯ দশমিক ৯ ভাগ। বলা দরকার, শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের কারণ সম্পকের্ চিকিৎসকের ভাষ্য হলো, শিশুর শ্বাসতন্ত্রের যে কোনো অংশে হঠাৎ সংক্রমণকে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বলে। আর এর ফলে শিশুর সদির্, কাশি ও জ্বর হয়। সঠিক যতœ না নিলে শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। নিউমোনিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে ১৫ থেকে ২৩ ভাগ পযর্ন্ত এ প্রকোপ কমে বলেও জানা যায়।
সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, শিশু মৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অসেচনতার যে বিষয়টি উঠে আসছে তা অত্যন্ত পরিতাপের। ফলে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাসহ সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাযর্কর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। যদিও অনেক প্রচারণা সত্তে¡ও বাংলাদেশে মাত্র ৪৩ শতাংশ মা শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানÑ যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাবির্ক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে শিশুর মৃত্যুহার কমাতে এবং নিউমোনিয়া প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।